পরিবার
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের_মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। তাঁর বাবা লেখালিখি করতেন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। গ্রন্থের নাম দ্বীপ নেভা যার ঘরে। তাঁর অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট।
ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল ছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তাঁর পিতা স্বীয় নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তাঁর পিতা ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। তাঁর ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথমা স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন। ২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর আন্ত্রীয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
শিক্ষা এবং কর্মজীবন
তাঁর বাবা চাকুরী সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বিধায় হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হনএবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক নির্মাণ এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন।
সাহিত্যকৃতি
ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যজীবনের শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্র হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাঙলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে বাংলাদেশের সাহিত্যামোদী মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। শঙ্খনীল কারাগার তাঁর ২য় গ্রন্থ। এ পর্যন্ত (২০০৯) তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস প্রকাশনা করেছেন। তাঁর রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো 'গল্প-সমৃদ্ধি'। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। তাঁর গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তাঁর বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তাঁর রয়েছে। যদিও সমাজসচেতনতার অভাব নেই তবু লক্ষ্যণীয় যে তাঁর রচনায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে; ফলে 'ভিলেইন' চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। অনেক রচনার মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া জোছনা ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা যা কি-না ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধ অবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখে থাকেন।
ব্যক্তিজীবন
ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডীর ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়া এ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্লাটে বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন। আর ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত বাগান বাড়ী নূহাশ পল্লীতে কাটে তার বেশীর ভাগ সময়। তিনি বিবরবাসী মানুষ; তবে মজলিশী। রসিকতা তার প্রিয়। তিনি ভণিতাবিহীন। নিরবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করা তার শখ। তবে সাহিত্য পরিমণ্ডলের সঙ্কীর্ণ রাজনীতি বা দলাদলিতে তিনি কখনো নিজেকে জড়িয়ে ফেলেননি। তিনি স্বল্পবাক, কিছুটা লাজুক প্রকৃতির মানুষ এবং বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি ছবি এঁকেও অবসর সময় কাটাতে ভালবাসেন। তিনি অত্যন্ত অভিমানী প্রকৃতির মানুষ। স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে যে বৈরীতামূলক ব্যবহার পেয়েছেন তা তাঁকে ব্যথিত করেছে। হৃদরোগের কারণে তিনি প্রায়শঃ মৃত্যুচিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে তাঁর প্রভাব তীব্র ও গভীর; এজন্যে জাতীয় বিষয়ে ও সঙ্কটে প্রায়ই তাঁর বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে থাকে।
হুমায়ূন আহমেদের গান
হুমায়ূন আহমদের গান বলতে বাঙলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ রচিত গান বোঝানো হয়ে থাকে। হুমায়ূন আহমেদ মূলতঃ গান রচয়িতা বা গীতিকার নন। কেবল নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি গান রচনা করে থাকেন। তার অনেকগুলো গান বেশ জনপ্রিয়। এসবের এলবাম প্রকাশিত হয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ
টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শক-নন্দিত নাটক রচনার পর হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। ২০০০ সালে শ্রাবণ মেঘের দিন ও দুই দুয়ারী চলচ্চিত্র দুটি প্রথম শ্রেনীর দর্শকদের কাছে দারুন গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মান করেন চন্দ্রকথা নামে একটি চলচ্চিত্র। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মান করেন শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রটি। এটি ২০০৬ সালে "সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র" বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। তাঁর সব চলচ্চিত্রে তিনি নিজে গান রচনা করেন। সর্বশেষ ২০০৮-এ আমার আছে জল চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন।
এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দুরত্ব, বেলাল আহমেদ পরিচালিত নন্দিত নরকে এবং আবু সাইদ পরিচালিত নিরন্তর। ২০০৭-এ শাহ আলম কিরণ পরিচালিত সাজঘর এবং তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র দারুচিনি দ্বীপ।
টিভি নাটক
১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। এটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে।
তার অন্যতম ধারাবাহিক নাটক -
এইসব দিন রাত্রি
বহুব্রীহি
কোথাও কেউ নেই
নক্ষত্রের রাত
অয়োময়
আজ রবিবার
এদের বেশিরভাগই ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে নির্মিত। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বহু প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করেছেন।
পুরস্কার
বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮১
শিশু একাডেমী পুরস্কার
একুশে পদক ১৯৯৪
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৩, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪)
লেখক শিবির পুরস্কার ১৯৭৩)
মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭)
বাকশাস পুরস্কার (১৯৮৮)
হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০)
জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক
গ্রন্থতালিকা
নির্বাচিত উপন্যাস
নন্দিত নরকে
শঙ্খনীল কারাগার
এইসব দিনরাত্রি
জোছনা ও জননীর গল্প
মন্দ্রসপ্তক
দূরে কোথাও
সৌরভ
নি
ফেরা
কৃষ্ণপক্ষ
সাজঘর
বাসর
গৌরীপুর জাংশান
নৃপতি (নাটক)
বহুব্রীহি
আশাবরি
দারুচিনি দ্বীপ
শুভ্র
নক্ষত্রের রাত
নিশীথিনী
আমার আছে জল
কোথাও কেউ নেই
আগুনের পরশমণি
শ্রাবণ মেঘের দিন
আকাশ ভরা মেঘ
মহাপুরুষ
শূন্য
ওমেগা পয়েন্ট
ইমা
আমি এবং আমরা
কে কথা কয়
অমানুষ (অনুবাদ)
অপেক্ষা
মেঘ বলেছে যাবো যাবো
পেন্সিলে আঁকা পরী
অয়োময়
কুটু মিয়া
দ্বিতীয় মানব
ইস্টিশন
মধ্যাহ্ন (২ খণ্ড একত্রে)
মাতাল হাওয়া - (২০১০)
শুভ্র গেছে বনে - (২০১০)
ম্যজিক মুনসি
হিমু সংক্রান্ত উপন্যাস
ময়ুরাক্ষী
দরজার ওপাশে
হিমু
হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম
এবং হিমু
পারাপার
হিমুর রুপালী রাত্রি
একজন হিমু কয়েকটি ঝিঝি পোকা
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
তোমাদের এই নগরে
সে আসে ধীরে
আঙ্গুল কাটা জগলু
হিমু মামা
হলুদ হিমু কালো র্যাব
আজ হিমুর বিয়ে
হিমু রিমান্ডে
হিমুর মধ্যদুপুর
চলে যায় বসন্তের দিন
হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য
হিমু এবং হার্ভার্ড Ph.D.বল্টুভাই
মিসির আলি সংক্রান্ত উপন্যাস
দেবী
নিশিথিনী
বৃহন্নলা
আমিই মিসির আলি
কহেন কবি কালিদাস
ভয়
মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য
বাঘবন্দী মিসির আলি
মিসির আলির চশমা - (২০০৮)
মিসির আলি!আপনি কোথায়?
যখন নামিবে আঁধার
আত্মজীবনী
বলপয়েন্ট
কাঠপেন্সিল (২০১০)
ফাউন্টেইন পেন
রংপেনসিল(২০১১)
নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ (২০১২)
বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে.....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




