somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সায়েন্টিফিক তাফসীর পর্ব-১,( জেনেটিক ইনফরমেশন)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

..........................................................................................................................................................

“তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” সুরা আল ইমরান আয়াত 7
..........................................................................................................................................................
আল কোরআনের এই আয়াতটির প্রতি লক্ষ্য করুন এখানে বলা হচ্ছে তিনিই তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। অথাৎ আল্লাহই আমাদের আকৃতি গঠন করেন। প্রিয় পাঠক এই বিষয়টিই নিয়ে আজকের আমাদের এই আলোচনা। আয়াতটি স্পষ্টভাবে ঘোষনা করছে প্রতিটি প্রানি স্বয়ং স্রষ্টা আকৃতি গঠন করছে। তাহলে আমরা আসি স্রষ্টার এই আকৃতি গঠন সম্পর্কিত আলোচনায়। প্রজনন তত্বের যে বিষয়টি সেটি নারী ও পুরুষ দারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এখানে একটি শিশু জন্মের সাথে তার আকৃতি রং বা কোন পছন্দ বা অপছন্দ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আমাদের বা অন্য কারো হস্তক্ষেপ নেই। এটি সর্ম্পূণ একটি প্রজনন কারখানা এ কাজে সম্পৃক্ত এবং সে কারখানা নির্ধারন করে কোন শিশু কেমন হবে কার কেমন আচরন হবে। কার েগায়ের কি রং হবে। মায়ের থেকে কতটুকু নিবে পিতা থেকে কতটুকু নিবে আর অলৌকিক দেনেওয়ালা কতটুকু সংযোজন করবে। এই দেনেওয়ালার হিসেবের উপর ভিত্তি করেই গঠিত হয় একটি শিশু। তার দেহ কাঠামো ও আচার আচরণ।



যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে পুরুষ ও নারী প্রজনন তন্ত্রের মাঝে পারস্পারিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে নারীর ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। ডিম্বানু ও শুক্রানু এগুলো হল গ্যামেট নামক বিশেষ এক জাতীয় প্রজনন কোষ, যেগুলো মিয়োসিস নামক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। যেখানে সাধারণ কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে, সেখানে গ্যামেট কোষে শুধুমাত্র ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে, এবং যখন দুটি গ্যামেট একত্রিত হয়ে জাইগোট বা ভ্রূণ গঠন করে তখন দুটি গ্যামেটের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রনকে বলা হয়ে জেনেটিক রিকম্বিনেশন। নতুন ভ্রূণে মাতা পিতা উভয়ের কাছ থেকে আসা ২৩টি ক্রোমোজোম একত্রিত হয়ে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম গঠন করে। একটি নির্দিষ্টকালীন গর্ভধারণ পর্যায়ের পর প্রসবের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়। আরো সহজে বললে ডিম্বানু আর শুক্রানু শিশু উৎপাদনের কাচামাল। ডিম্বাণু বলতে জীবের স্ত্রীজননকোষ বুঝানো হয়। যা জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়াযর এক পর্যায়ে পুরুষের শুক্রাণুর দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে। ডিম্বাণু সাধারনত হ্যপ্লয়েড ক্রোমোসোম ধারন করে থাকে। শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত ডিম্বাণু ডিপ্লয়েড যা প্রথমে জাইগোট গঠন করে যা পরবর্তিতে ভ্রূন এবং শিশু জীবে পরিনত হয়। একটি ডিম্বানু শুধু একটি শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হয়। আর পুরুষের শুক্রানু হলো পুরুষের স্পাম যা যৌনমিলনের সময় পুরুষ দেহ থেকে বের হয়। যৌনমিলনের একপর্যায়ে পুরুষ দেহ থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন স্পাম বেরোয়। যৌন মিলনের সময় শুক্রানু নারীর যোনিমুখ দিযে জরায়ুতে প্রবেশ করে ( কম পক্ষে ১ মিঃলিঃ এবং এতে ৩ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকতে পারে ) তখন কিছু কিছু শুক্রানু জরায়ুর মুখ থেকে সাঁতরে জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মেয়েদের তখন ডিম্বাণুর নি:সরণ হয । সে সময় শুক্রানু গর্ভাশয়ের মধ্য দিয়ে সাঁতরে ডিম্বনালী (ফেলোপিয়ান টিউব) এ প্রবেশ করে। ডিম্বানু স্থির হয়ে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকে আর ৩ মিলিয়ন শুক্রানু ডিম্বাণুর দিকে সাঁতরে যায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র একজনই ডিম্বাণুকে পায়। শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলে হয়ে যায় জাইগোট।

প্রিয় পাঠক, আমার আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু হলো একটি শিশুর আকৃতি দান করেন স্বয়ং স্রষ্টা। এর পিছনে কি যুক্তিযুক্ত প্রমান থাকতে পারে? এখন প্রশ্ন হলো “ কেনো এই ৩ মিলিয়ন স্পার্ম এর মধ্যে একটি মাত্র স্পার্ম থেকেই শিশু জন্ম নেয় “ হয়তো নাস্তিকদের ভাষ্য মতে আপনি বলবেন যে স্পামটি যোগ্য ছিলো। কিন্ত আমার প্রশ্ন কেনো সেই স্পামটি যোগ্য হলো? কে তাকে যোগ্যতা দিলো? কোথা থেকে পেলো সে এই যোগ্যতা? প্রতিটি স্পামই তো একই রকম একই ক্ষমতা সম্পন্ন থাকার কথা ছিলো! কিন্ত কেনো এই যোগ্যতা প্রাপ্তি? এর একটি মাত্র উত্তর - স্পামটি নির্ধারিত ছিলো। আর নির্ধারিত থাকার কারনে সেই স্পামটি ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে এবং জাইগোট রুপে সন্তান রুপে সৃষ্টি হযে থাকে। এই যোগ্যতাকে অদৃশ্য এক জগত থেকে নির্ধারন করে দেওয়া হয়? যদি এই বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপাঙ্খ ভাবে বুঝতে চান তবে শুক্রানুর গমন ও তার পদ্ধতির কিছু বিষয় আলোচনা করা উচিত । কিন্তু কেনো শুক্রানু ছুটে চলে। শুক্রাণুর দৈর্ঘ্য এবং এর যাত্রাপথের দূরত্ব হিসাব করে দেখা যায় যে এটি একটি স্পীডবোটের মত গতিতে চলে। এই বিস্ময়কর ইঞ্জিনের উৎপাদন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ঘটে থাকে। টেস্টিকলের ভেতরে যেখানে শুক্র উৎপাদিত হয়, সেখোনে রয়েছে প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা আণুবীক্ষণিক নল। কোন আধুনিক কারখানায় যেভাবে কনভেয়র-বেল্ট এসেম্বলী সিস্টেম কাজ করে, সেভাবেই এই নলের ভিতরে শুক্র উৎপাদিত হয়। সৃষ্টি করা হয় শুক্রাণুর বর্ম, ইঞ্জিন, এবং লেজের অংশ। একের পর এক জোড়া লাগানো হয় । ফলশ্রতিতে যা পাওয়া যায় তা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিস্ময়কর এক বিষয়। শুক্রানুর এই নিখুত গঠন দেখে বিজ্ঞানীরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। তাদের ধারনা এই নিখুঁত গঠনের কারণে শুক্রাণু দ্রুত ছুটে চলে ডিম্বাণুর দিকে। আবার একটি গবেষনায় দেখা গেছে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএইচএস ট্রাস্ট। তাঁদের গবেষণায় বলা হয়, অসংখ্য স্পার্মের মধ্যে কোন স্পার্ম জিতবে তা ঠিক করার জন্য রাসায়নিক সংকেত দেয় ডিম্বাণু। অথাৎ ডিম্বানু নির্ধারণ করে সে কোন স্পাম কে চাই? এগুলা কি আপনা আপনি ঘটে গেছে বিষয়। কখনই না। নির্ধারিত যা প্রমানিত বিষয়। এই বাস্ত বতার মুখোমুখি হয়ে আমাদের একটু চিন্তা করা উচিত। কিভাবে এই অচেতন কোষগুলোকে সঠিক আকৃতিতে শুক্রাণু তৈরি করতে পারে মায়ের দেহ সম্পর্কে কিছুই না জেনে? কিভাবে তারা বর্ম, ইঞ্জিন এবং লেজ তৈরী করা শিখল? এই বর্ম, ইঞ্জিন ও লেজ তৈরী না করলে শুক্রানু ডিম্বানু অভিমুখে যেতে পারতোনা। এই তিনটি বিষয় শুক্রানুতে অবস্থিত জেনেটিক তথ্য সমূহের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য কোন বুদ্ধিবলে সঠিক পরম্পরায় তারা এগুলাকে কে জোড়া লাগায়? প্রিয় ভিউয়ার আপনার কি মনে হয় এত কিচু আপনা আপনি এ্যাকসিডেন্টলি হয়ে গেছে? এর পিছনে চিন্তা ভাবনা বা ডিজাইনিং কোন ঘটনা নেই? নেই কোন বৃহৎপরিসরের কনসাসনেসের অস্তিত্ব?



এবার আসি আমরা ডিম্বানু সম্পর্কে আলোচনায়। ডিম্বানুর রয়েছে ব্যপক কার্যকারী ব্যবস্থাপনা। ডিম্বাণুকে ঘিরে রয়েছে একটি শক্ত প্রতিরোধক আবরণ। এই আবরণ ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসরমান অপ্রয়োজনীয় অঙ্গাণুগুলোকে মেরে ফেলে। এই আবরণকে ভেদ করাও খুব কঠিন। আর এই বাধাকে অতিক্রম করার জন্য শুক্রাণুগুলোর মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থা তৈরী হয়। শুক্রাণুর মাথায় বর্মের নিচে অনেকগুলো গোপন অস্ত্র অবস্থান নেয়, যা লুকায়িত থাকে। এগুলো খুব ছোট এবং দ্রবীভূত করার ক্ষমতা সম্পন্ন এনজাইম গ্রন্থি। এই গ্রন্থিগুলোকে প্রতিরোধক আবরণকে দ্রবীভূত করে তাতে গর্ত তৈরী করে, যার মধ্যে দিয়ে শুক্রাণু এই আবরণের ভিতরে প্রবেশ করে। যখন শুক্রাণু আবরণের ভিতরে নড়াচড়া করতে থাকে তখন তার বর্মটি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং অবশেষে তা খসে পড়ে। এই বর্মটির এভাবে খসে পড়ে যাওয়া নিখুঁতভাবে কার্যরত পরিকল্পনার একটি অংশ। কেননা এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ধরনের এনজাইম গ্রন্থির উদ্ভব ঘটে। এই গ্রন্থিগুলোকে শুক্রাণুকে সর্বশেষ বাধা, ডিম্বাণুর আবরণকে ভেদ করতে সাহায্য করে। শুক্রাণুর বর্মটির রং লাল, বর্মটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর আবরণ ভেদ করে এর ভিতরে প্রবেশ করে । শুক্রাণুর ডিম্বাণুতে প্রবেশ করার পরপরই আরেকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আর সেটি হলো এতক্ষণ পর্যন্ত শুক্রাণু তার সাথে বয়ে আনা লেজটিকে হঠাৎ করে পরিত্যাগ করে। এটা প্রয়োজনীয়, কেননা তা না হলে, সর্বদা ঘূর্ণায়মান লেজটি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে একে ধ্বংস করে ফেলত। শুক্রাণুর এই লেজটি পরিত্যাগের ঘটনাটির সাথে একটি রকেটের বায়ুমণ্ডল ত্যাগ করার পর তার তেলের ট্যাংক থেকে বিযুক্ত হওয়ার ঘটনার সাদশ্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেও তৈলবাহী ট্যাংকটি তার আর কোন কাজে লাগে না। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র শুক্রাণু কিভাবে এই সূক্ষ হিসাব করতে পারে? এভাবে শুক্রাণু তার লেজ পরিত্যাগ করে, ডিম্বাণুকে ভেদ করে, ক্রোমোজমগুলোকে ডিম্বাণুতে পৌঁছায়। ডিম্বাণুতে জেনেটিক তথ্য পরিবহনের কাজটি এভাবে শেষ হয়। এমনি করে শত শত বিভিন্ন রকমের এবং স্বাধীন ব্যবস্থার সমন্বিত প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ পুরুষের দেহের জেনেটিক তথ্যগুলো ডিম্বাণুতে পৌঁছায়। শুধুমাত্র শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনও একটি নির্ভুল পরিকল্পনা দ্বারাই সম্ভব যেখানে কোন দৈবের সুযোগ নেই। এমনকি মানুষ এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়, এই ঘটনাগুলো প্রত্যেকটি পর্যায়ের বুদ্ধিমত্তা ও পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে এর সাক্ষ্য বহন করে যে মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টি।

অত্যন্ত আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই কোষটির ভেতরেই এখনও জন্ম না নেয়া মানুষটি যাবতীয় তথ্য রয়েছে। অনাগত শিশুটির চোখ, গায়ের রং, চুলের রং, চেহারার গড়ন এবং অনান্য যাবতীয় শারীরিক বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, এসব যাবতীয় তথ্য এখানে সাংকেতিক ভাষায় (কোড) লেখা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে তার কংকাল, অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ, চর্ম, শিরা-উপশিরা এমন কি এসব শিরায় প্রবহমান রক্তকণিকার গঠন এবং সংখ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। একজন মানুষের ৭ বছর বয়সের গড়ন থেকে শুরু করে ৭০ বছরে তার গঠন কিরূপ হবে, এ সব যাবতীয় তথ্যই এই কোষে লিখিত আছে। নিষিক্তকরণের অব্যবহিত পরেই এই কোষটি একটি আশ্চর্য কাজ করে। এটি বিভক্ত হয় এবং দুটি কোষ উৎপন্ন হয়। এরপর এদুটি পুনরায় বিভক্ত হয়ে চারটি কোষ উৎপন্ন হয়। একটি নতুন মানুষের গঠন এখন শুরু হলো। কিন্তু কেন কোষগুলো বিভাজনের সিদ্ধান্ত নিল? কেন তারা নতুন একটি মানুষকে গঠনের কাজে হাত দিল? কে এই কোষগুলোকে নতুন মানুষ তৈরীর প্রক্রিয়া শেখালো? এই যেমন ধরেন মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন সংযোগ আছে। যেহেতু মস্তিষ্কের কোষগুলোর নিজস্ব কোন বুদ্ধিমত্তা নেই তাই এই ১০০ ট্রিলিয়ন সংযোগ ঠিকমত স্থাপন করতে হলে মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী কোন সত্তাকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। শুধু মস্তিষ্কের কোষই নয়, অন্যান্য সকল কোষই ভ্রণ হতে বিভাজিত হয়ে যার যার নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা দখল করে। এবং যেখানে সংযোগ স্থাপন করতে হবে ঠিক সেখানেই তারা হাজির হয় । কে সেই মহান সত্তা, যিনি এসব বুদ্ধিহীন কোষগুলোকে একটা বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনার আওতায় এনেছেন? মাতৃগর্ভে অবিরতভাবে শিশুর গঠনপ্রক্রিয়া চলতে থাকে। কিছু সংখ্যক কোষ অবিরাম প্রসারিত ও সংকুচিত হতে থাকে। এরকম হাজার হাজার কোষ একত্রিত হয় এবং হৃৎপিণ্ডের সৃষ্টি হয়। আর সারা জীবন ব্যাপী এই হৃৎপিণ্ডের কম্পন চলতে থাকে। এ যেন কোন দক্ষ কারিগরের নিপুণ সৃষ্টি।



প্রিয় পাঠক, এতক্ষন ধরে আমি একটি শিশুর গঠন সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করলাম। কিন্তু এখন আমি আলোচনা করতে চাই একটি শিশু গঠনে তার তথ্য বা আকৃতি কেমন হবে সেই বিষয়টি কিভাবে নির্ধারিত হয়? একটি শিশু কিভাবে তার যোগ্যতা গুনাগুন আচরন এসকল কিছু পাই? শিশুটি কেমন হবে এটা কিভাবে নির্ধারিত হয়? লক্ষ্য করুন শুক্রানু নিয়ে আসে কিছু জেনেটিক তথ্য কিন্তু কোন জেনেটিক তথ্য ডিম্বানু গ্রহণ করবে সেটি ডিম্বানু নির্ধারণ করে। পিতার তরফ থেকে কিছু তথ্য ও মায়ের তরফ থেকে কিছু জেনেটিক তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এই উভয়ের জেনেটিক তথ্য থেকে কতটুকু গ্রহণ করা হবে আর কতটুকু করা হবে না তা সেটি নিধ্যারিত হয় অলৌকিক একটি উপায়ে। সেটি নির্ধারন করে অলৌকিক একটি কারখানা। আমরা যাকে মাইয়োসিস কারখানা বলেই অভিহিত করি। শিশুর গুনাগুন আচার আচরন সহ আকৃতি কেমন হবে সেগুলো্ নির্ধারিত হয় শিশুর মাইয়োসিস বিভাজনের সময়। মাইয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে ক্রোমোজম এর গুনাগুন শুধু মাত্র অঙ্কুরিত ব্যক্তিটা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং এটা বংশানুক্রমিক ভাবে ও বংশধরদের মধ্য দিয়েও ও গড়াতে থাকে। মাইয়োসিস এর কারখানার মধ্যেই সিদ্ধান্ত এসে যায পিতৃ-মাতৃ প্রজনন কোষ হতে উৎপন্ন ব্যক্তিটির গুনাগুন কিরুপ হবে? একটি অদৃশ্য উপায়ে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহন করা হয়। এক কথায় বলতে পারেন আপনার আমার জীবনটা কেমন হবে তার ব্লুপ্রিন্টটা নির্দ্ধারিত হয়ে এসেছে পিতৃ-মাতৃর উৎপাদন কোষ MEIOSIS বিভাজনের সময়। এই কারখানার মধ্য দিয়েই বাছাই হতে থাকে ৭০ ট্রিলিয়ন ধরনের বিভিন্ন গুনাবলী সম্বলিত জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল একটি CHROMATID তার আর একটি NON SISTER CHROMATID এর সংগে উভয়ে BODY এর কোন একটি জায়গায় একত্রে মিশে যায়।এই স্থানটাকে CHIASMATA বলে। এই মিলিত হওয়ার স্থানের মধ্য দিয়ে তখন এরা উভয়ের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল একে অপরকে আদান প্রদান করতে থাকে। অনেকটা কৌশল, চতুরতা, দক্ষতার সংগে ও পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে আমাদেরই পিতৃ-মাতৃ জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল গুলীর মিশ্রন বা আদান প্রদান সম্পন্ন করে ফেলা হয়! এখানে কোথায় কার সংগে কিসের আদান প্রদান করা হল তা এ পর্যন্ত কারো লক্ষ্য করবার সাধ্যি হয় নাই। অত্যধিক গোপনীয়তা বজায় রেখে এই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এই জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর আদান প্রদানের মাধ্যমেই CHROMATID গুলীর গুনাবলী বা ভাগ্য তথা এর থেকে উৎপাদিত ব্যক্তির ভাগ্য এখানেই সকলের অজান্তেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। অতএব আপনার আমার ভাগে কী পেলাম বা কী হতে বঞ্চিত হলাম দুনিয়ার কেউই তা জানতে সক্ষম হয়না। শুধু সেই কারখানাই জানে পিতৃ অংশ থেকে কতটুকু গ্রহণ করবে কতটুকু মাতৃ অংশ থেকে অথবা কতটুকু বংশ পরম্পরা থেকে কতটুকুইবা সে নিজস্ব যোগ্যতা পাবে! তার আচরণ, চালচলন, যোগ্যতা আকৃতি প্রকৃতি সমস্তটাই পাই কারখানা থেকে। কারখানা নির্ধারিত করে সমস্তটাই। অথচ এই আদান প্রদানের সময় তার ভাগে কী পড়ল কারখানার নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছা উপরই নির্ভর করতেছে। সে একজন আইনষ্টাইন হবে নাকি একজন DOWN’S SYNDROME এর মত একটি স্থায়ী দুরারোগ্য ব্যাধি গ্রস্থ রোগী হবে নাকি, একজন সুস্থ মানুষ হয়ে জন্মাবে নাকি একজন ক্যানসার রোগ গ্রস্থ হয়ে জন্মাবে। তার সমস্তটাই নির্ধারণ করে কারখানা।

এ যেনো অদৃশ্য কোন এক বিষয়বস্তুর ইচ্ছাপ্রকাশের মাধ্যমে সমস্ত প্রকৃয়া ঘটতে থাকে! এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা কি আর কোথাও দেখতে পাবেন? অসম্ভব!!! এই জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন প্রকারের মিশ্রনের মাধ্যমে যে কত ধরনের গুনসম্পন্ন মানব উৎপাদিত হতে পারে তার ইয়ত্তা কারো পক্ষে খুজে বের করা সম্ভবপর নয়। এই কারখানার মধ্য দিয়েই জীব জগতের বৈশিষ্টের বৈচিত্রতা প্রকাশিত হয ও এর মধ্য দিয়েই DNA এর জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই প্রানী জগতের বংশ ধারার মধ্যে বিবর্তন ধারাও চলতে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হল এগুলী সবই আমাদেরই ব্যাপার বটে কিন্তু এটা আমাদের হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রনের একেবারেই বাইরে, এবং সম্পূর্ণ দৃষ্টির বাইরে এক অদৃশ্য জগতের কারখানা। আমরা যেন সেখান থেকে কোন এক অদৃশ্য হস্তের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একটি শিশু কি গুনাগুন সমৃদ্ধ হবে সেটা অদৃশ্য এক জগৎ যেনো নির্ধারন করে? নিয়ন্ত্রিত একটি বিষয় যেনো!


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×