নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষের ভূমিকা
মনজুরুল ইসলাম মেঘ
সৃষ্টির আদিকাল হতে আমাদের এই সমাজ,বিভিন্ন ভাবে পুরুষরাই শাসন করে আসছে । আমাদের এই সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আমরা এক দিন সুখী-সমৃদ্ধশালী পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবো । এর জন্য দরকার মানুষে মানুষে বাচাঁর অধিকার,সমঅধিকার,নারী-পুরুষের সমান অধিকার। আমাদের ভাবতে হবে “নারী শুধু মানুষ নয়, পুরুষের মতই পূর্ণাঙ্গ মানুষ”। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি নানা বৈষাম্য মূলক আচরণ করা হয়ে থাক, যা আসলে কাম্য নয় । নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে পুরুুষদের কেই এগিয়ে আসতে হবে, পুরুষদেরকে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে ।
যে সকল ক্ষেত্রে নারীরা বেশী নির্যাতীত হচ্ছে:
১.বাল্য বিবাহ
২.বহু বিবাহ
৩.যৌতক প্রথা
৪.শিক্ষায় অনগ্রসত্তা
৫.কর্মক্ষেত্রে বেতনের বৈষাম্য
৬.ইভটিজিং
৭.পিতামাতার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার যত সামান্য/ অধিকার নেই
৮.মেয়ে সন্তানের প্রতি অবহেলা
৯.সহ কর্মীর দ্বারা যৌন নির্যাতন
১০.ধর্মীও অনুশাষনে নিপীড়ন
১১.তালাক প্রথা
১২.দোররা
উপরোক্ত নারী নির্যাতন গুলো একমাত্র পুরুষেরাই প্রতিরোধ করতে পারে । যেমন:
১.বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ : শফিক এম,এ পাশ করে শহরে বহুজাতিক শ্লিপ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন । গ্রামে শফিকের বাবা শফিকের বিয়ে ঠিক করেন । বিয়ের দিনে শফিক জানতে পারেন সে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে ১০ম শ্রেণীতে পড়ে । বিয়ের আসরে শফিক মেয়ের বাবাকে বুঝিয়ে বললেন আপনার মেয়েকে আই,এ পাশ করান আমি ততদিন অপেক্ষা করবো । সেই দিন থেকে গ্রামের মানুষ শপত করলো তারা তাদের মেে দেরদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিবেনা ।
২.বহু বিবাহ প্রতিরোধ : গ্রামের মাতবর কলিম শাহের পাঁচ বউ, নাতী নাতনীদেরও ছেলে মেয়ে হয়েছে, সে আবার বিয়ে করতে চায় । তাই গ্রামের কয়েক জন শিক্ষিত ছেলেরা যুক্তি করল কলিম শাহ কে তারা শায়েস্তা করবে। কলিম শাহের বিয়ের আয়োজন করা হল, তার পর বিয়ের রিতী নীতি পালন শেষে বাসর ঘরে কলিম শাকে চোখ বেধে প্রবেশ করতে বলা হল । সে যখন চোখ খুললো তখন বাসর ঘরে বউ হিসাবে দেখতে পেল সুন্দর করে সাজানো একটি কুকুর । এর পর থেকে গ্রামে যাদের বহু বিবাহ করার ইচ্ছা ছিল তাদের ইচ্ছাও শেষ হয়ে গেল । তার পর আশে পাশে কয়েক গ্রাম পর্যন্ত প্রায় বহু বিবাহ বন্ধই হয়ে গেল ।
৩. যৌতুক প্রথা : রহিম চাঁন তার ছেলেকে যৌতুক ছাড়া বিয়ে করাবে না এই নিয়ে তার ছেলের বিয়ে প্রায় সাতাশ বার ভেঙ্গে গেছে । অবশেষে রহিম চানের ছেলে বাবাকে ছাড়ায় পাশের গ্রামের এক শিক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করেন । রহিম চান বেশ কিছু দিন ছেলের বাড়ি যায়নি, হঠাৎ এক দিন ছেলের বাড়ি যাওযার পর রহিম চাঁনের ভুল ধারনা ভেঙ্গে গেল । সে দেখতে পেল তার বউমা তাকে অনেক আদর যতœ করছে । কিন্তু পাশের বাাড়িরবব্বানীর ছেলের বউ এমন কোন দিন নেই যে শশুর শাশুড়ীকে জালা যন্তনা করেনা । রব্বানী যৌতুক নিয়ে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে ছিল । রব্বানরি বিয়েই মেয়ের যৌতুকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে নিজের সর্বর্স বিক্রয় করে দিয়ে ছিল । রহিম চাঁন শপৎ করলো সে আর কখনো যৌতুক নিবেনা এবং মানুষদেরকে অনুরোধ করবে যৌতুক না নিতে ।
৪.শিক্ষায় অনগ্রসত্তা : বদরুল আমেনী মনে করে তার মেয়ের লেখা পড়া করার দরকার নেই, তাই সে তার তিন মেয়ে কে স্কুলে পাঠান না । এক দিন গ্রামে কয়েক জন শিক্ষিত লোক আসলো বদরুল আমেনীর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে। তার পর তারা বদরুল আমেনীকে বলল মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপরে নানান কথা । তারা বলছিল, মেয়েরাও ছেলে সন্তানের মতনই শেষ বয়সে বাবা মায়ের আশ্রয় স্থল হবে, মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোন অংশে কম নয় । বদরুল আমেনী তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল এবং তার তিন মেয়েকেই স্কুলে ভর্তি করে দিল ।
৫.র্কমক্ষেত্রে বেতুনের বৈষাম্য : ছালমা বানু কনষ্ঠ্রাকশনের দিন মজুরের কাজ করে, তার সাথে আরো কিছু নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করে । সবাই একই কাজ করে কিন্তু মহিলাদের বেতুন কম । সালমা বানু এই কথা বহুবার বলেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি বরং তাদের র্সদার তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দিয়েছে । এক দিন ছালমা বানু এই কথা অফিসের ম্যানেজার কে বললেন স্যার আপনি আমাদের কাজ দেখেন, তার পর বেতন সর্ম্পকে যা মনে হয় করবেন । ম্যানেজার সর্দারকে বেতন বাড়ানোর কথা বললে সর্দার তা এড়িয়ে যান এবং বলেন মহিলাদের সমান সমান বেতুন হলে তাদের মর্যাদা থাকেনা, তাছাড়া মহিলারা তো আমাদের মতন কাজ করেনা । ম্যানেজারের এই কথা বিশ্বস হলো না । তিনি সবার অগোচরে কাজ পরিদর্শন করলেন এবং দেখলেন মেয়েরাও সমান কাজ করেন, তাই তিনি ছালমা বানুদের বেতুনের বৈষাম্য তুলে নিলেন ।
৬.ইভটিজিং: পিন্টু সবুজ, রকি,ববি এলাকার মেয়েদেরকে ইভটিজিং করে । বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ধেকে মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করে । ওদের অত’্যাচারে রেশমা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । রফিক মাষ্টার এই কথা শুনার পর ওধেরকে ডেকেপাঠালেন, তারপর বললেন তোমরা মেয়েদের ইভটিজিং কর কেন ? পিন্টু বলল আমরা ইভটিজিং করিনা, আমারা মেয়েদের ভালবাসি । রকি রেশমাকে ভালবাসে কিন্তু রেশমা রকিকে ভালবাসেনা । আমাদের কি করার আছে বলুন । মাষ্টার সাহেব বললেন শুন তোমরা যদি ভালই বাস তাহলে ভালবাসার মানুষ যেন ষুখে থাকে সেই কাজই করা উচিৎ । এখন তোমরা লেখাপড়া কর মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হও,দেখবে ভালবাসার মানুষ সুখী হবে, আবার তাকে হয়তো পাইলেও পাইতে পার । তারা কথা দিল আর কোন দিন ইভটিজিং করবো না এবং এলাকাতে কাউকে ইভটিজিং করতে দিবেনা ।
৭.পিতামাতার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার যত সামান্য/ অধিকার নেই: আমাদের সমাজে এখনো মেয়েদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয় । রফিক তার সম্পদ তিন ছেলেকে দিল দুই মেয়েকে এক বিন্দু সম্পদ দিলনা । কারন হিসাবে বলল, মেয়েরা পরের বাড়ি যাবে সম্পদ অন্যকে কেন দিব । অতচ তার মেয়েদের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল । অপর দিকে বাদল তার সম্পদ দুই ছেলে ও এক মেয়েকে সমান ভাগে ভাগ করে দিল । তার ছেলে ও মেয়ে উভই সুখে দিন কাটাতে লাগলো
৮.মেয়ে সন্তানের প্রতি অবহেলা : ছালামের বড় আশা ছিল দুই মেয়ের পর এবার ছেলে হবে কিন্তু আবার মেয়ে হয়েছে । সে বাচ্চা মেয়েকে আদর যতœ করে না । বাচ্চাটি দিন দিন অসুস্ত হতে ছিল । একদিন পুষ্টি আপা ছালাম সাহেবকে বলল, ভাই আমরা ছয় বোন ছিলাম আমাদের কোন ভাই ছিলনা । আমাদের বাবা আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন । আমরা এখন চাকুরি করছি বাবা মা অনেক সুখে আছে । আপনার মেয়ের পুষ্টির দরকার তা না হলে সে অসুস্ত হবে এবং মারাও যেতে পারে । ছালম এ কথা শুনার পরে পুষ্টি আপাকে বলল, সে ভুল করেছে আর এ ভুল কাউকে করতে দিবেনা । সে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবে ।
৯.সহ কর্মীর দ্বারা যৌন নির্যাতন : মালল্টিপারপাস কোম্পানীতে চাকুরী করেন সোয়েব । তার চরিত্র ছিল খারাপ এই কোম্পানীতে কোন মেয়ে সহকর্মী বেশী দিন থাকতে পারেনা তার জন্য । মাসুদ নামের নতুন অফিসার আসলেন, তিনি সোয়েব সর্¤úকে আগে থেকেই জানতেন । মাসুদ সাহেব আতিয়া নামের এক সহকর্মীকে বললেন, সোয়েব কে শায়েস্তা করবেন এ জন্য তার সাহায্য দরকার । তারপর পরিকল্পনা মতন সোয়েব ফাঁদে পড়লেন, সে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দেখলেন সে স্থানে আতিয়া নয় স্বয়ং বস মাসুদ সাহেব । সবার সামনে এভাবে লজ্জিত হয়ে চির দিনের জন্য সঠিক পথে আসলেন ।
১০.ধর্মীও অনুশাষনে নিপিড়ন : কালাম সাহেবের স্ত্রী বি.এ পাশ, বিয়ের আগে শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি করতেন । কালামের সাথে বিয়ে হবার পরে কালাম চাকুরী করতে দিবেনা । সে ধর্মীও কারন ব্যাখ্যা করে বলেন মেয়েদের চাকুরী করা যাবেনা । এক দিন ঈমাম সাহেব আসলেন তাদের বাড়িতে, ঈমাম সাহেব বললেন মেয়েরাও চাকুরী করতে পারবে । তাছাড়া মেয়েরাও পুরুষের পাশে সংসারের সকল কাজে সহযোগীতা করতে পারবে । কালাম সাহেব তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন ।
১১.তালাক প্রথা: মজিদ তার স্ত্রীর উপর রাগকরে বলে ছিল তালাক । এখন এলাকার কিছু মানুষ বলছে মজিদের বউকে অন্য জনের সাথে বিয়ে দিতে হবে তার পর সে তালাক দিলে মজিদের সাথে বিয়ে হবে । এই নিয়ে নানা ঘটনা রটনা রটতে থাকলো । অবশেষে মৌলবী সাহেব আসলেন তিনি বললেন রাগের মাথায় তালাক দিয়েছে এ তালাক হবেনা তাই কিছুই করতে হবে না । মজিদ তার বউকে নিয়ে আবার সুখে সংসার চালাতে থাকলেন ।
১২.দোররা : বাবুলের সাথে রতœা প্রেম করে শারীরিক ভাবে মিলিত হতো । দুই জন বিয়ে করেছে গোপনে । কিন্তু সমাজের কিছু লোক তা মেনে নিতে চায়না । সামাজিক ভাবে তাদের দোররা মারা হলো, বাবুল সুস্ত থাকলো কিন্তু রতœার এমন অবস্থা যেন মারা যাবে । এই অবস্থা দেখে সচেতন কিছু লোক রতœার পাশে দাঁড়ালো । তার কিৎিসার ব্যাবস্থা করলেন ।
আমাদের সমাজে নারীর উপর যে সকল নির্যাতন হচ্ছে তা আসলে পুরুষের কারনেই হচ্ছে । পুরুষদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, পুরুষদেরকেই নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে । তাহলে আমাদের সমাজ থেকে নারীদের প্রতি যে সকল বৈষাম্য আছে, তা থাকবেনা । নারী পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে আমরা বসবাস করতে পারবো ।
পুুরুষরাই পারে একমাত্র নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে ।
নাম : মনজুরুল ইসলাম মেঘ
সম্পাদক, মাসিক “মজার বগুড়া” ।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বগুুড়া কালচারাল সোসাইটি(বি.সি.এস) ।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,বি.সি.এস নাইট স্কুল ।
০১৭৫৮৪৪৭৯৬৭
০১৯৩৭৭৯৬২০