somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উমুবী জামে' মসজিদঃপৃথিবীর সৌন্দর্যের সপ্তাশ্চর্য

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা এখন দিমাস্কের ইতিহাসে।উমুবী জামে মসজিদ অধ্যায়ে।দিমাস্ক তৎকালীন শাম এবং আজকের সিরিয়া নামক ভূ-খন্ডের রাজধানী। দিমাস্ক পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম শহর,যা এখনো আবাদ আছে।
"জামে উমুবী "।দিমাস্কের প্রাচীনতম জামে মসজিদ। বনু উমাইয়ার শাসনামলে নির্মিত হয়েছে বিধায় জামে উমুবী নামে প্রসিদ্ধ।"জামে' দিমাস্ক"ও বলা হয়।
জামে' উমুবী তখন সৌন্দর্য এবং সৃষ্টিশৈলির দিক দিয়ে পৃথিবীর আশ্চার্যতম নির্মাণ ছিল।আজকের আগ্রার 'তাজমহল ' যেমন তেমনই।মুসলিম অমুসলিম অনেক পর্যটক এই মসজিদ ভ্রমন করেছেন। এই মসজিদের প্রশংসা করেছেন।তৎকালীন সময়ে এই মসজিদ ছিল মক্কা মদিনা এবং মসজিদে আকসার পর চতুর্থততম বড় মসজিদ।

'জামে'উমুবী ' নির্মাণের পিছনে রয়েছে চমৎকার ইতিহাস।

বনু উমাইয়ার প্রসিদ্ধ শাসক ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক এই মসজিদের নির্মাতা।
রোমকদের যামানায় এটা খৃস্টানদের গির্জা ছিল।যেটাকে 'ইউহান্নার গির্জা' বলা হত।
হযরত উমরের যামানায় দিমাশক বিজিত হয়।শহরের অর্ধেক অংশ জিহাদের মাধ্যমে আর বাকি অংশ সন্ধির মাধ্যমে(শহরের অর্ধেক অংশ যখন বিজয় হয়ে গেল,নগরবাসী অস্ত্র ফেলে সন্ধির জন্য আহবান করল)বিজিত হয়।
(ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে,লড়াইয়ের মাধ্যমে দুশমনদের যেই এলাকা বিজয় হবে,সেটার ব্যাপারে ইসলামি হকুমতের পরিপূর্ণ অধিকার থাকবে।কিন্তু যে সকল এলাকা সন্ধির মধ্য দিয়ে বিজিত হয়,সন্ধি-চুক্তি'র মধ্যে থেকে শাসন করতে হবে।)
ঘটনাক্রমে এই গির্জার কিছু অংশ যুদ্ধের মাধ্যমে আর কিছু অংশ সন্ধির মাধ্যমে বিজিত হয়।
মুসলমানরা তাঁদের ধর্মীয় অধিকার অনুযায়ী যুদ্ধে বিজিত অংশকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন।আর সন্ধি-চুক্তি অনুযায়ী অপর অংশ গির্জা হিসেবে বহাল থাকে।
দিমাশক বিজয়ের পর থেকে যুগ যুগ পর্যন্ত এভাবে মসজিদ গির্জা একসাথে ছিল।
কিন্তু আস্তে আস্তে দিমাশকে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে লাগল।মুসল্লিদের জন্য মসজিদ সংকীর্ণ হয়ে পড়ল।

ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক(তার যামানায়)মসজিদের সংস্কার এবং গির্জা-কে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু সন্ধি-চুক্তি অনুযায়ী গির্জা-কে আপন অবস্থায় রাখতে হচ্ছে।
তিনি গির্জা কৃর্তপক্ষের সাথে বৈঠক করেন।এই গির্জা-র পরিবর্তে তাদেরকে অন্য স্থানে(যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত অংশে) চারটা গির্জা পুনঃনির্মাণের প্রস্তাব দেন।কিংবা উচিত মূল্যে গির্জা বিক্রি করার প্রস্থাব দেন(উল্লেখ্য,তাদের কাছে গির্জা বিক্রি বৈধ।)
কিন্তু তারা গির্জা সরানোর ব্যাপারে রাজি ছিল না।
এরপরো ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে গেলেন।অনেক চেষ্টার পর চারটা গির্জা পুনঃনির্মাণের শর্তে তারা রাজি হয়।
যাই হোক।
গির্জার অংশটুকু মুসলামানদের হস্তগত হওয়ার পর ওয়ালিদ মসজিদ নির্মাণের জন্য গির্জা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেন।কিন্তু খৃস্টানদের মাঝে এই বিশ্বাস প্রসিদ্ধ ছিল যে,যে কেউ এই গির্জা ধংস করবে, সে পাগল হয়ে যাবে।এই কথা জানার পর ওয়ালিদ নিজেই তা ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুত হলেন।এবং গির্জা-র উপর সর্বপ্রথম ওয়ালিদ-ই কোদাল মারেন।
দুই অংশকে মিলিয়ে ওয়ালিদ অনেক বড় একটা মসজিদ নির্মাণ করেন।নির্মাণক্ষেত্রে যা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সু-উচ্চ আলিশান ইমারাত।সৌন্দর্যের দিকদিয়ে যা ছিল সপ্তম অশ্চার্য।নয়নাভিরাম মসজিদ।
মসজিদের ভিতরে যেই মিহরাব নির্মাণ করা হয়েছে,তা পূর্ব-পশ্চিমে দুইশত ফুট লম্বা এবং একশত ফুট চওড়া।যার কিবলা দিকের দেয়ালে মরমর পাথরের সাথে স্বর্ণ খচিত ছিল।উপরে ছিল শানদার গনবুজ যার নাম কুব্বাতু-ন-নাছার"।
তৎকালীন সময়ে এই মসজিদ শাম-সিরিয়ার সবচেয়ে বড় ইমারাত হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল।তার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য পৃথিবীতে অদ্বিতীয় ছিল।
স্পেনের প্রসিদ্ধ পর্যটক, মুহাম্মাদ বিন জুবাইর(৫৮৭হিঃ)তে এই মসজিদ দেখে লিখেছেন,"আমি পৃথিবীর যে সকল আশ্চার্য এবং দূর্লভ দৃশ্য দেখেছি। এবং দৃষ্টিনন্দন যেসকল ইমারাত দেখেছি,তার মধ্যে দিমাশকের উমুবী জামে মসজিদের গম্বুজে চড়ার তজরবা সবচেয়ে বেশি আশ্চার্যজনক ছিল।"
তিনি আরো লিখেন,"জামে উমুবী-র গম্বুজের একটি বিশেষগুণ ছিল যে,সেটার উপর কোন মাকড়শা জাল বুনতে পারত না।কোন চামচিকা বাসা বাঁধতে পারত না।"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৩৩
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×