somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসা শিক্ষা সমাচার। পর্ব-৩

১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দুই পর্বে আলোচনা করা হয়েছিলো মাদ্রাসা শিক্ষা কবে থেকে এবং কিভাবে শুরু হয়, বৃটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলের অবস্থা ও আলোচনা করা হয়েছিলো। এবারের পর্বে থাকবে বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার চিত্র।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ঘোষিত হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক চেতনাভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষা বলবৎ থাকলো। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে, অন্যায়-জবরদস্তির বিরুদ্ধে, শিক্ষার অধিকারসহ গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের দাবিতে অসংখ্য আন্দোলন হয়েছিল। এর একটিতেও মাদ্রাসার ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিলো না। মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে আধুনিক গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা, বিজ্ঞানমনস্কতা ইহজাগতিক চেতনা ও যুক্তিবাদী মানবিকতা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মৌলিক মানবাধিকারসমূহের কোন বোধই ছাত্রদের মনন জগতে সঞ্চারিত হতে পারে নি। বরং ধর্ম শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতা মনোভাবের যে বিকাশ করে তোলা হয়েছিল তার প্রকাশ দেখা গেছে রাজাকার, আল-বদর, ঘাতকবাহিনীর সদস্যরূপে বিপুল হারে এদের অবস্থান ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এদের কাছে বিবেচনার জায়গা থাকে না, এদের বলা হয়েছিলো পাকিস্তান থাকলে ইসলাম থাকবে আর পাকিস্তান ভাঙলে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা এইটুকু বুজেই দেশের বিরুদ্ধে গিয়েছিলো। কিন্তু আজ পাকিস্তান নাই আজ বাংলাদেশ, এই দেশে কি ইসলাম নাই? আসলে ধর্মের কাছে আভেগ কাজ করে, যুক্তি সেখানে অপ্রয়োজনীয়। বাংলাদেশের সকল শাসক ঘোষ্টী ইতিহাসের এই শিক্ষা কে তাদের নিজস্ব শ্রেণীস্বার্থে কাজে লাগিয়েছে। নিজেদের স্বৈরাচারী শাসন বলবৎ রাখার জন্য ধর্ম শিক্ষার নামে তারা মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। বর্তমানে সেই ধারা তিব্র থেকে তিব্রতর।
//দেখে যাক মাদ্রাসার হিসাব//
পাকিস্তান আমলে ১৯৪৭-৪৮ সালে দাখিল-আলিম মিলে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ৩৭৮ টি (২২৪টি ও ১৫৪টি)। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় 'মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড'। পরে এর তত্ত্বাবধানে ১৯৫৭ সাল নাগাদ ৭২৬টি আলিয়া মাদ্রাসা পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে ওঠে। দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন ১৯৭২ সালে দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ১৩৫২ টি। খুদা কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক ১৯৭৩-৭৪ সালে দেশে মাদ্রাসার সংখ্যাঃ দাখিল ৭৬৫টি, আলিম ৩২০টি, ফাজিল ৩০০টি ও কামিল ৪৫টি, সর্বমোট ১৪১২টি।
১৯৯৮ সালে মোট মাদ্রাসা ৬৯০৬টি, যার মধ্যে ৪৮২৬টি দাখিল, ৯৯৬টি আলিম, ৯৫৮টি ফাজিল এবং ১২৬টি কামিল মাদ্রাসা। ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল মোট ১১৭৪৬টি।
২০০৮ সালে শুধু মাত্র আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা ১৪৫১৮ টি। এর বাইরেও পৃথক মহিলা মাদ্রাসা এবং বিজ্ঞান, কম্পিউটার, কারিগরিশিক্ষা বিষয়ে ও মাদ্রাসা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, হিফজুল কোরআন বা হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং মসজিদ ভিত্তিক শিশু শিক্ষা আছে । ইদানিং তথাকতিথ ক্যাডেট মাদ্রাসা এবং ইংলিশমিডিয়াম মাদ্রাসার আবির্ভাব দেখা যায়।
আমাদের দেশে বিভিন্ন স্তরে মাদ্রাসার পাঠ্য বিষয় মোটামুটি নিন্মরুপঃ-
ক. এবতেদিয়া স্তরে রয়েছে কোরান আরবি(২ পত্র), আকাইদ ও ফিকাহ এবং বাংলা, ইংরেজি, গনিত, সমাজ, বিজ্ঞান, শরীরচর্চা ।
খ. দাখিল ও আলিম সাধারন স্তরে রয়েছে কোরান, হাদিস, ফিকাহ(২ পত্র), বাংলা, ইংরেজি, উর্দু/ফার্সি, ইসলামের ইতিহাস, বালাগত ও মনতেক। আলিম মুজাব্বিদ সাহির বিভাগে অতিরিক্ত বিষয় ও বাংলা ছাড়া সবই ইসলাম ধর্মীয় বিষয়। তবে আলিম বিজ্ঞান বিভাগে ১০ টির মধ্যে ৪ টি ধর্মীয় বিষয় ও বাকি ৬ টি বাংলা, ইংরেজি, পদার্থবিদ্যা(২ পত্র) ও রসায়নশাস্র(২ পত্র)।
গ. ফাজিল স্তরে বাংলা ছাড়া সবই কোরান, হাদিস ও আরবি ভাষা ভিত্তিক ধর্মীয় বিষয়। ইংরেজি ও বাংলাসহ ধর্মনিরপেক্ষ বিসয়সমুহ ৯ টি বিকল্পের মধ্যে ১ টি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ঘ. কামিল বা উচ্চস্তর ডিগ্রির জন্য বর্তমানে ৪ টি বিষয়ের ব্যবস্থা আছে-হাদিস, ফিকাহ, তাফসির ও আদব বা আরবি সাহিত্য।
বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারী উদ্যোগে যেমনি তেমনি মাদ্রাসা ও ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়াস রয়েছে তা বাজেট বরাদ্দ, এ ধারার কার্যক্রম সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার অর্থায়ন-ইত্যাদি বোঝা যায়।
..মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মসজিদ কমিশন, মসজিদ সমাজ, বাংলাদেশ ইমাম প্রসিক্ষন কেন্দ্র, ইসলামামিক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক একাডেমী, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী ভাবধারার কেজি স্কুলসমূহ ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার যে বিপুল নেটওয়ার্ক সরকার, ইউনিসেফ, নোরাড, আশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউএনডিপি সহ বিভিন্ন দেশি বিদেশি সরকার ও সংস্থার বিপুল অর্থে পরিচালিত হচ্ছে।
ব্যাবস্থাপনা, উদ্দেশ্য ও পাঠক্রমের দিক থেকে দেশে চার ধরনের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে- ১. মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারী অনুদান দ্বারা পরিচালিত মুল ধারার মাদ্রাসা (এগুলো সাধারণের মাঝে সুন্নী মাদ্রাসা নামে পরিচিত, এদের মাঝেও বিতর্ক রয়েছে) ২. কওমি মাদ্রাসা- যেগুলো সাধারণত সরকারী অনুদান গ্রহন করে না, তবে দেশি বিদেশীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় (এগুলো সাধারণভাবে ওয়াহাবি মাদ্রাসা নামে পরিচিত) ৩. মূলত আমপারা ও কোরান পাঠ শিক্ষায় নিয়জিত মক্তব এবং ৪. সরকারী-বেসরকারিভাবে গৃহীত প্রকল্পভিত্তিক সাময়িক বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসুচি।
আমাদের দেশের প্রতিটি সরকারই তাদের পরিচয় যাই হোক- নির্বাচিত কিংবা অনির্বাচিত, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী কিংবা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী, সামরিক কিংবা বেসামরিক- এরা সকলেই রাজনৈতিক প্রয়জনে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। যে কারনে আমরা দেখি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ গর্বের সাথে বলেন যে তিনি মাদ্রাসা উন্নয়নের জন্য অন্যদের তুলনায় ১০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করেছেন। আর বেগম জিয়া গোষনা করলেন যে তিনি তার মাসের বেতনের টাকা মাদ্রাসা উন্নয়নের জন্য দান করবেন। একটু খেয়াল করলে দেখা যায় যে, তাদের ছেলে মেয়েদের কাওকে মাদ্রাসায় পড়ান নি।

আসছে চতুর্থ পর্ব.........
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×