পহেলা বৈশাখ
১৫৭৬ খৃস্টাব্দে বাংলাদেশ যখন মোগল স¤্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয় তখন সামাজিক ক্ষেত্রে ও ফসলের মৌসুমের প্রতি লক্ষ্য রেখে জমির খাজনা বা কর আদায়ের সুবিধার্থে চন্দ্রসন (হিজরী) এর পরিবর্তে ঋতুভিত্তিক সৌর সনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়। ফলে স¤্রাট আকবরের নির্দেশে তার আমিল ফতেহ উল্লাহ মিয়াজী হিজরী ৯৬৩ সনে তৎকালীন জ্যোতি বিদ্যার আলোকে সৌর মাস ভিত্তিক সৌর সন প্রচলনের প্রয়াসে ফসলী সন হিসাবে বাংলা সন উদ্ভাবন করেন।
বাঙ্গালীরা পূর্ব থেকে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করে আসছে। অথচ অতীতের নববর্ষ উদযাপন ও আজকের নববর্ষ উদযাপনের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। সেকালে বাংলা নববর্ষ এখনকার মত সর্বদা ফহেলা বৈশাখেই পালন করা হতো না; রবং পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বৈশাখের যে কোনো দিন সুবিধামতো অনির্দিষ্ট সময়ে পালন করা হতো।
বৃটিশ শাসনামলে ইংরেজদের নববর্ষ উদযাপনের যে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ছিলো তার বিরুদ্ধাচরণেও বাংলা নববর্ষ পালন বিরাট ভুমিকা পালন করতো। এ উৎসবের আর্থ-সামাজিক কারণ ও ছিলো জমিদার, মহাজন ও বণিক-ব্যবসায়ীদের পূণ্যাহ-হালখাতা আর মেলার বেচা-কেনা বিশেষভাবে বিবেচ্য ছিলো। এ বাংলা নববর্ষে বৃটিশের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে সংঘবদ্ধ করে বীরত্ব ও শক্তি সাহসের অনুশীলন করা হতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
কিন্তু এখন অবস্থা সম্পুর্ণ বিপরীত। এখন পহেলা বৈশাখ ও নববর্ষ উদযাপিত হয় সম্পূর্ণ বিধর্মী ও হিন্দুয়ানী তরীকায়। এব্যাপারে মুসলমান তরুণ-তরুণীদের উদ্বুদ্ধ করছে এদেশীয় নামধারী বুদ্ধিজীবি। তারাই এ দেশের তরুণেিদর শাখা-সিঁদুর পরতে ও উলুধ্বনি দিতে শিখিয়েছে। এই জ্ঞানপাপীরাই এ দেশের তরুণ-তরুণীদের বুঝিয়েছে যে, এগুলোই হচ্ছে বাঙালীর বাঙালিত্ব। এগুলো না করলে বাঙালী হওয়া যায় না। এ ছাড়াও সুর্যোদয়ের পর থেকেই শুরু হয় বর্বর যুগের ন্যায় বিভিন্ন বয়সী ছেলেড়-মেয়েদের অবাধ চলাফেরা। পুতুল নাচা, মুর্তি হাতে পায়দল মিছিল, বেলুন উড়ানো, অশ্লিল নিত্য, অর্ধউলঙ্গ ব¯্র পরিধান করে রাস্তা পার্ক ইত্যাদিতে পদচারণা, জুয়ার আসর, নেশার আসরসহ একই প্লেটে তরুণ-তরুণীর পান্তা-ইলিশ ভোজ। এমনকি বেলা বাড়তেই শুরু হয় বিভিন্ন জমকালো আয়োজন। যাতে বিশেষভাবে স্থান পায় ডিজে পার্টির মত নেশাভিত্তিক নাচ-গানের আসরসমূহ। নাইট ক্লাব, ডলোডিস ক্লাবে রীতিমতো ভিড় জমায় তরুণ-তরুণীদের বিশাল একটি দল।
এটাই কি বাঙালীয়ানা ?! আফসোস শুরু হলো কেনো, আর আজ তা পালনের রুপ কী ? পান্তা-ইলিশের সাথে পহেলা বৈশাখের কি সম্পর্ক ? বাস্তবে এটা হচ্ছে অপসংস্কৃতি, যা পশ্চিমারা আমাদের ছেলে-মেয়েদের পথে নামানোর জন্য আয়োজন করেছে। এর মূলে রয়েছে ইসলাম বিদ্বেষ বা মুসলিম সভ্যতার অপ্রনোদন। আমরা মুসলমান, আমাদের দেশের ৯০% লোক মুসলিম, আমাদের প্রধান মন্ত্রীসহ মন্ত্রী সভার ৯৮% মুসলিম। প্রথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াতে পারে। অথচ আজ পশ্চিমা অপশক্তি এদেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতি হনন করার অপচেষ্টায় মেতেছে। যার প্রমাণ হচ্ছে, বিভিন্ন পরিসরে দিবস পালনের নামে বিজাতীয় সভ্যতা আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। সরলমনা মুসলমানও অতি সহজে তাতে গা বাসিয়ে দিয়ে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতিগুলো নিজ ঘরে বাস্তবায়ন করছে। বিনোদনের নামে এসব আয়োজন ও উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
সর্বোপরি স্মরণ রাখতে হবে আমরা মুসলমান । মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য ও নির্দিষ্ট দিনে উৎসব পালনের সুযোগ দিয়েছেন। তা-হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। নির্দিষ্ট সময় ব্যতিত উৎসব পালন করা সৃষ্টি কর্তার হুকুমের সাথে ধৃষ্টতার শামিল। কেননা, অন্যদিন উৎসব পালন করলে নির্দিষ্ট দিনের মর্যাদা হ্রাস পাবে। এছাড়াও বর্তমান উৎসব উদযাপনে যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশাসহ নানাবিধ অবৈধ ও গর্হিত কাজের উপকরণ রয়েছে তা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখে পুতুল ও মুর্তি নিয়ে মিছিল মূলত: হিন্দুদের কালচার। তারা আস্তে আস্তে মুসলিম সমাজে তার অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য সংস্কৃতির আওয়াজ তুলে তা বাঙালীয়ার সাথে জড়িত একটি বিষয় বলে বাঙালী মুসলিমদের মাঝেও তা ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে, হিন্দুরা তাদের সভ্যতা আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করাতে উঠে পড়ে লেগেছে । পহেলা বৈশাখে তাদের রীতি নীতি মুসলিম বাঙালীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবে তারা মুসলমানদে বিরোধীতা করে যাচ্ছে। ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী গরু সম্পুর্ণ হালাল একটি প্রাণী। এ প্রাণীকে তারা তাদের ধর্মীয় কালচার পালনে মুসলিমদের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। হায়রে মুসলিম ! এগুলো জেনেও আজ মুসলমান তাদের দেখা-দেখি মুর্তি ও পুতুল হাতে উৎসব উদযাপনে মতোয়ারা।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের রীতি নীতি অবলম্বনে তাদের দল ভারী করবে সে উক্ত দলেরই একজন, এবং যে কোনো বাতিল সম্প্রদায়ের কর্মে খুশি হবে সে তাদের কর্মফলেরও অংশীদার হবে।” (আল-হাদিস) আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও এগুলো থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥