somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াত-শিবিরের কালচারাল নেটওয়ার্ক..এখনি রুখার সময় X( X(

২৫ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


; ‘আপনার লেখা আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো লেখক। প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন।’ অথবা ‘আপনার অভিনয় আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো অভিনেতা।’ প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন।’ কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক আর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের এ ধরনের অসংখ্য ফাঁদ পেতে প্রাথমিকভাবে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাটি করে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরা। তারা আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কালো হাত ছড়িয়ে দিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই চালিয়ে আসছে অন্ধকারের পথচলা।
জামায়াত-শিবিরের ফাঁদ
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পর যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক সংগঠন ছাত্রশিবির রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক তৎপরতা শুরু করে। যার নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দ নয়, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদেরই বসানোর চেষ্টা করা হয়। আর এই পথ ধরেই দেশের অন্যতম কবি ফররুখ আহমেদ, অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক ড. কাজী দীন মুহাম্মদ, কবি আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, আল মুজাহিদী, হাসান আলিম, অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকার, আরিফুল হক, একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়ক আবুল কাসেম মিঠুনসহ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিককে তাদের করে নিয়েছে। যাকে যেভাবে সম্ভব; তাকে সেভাবেই দলে ভিড়িয়েছে জামায়াত-শিবির। কাউকে ধর্মের কথানুযায়ী বেহেশতের লালসায় ফেলে, কাউকে পৃথিবীর প্রাচুর্য দিয়ে আবার কাউকে নাম-খ্যাতি দেওয়ার মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কবি আল মাহমুদকে যে মাধ্যমটিতে তারা তাদের করে নিয়েছেন; সে মাধ্যমটির কথা। আর তা হলোÑটাকা। কেননা, একটা সময় কবি আল মাহমুদ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ঠিক তখনই কবির পরিবারে নেমে আসে দারিদ্র্র্যের কষাঘাত। আর এ সময় কবিকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নিজেদের করে নেয় জামায়াতে ইসলামী। তখন থেকেই কবি আল মাহমুদ ছাত্রশিবিরের মুখপত্র নতুন কিশোর কণ্ঠ, জামায়াতের সাহিত্যভিত্তিক মুখপত্র নতুন কলম, রাজনৈতিক মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, সাপ্তাহিক সোনার বাংলাসহ অর্ধশতাধিক যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থক ছাত্রশিবিরের পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন। বিনিময়ে গুলশানে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দেয় কুখ্যাত রাজাকার-ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও জামায়াতের অন্যতম প্রধান মিডিয়া দিগন্ত টিভির প্রধান মীর কাশেম আলী। পাশাপাশি কবি আল মাহমুদ জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, জামায়াত-শিবিরের পত্রিকায় লেখা দেওয়াসহ তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য একটা মাসিক ভাতা পেতে থাকেন। এত এত সুযোগ কবি আল মাহমুদ যখন জামায়াত-শিবির থেকে পেলেন; তখন বেমালুম ভুলে গেলেন যে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, ভুলে গেলেন তার হাত ধরে গণকণ্ঠ পত্রিকায় উঠে এসেছিল স্বাধীনতার কথা, তিনি ভুলে গেলেন যে তিনি ‘কাবিলের বোন’ নামক চমকার একটি স্বাধীনতার সপক্ষের গ্রন্থ লিখেছিলেন, আরও ভুলে গেলেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এই দেশে জামায়াত-শিবির শুধুই যুদ্ধাপরাধী চক্র। তাদের প্রতিরোধ করার দায়িত্বটি কবি আল মাহমুদের আছে। ঠিক এভাবে নয়; একটু ঘুরিয়ে জামায়াত-শিবির ফাঁদ পাতে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সৈয়দ আলী আহসান আর অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকারের জন্য। যেখানে দেখা যায়, তাদেরকে সব সময়ই জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরা প্রশংসাবাক্য উপহার দিত। যেমন, ‘আপনার লেখা আমি অনেক পছন্দ করি। আপনি অ-নে-ক ভালো লেখক। প্লিজ, একটা অটোগ্রাফ দিন।’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এতেই কুপোকাত হন বরেণ্য এই মনীষীরা।
নামাজ পড়লে বেহেশতে যাওয়া যাবে, ইসলামি আন্দোলন করলে বেহেশত নিশ্চিতÑএ ধরনের তথাকথিত ধর্মীয় কথার জাল বুনে ধরা হয় চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন, অভিনেতা আরিফুল হকসহ অন্যদের। যারা এখন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সাংগঠনিক সম্পর্ক। বিশেষ করে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনাসহ আরও শতাধিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে জামায়াত-শিবির টার্গেট করে এগিয়ে আসছে অন্ধকারের সঙ্গে। নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন ‘সাইমুম শিল্পগোষ্ঠী’ টাইফুন শিল্পগোষ্ঠী, ফুলকুঁড়ি, কিশোর কণ্ঠসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গেছেন। কাজটি তিনি তার অজান্তেই করেছেন। তবু তিনি আটকে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে; এটা নিশ্চিত। অন্যদিকে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও জামায়াত-শিবিরের অন্ধকারের হাত ক্রমেই এগিয়ে আসছে।
(যারা এখন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সাংগঠনিক সম্পর্ক। বিশেষ করে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনাসহ আরও শতাধিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে জামায়াত-শিবির টার্গেট করে এগিয়ে আসছে অন্ধকারের সঙ্গে। নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন ‘সাইমুম শিল্পগোষ্ঠী’ টাইফুন শিল্পগোষ্ঠী, ফুলকুঁড়ি, কিশোর কণ্ঠসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গেছেন। কাজটি তিনি তার অজান্তেই করেছেন। তবু তিনি আটকে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে; এটা নিশ্চিত। অন্যদিকে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও জামায়াত-শিবিরের অন্ধকারের হাত
ক্রমেই এগিয়ে আসছে)
কালচারাল দৌরাÍ্য
রাজনৈতিক অঙ্গনে কষ্টের জাল বোনার পাশাপাশি বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও অন্ধকারের জাল বুনছে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকগোষ্ঠী ছাত্রশিবির। সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক কালো হাতের আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য, আমাদের সাংস্কৃতিক দেহ। সরাসরি বললে বলতে হয়, জামায়াতে ইসলামী আর শিবিরের দৌরাÍ্য এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, আজিজুল হক কলেজ আর বরিশাল বি এম কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চলে এসেছে পুরানা পল্টনের দিগন্ত টিভি পর্যন্ত। এখানেই তাদের পরবর্তী টার্গেট সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসনে মদদ দিতে এগিয়ে আসছেন অনেক স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের লোকও। কেউ জেনে, কেউ না জেনে। সম্প্রতি এমনই একটি আগ্রাসনের বলি হয়েছেন ভারতের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা। নচিকেতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তথাকথিত শিল্পী মানিক বের করেছে একটি অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি বাজারজাতও করেছে স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন। এখন কথা হচ্ছে, মানিক কে?
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মানিকের পুরো নাম আমীরুল মোমেনীন মানিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সহসভাপতি; একই সঙ্গে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য। এই মানিক ছাত্রশিবিরের ২০০১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিত কেবল ইসলামি গজল গাওয়ার জন্য। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও ছিল তৎকালীন সভাপতি ছালেহীর সহযোগী হিসেবে। সেই সন্ত্রাসী শিল্পী মানিককে মীর কাশেম আলী তার জঙ্গি মদদদানকারী চ্যানেল দিগন্ত টিভিতে রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেয়। ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’Ñপ্রবাদটিকে সত্যতার সঙ্গে প্রমাণিত হয়েছে এভাবে যে, মানিক আর মীর কাশেম একই সংগঠনের সাবেক আর বর্তমান জনবল। অতএব তারা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে এগিয়ে আসছে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে। স্বাধীনতার সপক্ষের সংগঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মওদুদুর রশীদ পবনের মতে, ‘এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। কখনো নয়া দিগন্ত আবার কখনো দিগন্ত টিভিকে পুঁজি করে করায়ত্ত করে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক বীরযোদ্ধাকে, যা আমাদের স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের সোনালি সহজ মানুষগুলো বুঝতে পারছেন না। এই সুযোগে এগিয়ে চলা জামায়াত-শিবিরের আগ্রাসী বাহিনী আঘাত করতে চাইছে আমাদের বর্তমানে।’ সম্প্রতি পবনের কথারই একটি নমুনা প্রকাশিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত একটি দৈনিকে। তার কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো: নন্দিত হলো গানের অ্যালবাম ‘আপিল বিভাগ’। টিভি রিপোর্টার আমীরুল মোমেনীন মানিকের ভিডিও গানের অ্যালবাম ‘আপিল বিভাগ’ ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়েছে। অ্যালবামটিতে বাড়তি চমক হিসেবে থাকা নচিকেতার ভিন্নধর্মী সাক্ষাৎকারটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আপিল বিভাগ অ্যালবামে মা ও বাবাকে নিয়ে একটি করে গান রয়েছে, যা ইতোমধ্যে এফ এম রেডিওতে প্রচার হওয়ায় বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাবা গানটির ভিডিওচিত্র দেখার পর বিশিষ্ট দর্শক হিসেবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহীনূর ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, আইটিআইয়ের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক সুপন রায় ও গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী। সংবাদটিতে একটু চোখ বোলালেই দেখা যাবে, দেশবরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারকে এখানে শিল্পী আসিফের পরে রাখা হয়েছে। যা জামায়াত-শিবিরের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরই প্রমাণ। অন্যদিকে গজলের শিল্পী মানিককে মোটামুটিভাবে মাইকেল জ্যাকসনের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, মডার্ন ফোক হিসেবে নির্মিত ঘুড়ি গানটির চিত্রায়ণ হয়েছে কুমিল্লা গোমতী নদীর তীরে। নদী, বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ আর নীল আকাশের নান্দনিক সম্মিলনে এই গানটির ভিডিও এককথায় অসাধারণ। সুখের স্বপন গানটির ভিডিওতে মডেল হয়েছেন অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কণ্ঠশিল্পী আগুন এবং চ্যানেল আই লাক্স তারকা মীম। ‘আপিল বিভাগে’র সমুদ্দুর গানে দেশের ১২টি জেলার পুরার্কীতি ও নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের অসাধারণ কিছু দৃশ্য সংযোজন এই গানকে জাতীয় মানে পৌঁছে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ছোটখাটো ভুলত্র“টি বাদ দিলে অ্যালবামের ১১টি গানই দর্শকহƒদয়ে দাগ কাটার মতো। আর নচিকেতার ডকুমেন্টারি নির্মাণে বিশেষ সহযোগিতা করেছে ভারতের জিটিভি। ডকুমেন্টারিতে নচিকেতার গোপন কিছু কথামালা উঠে এসেছে। নচিকেতার কথামালা আর মানিকের গান নিয়ে ‘আপিল বিভাগ’ ভিডিও অ্যালবামটি এখন ডিভিডি আকারে পাওয়া যাচ্ছে। খুব শিগগির দর্শকচাহিদা বিবেচনায় রেখে ভিসিডিতেও প্রকাশ পাবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের কর্ণধার এ কে এম আরিফুর রহমান। এখন বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে টাকার কাছে প্রায় সবাইই বিক্রি হচ্ছে। লেজার ভিশনের আরিফুর রহমান বিক্রি হয়েছেন, তাতে কোনো আফসোস নেই; কিন্তু তাই বলে জামায়াত-শিবিরের কাছেও বিক্রি হতে হবে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়েরও? এই প্রশ্ন এখন শুধু ছাত্রলীগ বা উদীচী কর্মীদেরই নয়, সারা দেশের সকল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মীও।
(সম্প্রতি এমনই একটি আগ্রাসনের বলি হয়েছেন ভারতের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা। নচিকেতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তথাকথিত শিল্পী মানিক বের করেছে একটি অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি বাজারজাতও করেছে স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন। এখন কথা হচ্ছে, মানিক কে?
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মানিকের পুরো নাম আমীরুল মোমেনীন মানিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সহসভাপতি; একই সঙ্গে শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য। এই মানিক ছাত্রশিবিরের ২০০১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিত কেবল ইসলামি গজল গাওয়ার জন্য। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিল)
নাটের গুরু যারা
দেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যে কাগজটিতে লেখেননি, সেটি হলো দৈনিক নয়া দিগন্ত। অথচ এই কাগজে অহরহই লিখছেন স্বাধীনতা-স্বাধিকারের পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত অনেকেই। এমনকি জাতীয় কবিতা পরিষদের মূল উদ্দেশ্য যেখানে দেশবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের জন্য লেখালেখি করা; সেখানে এই সংগঠনের বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দু-একশ টাকার কাছে বিক্রি হয়ে লিখে চলেছেন অবিরাম। সুযোগে সদ্ব্যবহার করছে আলী আজম থেকে রাতারাতি আবিদ আজম, জাকির হোসেন থেকে রাতারাতি জাকির আবু জাফর বনে যাওয়া জামায়াত-শিবিরের গৃহপালিত এই তথাকথিত কবি-ছড়াকারেরা; যাদের লেখা আজ অবধি পায়নি কোনো সাহিত্যমান। শুধু এই দুজনই নয়; যুদ্ধাপরাধীদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, শাহ আবদুল হান্নান, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, আতা সরকার, অধ্যাপক মতিউর রহমান, মাহবুবুল হক, সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, এরশাদ মজুমদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, আবুল আসাদ, বুলবুল ইসলাম, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মোশাররফ হোসেন খান, আসাদ বিন হাফিজ, জহিরুদ্দীন বাবর, মাসুদ মজুমদার, আরিফ নজরুল, আলতাফ হোসাইন রানা, আল হাফিজ, মাসরুর নেপচুন, এম আর মনজু, তৌহিদুল ইসলাম কনক, রফিক মুহাম্মদ, নূর-ই আওয়াল, কামাল হোসাইন, জুলফিকার শাহাদাৎ, মনসুর আজিজ, জালাল খান ইউসুফী, মালেক মাহমুদ, আযাদ আলাউদ্দীন, ওমর বিশ্বাস, নয়ন আহমেদ, পথিক মোস্তফা, হাসান রউফুন, ফরিদী নুমান, শাকিল মাহমুদ, এম আর রাসেল, আদিত্য রুপু, সাদী মিনহাজ, আল নাহিয়ান, হাসনাইন ইকবাল, বোরহান মাহমুদ, জুবাইর হুসাইন, বি এম বরকতউল্লাহ, শাহ আলম সরকার, ইকবাল করীম মোহন, মোজাম্মেল প্রধান, সুমাইয়া বরকতউল্লাহ, কামরুজ্জামান প্রমুখ। আমাদের দেশকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধী সমর্থকগোষ্ঠী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে না পারলে অচিরেই সারা দেশে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। অতএব স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে এখনই সচেতন হতে হবে, এভাবেই কথাগুলো বলেছেন আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসিবুর রহমান মানিক।
(সিএনসি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন, মৃত্তিকা একাডেমী, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, বিপরিত উচ্চারণ, পল্টন সাহিত্য পরিষদ, ফররুখ পরিষদ, চত্বর সাহিত্য পরিষদ, কিশোর কলম সাহিত্য পরিষদ, ফুলকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ, আল হেরা সাহিত্য পরিষদ, মাস্তুল সাহিত্য সংসদ, সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ, স্পন্দন সাহিত্য পরিষদ, কবি সংসদ বাংলাদেশ, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য সংসদ, কানামাছি সাহিত্য পরিষদ, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ, পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, সংগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, উচ্ছ্বাস সাহিত্য সংসদ, ইসলামী সাহিত্য পরিষদ, দাবানল একাডেমী, মওদুদী রিসার্চ সংসদসহ পাঁচ শতাধিক সংগঠন রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে)
জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন
সারা দেশে চার শতাধিক সংগঠন রয়েছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও তাদের সমর্থক ছাত্রশিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্কে। এর মধ্যে হাতেগোনা দুু-চারটির অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্রর অঙ্গসংগঠন হিসেবে। আর বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র হলো জামায়াতে-ইসলামীর সহযোগী সংগঠন। মহানগর মূল জামায়াতে ইসলামীর মহানগর কমিটির বলে জানা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, সিএনসি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন, মৃত্তিকা একাডেমী, প্রতিভা ফাউন্ডেশন, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, বিপরিত উচ্চারণ, পল্টন সাহিত্য পরিষদ, ফররুখ পরিষদ, চত্বর সাহিত্য পরিষদ, কিশোর কলম সাহিত্য পরিষদ, ফুলকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ, নতুন কলম সাহিত্য পরিষদ, আল হেরা সাহিত্য পরিষদ, মাস্তুল সাহিত্য সংসদ, সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ, স্পন্দন সাহিত্য পরিষদ, রেলগাছ সাহিত্য পরিষদ, কবি সংসদ বাংলাদেশ, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য সংসদ, কানামাছি সাহিত্য পরিষদ, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ, শীলন সাহিত্য একাডেমী, পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, সংগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, উচ্ছ্বাস সাহিত্য সংসদ, ইসলামী সাহিত্য পরিষদ, দাবানল একাডেমী, মওদুদী রিসার্চ সংসদসহ পাঁচ শতাধিক সংগঠন রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। যাদের মূল লক্ষ্য সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বেছে বেছে বরেণ্য সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি তরুণ সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও দলে ভেড়ানো। যাতে করে সারা দেশে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যানার ঝুলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবিরের কাজ করতে পারে।
(সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই পত্রিকাগুলোতে তারা লেখেন এবং গর্বিত হোন এই ভেবে যে, পত্রিকাগুলোর সার্কুলার বেশি, লেখক সম্মানী দেয় এবং অনেক বড় আকারে প্রকাশিত হয়। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জামায়াত-শিবিরের এই যে আগ্রাসন; তাতে আমাদের দেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। যদিও কবি ত্রিদিব দস্তিদার প্রায়ই বলতেন, জামায়াত-শিবির যা করে, তা হলো দল ভারী করে। কিন্তু প্রকৃত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা কখনোই স্বাধীনতাবিরোধীদের দলে ভেড়েন না। কেননা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মূল বিষয়ই হলো স্বাধীনতা। কিন্তু হতাশার রঙিন ফানুস ওড়ে পরক্ষণেই। কেননা, পত্রিকার পাতায় উঠে আসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নামে হায়েনার রঙিন নকশাকথা)
পত্রিকা-মিডিয়ার ফাঁদ
জামায়াত-শিবিরের অধিকাংশ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর রয়েছে নিজস্ব মুখপত্রও। আর তাতে লেখা নেওয়ার নামে এই জামায়াত-শিবির চক্র সহজেই সম্পর্ক তৈরি করে দেশের প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে।
এ ক্ষেত্রে যেসব তথাকথিত পত্রিকা ও সাহিত্য কাগজ জামায়াত-শিবিরের হয়েও মানুষের কাছে অহরহ যে পত্রিকাগুলো প্রতিনিয়ত পৌঁছে যাচ্ছে সেগুলো হলো: অন্ত্যমিল, উৎস, শেকড়, ডাকটিকিট, কানামাছি, ফুলকুঁড়ি, শীলন, কিশোর কথা, চারুকথা, মৃত্তিকা, শিল্পকোণ, রেলগাছ, ইষ্টকুটুম, ছাত্রকথা, নতুন কলম, সাহিত্য সমাচার, আল শিবির, সংস্কার, অহনা, ছোটরা, নিব, চুরুলিয়া, ফররুখ একাডেমী পত্রিকা, লাটাই, ঘুড়ি, ঘূর্ণি, বুনন, সত্যের আলো, মগবাজার, আল হেরা, নন্দন, স্পন্দন, বাংলা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, সোনার বাংলাসহ শতাধিক পত্রিকা ও সাহিত্য কাগজ। সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে সবার পরিচিত আরও অসংখ্য পত্রিকা-মুখপত্র ও সাহিত্য কাগজ। যেগুলো সম্পর্কে মানুষের ধারণা স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এই সকল কাগজে দেশের অন্যতম ছড়াকার সুকুমার বড়–য়া, কবি আসাদ চৌধুরী, খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, ফারুক নওয়াজ, আশরাফুল আলম পিন্টু, আবু সালেহ, আসলাম সানী, জুবাইদা গুলশান আরা, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, জগলুল হায়দার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, হাবিবুল্লা সিরাজীসহ প্রায় সকলেই লেখেন; সেই কাগজগুলো হলো: নতুন কিশোর কণ্ঠ, ডাকটিকিট, কানামাছি ইত্যাদি। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই পত্রিকাগুলোতে তারা লেখেন এবং গর্বিত হোন এই ভেবে যে, পত্রিকাগুলোর সার্কুলার বেশি, লেখক সম্মানী দেয় এবং অনেক বড় আকারে প্রকাশিত হয়। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জামায়াত-শিবিরের এই যে আগ্রাসন; তাতে আমাদের দেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। যদিও কবি ত্রিদিব দস্তিদার প্রায়ই বলতেন, জামায়াত-শিবির যা করে, তা হলো দল ভারী করে। কিন্তু প্রকৃত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা কখনোই স্বাধীনতাবিরোধীদের দলে ভেড়েন না। কেননা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মূল বিষয়ই হলো স্বাধীনতা। কিন্তু হতাশার রঙিন ফানুস ওড়ে পরক্ষণেই। কেননা, পত্রিকার পাতায় উঠে আসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নামে হায়েনার রঙিন নকশাকথা। রয়েছে একটি নয় দুটি নিজস্ব টিভি চ্যানেল। এ ছাড়া তাদের লোক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ৫টি টিভি চ্যানেল রয়েছে। যার লোভে ফেলেও এই যুদ্ধাপরাধী চক্র আমাদের স্বাধীনতার সপক্ষের কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাজনদের ভেড়াচ্ছে নিজেদের অন্ধকার জগতে। এমতাবস্থায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা।
(সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ইসলামি সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞাপন, স্পন্সর দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন তাদের জাকাত ফান্ড থেকে এককালীন টাকা দিয়ে থাকে প্রতিবছর। যে কারণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মতো মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত-শিবির দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার যে আয়োজন করে থাকে, সেই আয়োজনে জামায়াত-শিবির কৌশলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এয়ানতের নামে চাঁদা উঠিয়ে থাকে)
মিডিয়ায় জামায়াত-শিবিরের বর্তমান
মিডিয়ায় ক্রমেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। কেননা, সেখানে সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন সাইমুম থিয়েটারের নাটক নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘যেহেতু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনও সম্পৃক্ত। সেদিক থেকে বিচার করলে, এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলো বলতে গেলে, একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় আছে। তাই এখানে মূলত জামায়াত-শিবিরের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে সাদা চোখে দৃশ্যমান বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। সংস্কৃতি কী? এর সংজ্ঞা নিয়ে তর্ক রয়েছে। আমি এককথায় বলব, সংস্কৃতি মানে মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণ। সংস্কৃতি বলতে যারা নিছক নিজস্ব পরিমণ্ডলে মিউজিকবিহীন দু-একটা গান/অভিনয় করে বাহবা কুড়াতে চান, তাদের সঙ্গে কোন তর্ক করতে চাই না। মূলত আশির দশক থেকে বাংলাদেশে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। যদি শূন্য অবস্থান থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলতে হবে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে এই আন্দোলন। অনেক প্রাপ্তি আছে। একটি রাজনৈতিক বিপ্লবের সফলতা, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভেতর দিয়ে আসে। আমরা যদি বর্তমান সাংস্কৃতিক প্রবাহ পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিয়েটার আন্দোলন, বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে বাম ধারার বিশাল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কর্মসূচি আকারে, আজকের বাংলাদেশের তরুণ সমাজের বিশাল একটা শ্রেণীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। তরুণ সমাজের মানসপটে বাম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে আলোড়ন তৈরি করেছে। আজকের মিডিয়াজগৎ বামদের দখলে। এটা কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। অন্যদিকে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন এখনো ওদের তুলনায় একেবারে প্রাইমারি লেভেলে আছে।’
প্রকাশনাশিল্পে শিবির-জামায়াত
শুধু সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরই নয়। জামায়াত-শিবির এগিয়ে আসছে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক অসংখ্য পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশনাশিল্পেও। বাংলাবাজার, মগবাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকাশ করে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বইয়ের পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমানদের বই, যাতে করে দলে ভেড়ানো যায় এসব খ্যাতিমান সাহিত্যিককে। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে কবি প্রত্যয় জসীম বলেন, জামায়াতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করলে তথাকথিত ঔপন্যাসিক কাসেম বিন আবু বকরের ইসলামি উপন্যাসের নামে নোংরামিপূর্ণ বইয়ের দ্বারা আমাদের আগামী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাবাজার, শাহবাগ, পুরানা পল্টন, মগবাজারসহ সারা রাজধানীতে যেসব জামায়াত-শিবিরের প্রকাশন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান এক অজানা পথ ধরে বাংলা একাডেমীর বইমেলায়ও স্টল বরাদ্দ পায়। কোনো কোনো প্রকাশনী এক ইউনিটই শুধু নয়, দুই তিন চারটি পর্যন্ত পায়। কথিত আছে, জামায়াত-শিবিরের এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টল পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সানী টাকা নিয়ে সাহায্য করে থাকেন। তার সহায়তায় স্টল বরাদ্দ পাওয়া এমনই একটি জামায়াত-শিবির পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স। যেখান থেকে প্রতিবছর আমাদের সময়ের আলোচিত লেখকদের বই প্রকাশিত হয়। সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্সের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রয়েছে: আধুনিক প্রকাশনী, প্রীতি প্রকাশন, কিশোর কণ্ঠ প্রকাশনী, ফুলকুঁড়ি প্রকাশনী, মিজান পাবলিকেশন্স, ইষ্টিকুটুম, আল্পনা প্রকাশনী, গণিত ফাউন্ডেশন, মদিনা পাবলিকেশন্স, প্রফেসর’স, কারেন্ট নিউজ, সাজ প্রকাশন, সৌরভ, সাহিত্যকাল, নবাঙ্কুর, সাহিত্যশিল্প, শিল্পকোণ, আযান, অনুশীলন, ফুলকলি, দিগন্ত, পাঞ্জেরী, আল কোরআন ইত্যাদি।
আর্থিক জোগান
আর্থিক জোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতি একজন সাহিত্যিক জানান, বাংলাদেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ইসলামি সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞাপন, স্পন্সর দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন তাদের জাকাত ফান্ড থেকে এককালীন টাকা দিয়ে থাকে প্রতিবছর। যে কারণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মতো মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত-শিবির দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার যে আয়োজন করে থাকে, সেই আয়োজনে জামায়াত-শিবির কৌশলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এয়ানতের নামে চাঁদা উঠিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ছাত্রশিবিরের প্রথম সভাপতি কুখ্যাত রাজাকার ও অর্থনৈতিক দস্যু খ্যাত মীর কাশেম আলীর কৌশল অবলম্বন করে। কৌশলটি কী, তা জানার চেষ্টা করে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা প্রশাসনের যে-ই হোক, অতিথি করতে হবে। তাহলে সহানুভূতি তৈরি হয়। আর সেই সহানুভূতি কাজে লাগিয়েই আর্থিক ও প্রশাসনিক সহয়াতায় এগিয়ে চলছে জামায়াত-শিবির তথা যুদ্ধাপরাধীদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক আপডেট কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি এই জঘন্য নেটওয়ার্কটি পাচ্ছে পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গী সমর্থিত দেশ ও সংগঠনেরও আর্থিক সহায়তা।
একাত্তরের হায়েনা গোষ্ঠী যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবির এতটা পথ এসেও বলছে, তারা প্রাথমিক স্তরে আছে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, অনতিবিলম্বে ওরা আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে দখল করে নেবে। এমতাবস্থায় স্বাধীনতার সপক্ষের সবাইকে হতে হবে আরও সোচ্চার, আরও সচেতন। তা না হলে যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে জামায়াত-শিবির তাদের অন্ধকারে ঢেকে দেবে আমাদের সাহিত্য, আমাদের সংস্কৃতি।
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×