Age of Innocence
স্করসেসির ভুলে যাওয়া মাস্টারপিস ?
এডিথ ওয়ারটনের ১৯২০ সালের উপন্যাস অনুসারে ১৯৯৩ সালে নির্মিত হয় সিনেমাটি । গল্পের মূল নায়ক নিউল্যান্ড আর্চার - ১৮৭০ সালের দিকে নিউ ইয়র্কের একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী । তার বাকদত্তা মে ওয়েল্যান্ড - সামাজিক প্রথায় বেড়ে ওঠা আদর্শ প্রেমিকা , স্ত্রী আর মা । অন্যদিকে মের বোন(cousin) কাউন্টেস অলেনেস্কা এক লম্পট পলিশ কাউন্টের সাথে বিয়ে ইস্তফা দিয়ে ইউরোপ ফেরত স্বর্ণকেশী আধুনিক আমেরিকান । নিউল্যান্ড নিজেও সামাজিক প্রথাতেই বিশ্বাসী - তাই মের সাথে তার প্রনয় যতটা না উষ্ণ ভালোবাসার তার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধাবোধের - সামাজিকতার । ঠিক এই ফোকর দিয়েই গল্পে প্রবেশ কাউন্টেস অলেনেস্কার -নিউ ইয়র্কে প্রবেশ মাত্রই যে অনুভব করে তাকে ঘিরে চাপা বিতর্ক । অলেনেস্কার অভিপ্রায় সরল - পলিশ কাউন্টের সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা । কিন্তু তখনও আমেরিকার অভিজাত মহলে বিচ্ছেদ স্বতঃসিরধ নয় - বিয়ে এক জটিল সামাজিক নীতি যা কেবলই নির্ভর করে স্বার্থের উপর । তাই বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে নিউ ইয়র্কের সকল মহল চলে যায় অলেনেস্কার বিপরীতে - কেবলমাত্র আর্চার ছাড়া । অলেনেস্কার মাধ্যমেই আর্চার আবিষ্কার করে সামাজিকতার মাধ্যমে কত নির্মমভাবে সমাজ নিপীড়ন চালায় স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বের - এমন সামাজিক প্রতিকুলতাতেই আর্চার উপলব্ধি করে অলেনেস্কার একাকীত্ব - উপলব্ধি করে হাজারো সামাজিক প্রথার আড়ালে দুজনেই প্রবলভাবে নিঃসঙ্গ - পুরো নিউ ইয়র্কে দুজনের বন্ধু কেবল ওরা দুজনেই । কিন্তু আর্চার ইতোমধ্যেই মের সাথে বাগদত্তা আর মে সর্বতোভাবে পবিত্রতার প্রতীক - তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা মানে আর্চারের নিজের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা । এই দুরূহ সমীকরণেই চলতে থাকে এডিথ ওয়ারটনের গল্প ।
Taxi Driver আর Raging Bull মত সিনেমা পরিচালনার পরও স্করসেসির কাছে Age of Innocence ই সবচেয়ে হিংস্র , রক্তাক্ত - কেননা এখানে হত্যা হয় দুজন মানুষের কাছে আসার স্বাধীনতা । সামাজিক নীতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুরুহ চক্রান্ত । তাই শেষ
অব্দি নিল্যান্ড আর্চার ভালোবাসে একজনকে আর বিয়ে করে আরেকজনকে । একটা স্থির ক্যামেরা একটা পর্যবেক্ষণ - আর অস্থির ক্যামেরা নিজেই পর্যবেক্ষক - নিজেই গল্পের এক চরিত্র ।
সিনেমাতে motivated আর unmotivated ক্যামেরার গতি দুই রকমের ন্যারাটিভ - ক্যামের যখন অনুসরণ করে সামনের কোন কিছুর গতিবিধি তখন সেটা motivated আর যখন নিজে নিজেই পরিবর্তন করে নিজের গতি তখন সে নিজেই গল্পের ভেতরে অদৃশ্য এক চরিত্র । Age of Innocence তে এ পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন স্করসেসি । প্রতিটি শটেই ক্যামেরা করে নিয়েছে তার নিজের পথ - একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছে দেয়ালে টাঙ্গানো ছবিতে - অভিজাত ডিনার টেবিলে । একইসাথে সিনেমার কথকের সাথে রক্ত মাংসের দেখা মেলে না দর্শকের - হয়তবা কথক লেখিকা নিজেই কিংবা গল্পে বাস করা সেই সময়েরই কোন এক কণ্ঠস্বর । স্করসেসি নিয়েও ভাবতে চাননি নেপথ্যকণ্ঠের চরিত্র নিয়ে - অজ্ঞাতনামা কথক আর নাচতে থাকা ক্যামেরা সিনেমার ইতিহাসেই দুটির একসাথে ব্যবহারের সফলতম উদাহরণ । Age of Innocence স্করসেসির সেরা সিনেমা না হলেও সবচেয়ে পরিশীলিত পরিচালনাগুলোর একটি - উপন্যাসের অভিজাত নিউ ইয়র্কের হুবহু প্রতিচ্ছবি - স্থান , কাল , চরিত্রের সমন্বয় প্রথম দেখায় চোখ এড়িয়ে গেলেও পরবর্তী প্রজন্মের পরিচালকদের জন্য একটি আদর্শ আর আবশ্য পাঠ্য ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮