somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ ও ফৈজু পাগলা

২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“আহা! বছর ঘুরিয়া পুনরায় পূন্যের মাস রমজান হাজির হইয়াছে। তাহার শেষে আবার বহুল প্রতীক্ষিত ঈদুল ফিতর। কলিকালের শহুরে ঈদ আর আমাদিগের বাল্যকালের ঈদের মধ্যে বিশাল তফাৎ বিদ্যমান।”
এই সকল ভাবিতে ভাবিতেই শিশুকালের ঈদের রঙিন স্মৃতি সমূহ চক্ষুপটে ভাসিয়া উঠিল। তন্মধ্যকার একটি ঘটনাই আপনাদের নিকট বর্ণনা করিবো।
শিশুকালের কথা। সেইবার ঈদ হইয়াছিল বর্ষা মওসুমে। ঢাকার উপকন্ঠ মিরপুর হইতে গ্রামীণ গন্ধ তখনও পুরাপুরি দূরিভুত হয় নাই। বৃষ্টির কারনে ঈদের জামাত হইবে মসজিদে। তাই সকালবেলা গোসল করিয়া, নুতন জামা কাপড় পরিধান করিয়া এবং চটিজোড়া বগলদাবা ও আব্বাজির আঙ্গুলখানা হস্তগত করিয়া প্যাঁচপ্যাঁচে কাঁদার উপর দিয়া মসজিদের দিকে রওনা হইলাম। সল্প দূরত্ব অতিক্রম করিতেই দেখিতে পাইলাম এলাকার বিশিষ্ট দুনম্বরি তৈল বিক্রেতা বল্টু খাঁ কর্দমাক্ত দেহে তার ডবল তরমুজ সাইজের ভুড়িখানা দুলাইতে দুলাইতে ফিরত আসিতেছে। আব্বা শুধাইলো, ‘কিগো পড়িলে কি করিয়া?”
“আর কহিয়েন না! ফৈজু পাগলা ধাক্কা মারিয়া ফালাইয়া দিয়াছে।”
ফৈজু হইলো আমাদের এলাকার স্থায়ী পাগল। জানিনা কি জন্য এলাকার মুরুব্বীরা তাহাকে এড়াইয়া চলিতো। আমরা ছোটরা তাহাকে ভালই পছন্দ করিতাম। কারন পাগলা প্রায়ই আমাদিগকে এ গাছ ও গাছ হইতে ফল ফলাদি পাড়িয়া খাওয়াইতো আর নানান কিছিমের গল্প শুনাইতো। “পাগলা আবার খেপিয়াছে!” আব্বা কহিলেন,“কি আর করিবে, যাও তোমার ঐ তেলতেলে গাত্র হইতে দুনম্বরি তৈলসমূহ ধৌত করিয়া নামাজে আসো।”
আব্বাজির টিটকারি শুনিয়া বল্টুমিয়া গজগজ করিয়া হন্টন শুরু করিল। মসজিদে পৌছাইয়াই দেখি আরেক হুলস্থুল। চার-পাঁচজন মিলিয়া অর্ধনগ্ন পাগলাকে লুঙ্গি পরানোর চেষ্টা করিতেছে, আর পাগলা চিৎকার করিয়া কহিতেছে, “আমি পাগড়ি পড়িব! আমি পাগড়ি পড়িব!”
অনুসন্ধান করিয়া জানা গেল ফৈজু উদোম গায়ে শুধু লুঙ্গী পরিয়া ঈদগাহে আসিয়াছিল। অতঃপর এলাকার বিশিষ্ট বখাটে চেংড়া মজিদ তাহাকে পরামর্শ দিয়াছে যে, এলাকার সকল মুরুব্বীরা পাগড়ী পরিধান করিয়া আসিয়াছে, একজন বিশিষ্ট মুরুব্বী হিসেবে তাহারও পাগড়ী পরিধান করা আবশ্যক। তৎক্ষনাৎ সে লুঙ্গী খুলিয়া মাথায় পেচাইতে শুরু করিলে এই বিপত্তি। আব¦া যাইয়া পাগলাকে শান্ত করিলেন। যদি সে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ হইয়া থাকে তাহলে তাহাকে বাসায় নিয়া মনমতো খাওয়ানোর ব্যবস্থা করিয়া দেবেন বলিয়া প্রতিশ্রæতি দিলেন। ফৈজু যে এই প্রতিশ্রæতি কাটায় কাটায় পালন করিবে, আব্বাজী তাহা বুঝিতে পারেন নাই। নামাজ সে শান্তরূপেই পড়িল । কিন্তু নামাজ শেষ হইতেই সে বাহির হইয়া প্রথমে কাঁদায় একপাক গড়ান দিয়া লইলো। উহার পর সফেদ কাপড়ধারী ব্যক্তিবর্গের সহিত কোলাকুলি করিয়া কাঁদা মাখাইয়া দিতে লাগিল। লোকজন দূর দূর করিতেই বলিয়া উঠিল, বাহিরের ময়লাকে তো তোমরা ভালোই ঘৃণা করে, তাহা হইলে ভেতরে যে কাঁদা তাহাকে কেন লালন কর!
ফৈজু সে ঈদের একমাস অতিক্রম না হইতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। শুনিয়াছি সে মারা যাইবার পূর্ব মূহুর্তে তার ¯^র্গবাসী জন্মদাত্রীকে স্মরণ করিয়া “ মা” বলিয়া ডাকিয়া উঠিয়াছিল।
পূনশ্চ: সে ঈদের পায়েস খাইতে খাইতে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, “আচ্ছা পাগলাদা তুমি বল্টু খাঁকে ধাক্কা মারিয়াছিলে কেন?”
“সে আমাকে পাগল বলিয়াছিলো, তাই!”
‘আমরাও তো তোমাকে পাগলা কহিয়াই ডাকি”
পাগলা মধুর হাসি দিয়া কহিয়াছিল, “তোমরাতো আমাকে ভালোবাসিয়া পাগল ডাকো, ঘৃণার সহিত তো নয়।”
পাগলার হাসিখানা এখনও চোখে ভাসে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×