ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি যে মানুষ আর পশুর ভিতর মুল পার্থক্য মানুষের মন আছে, বিচার বুদ্ধি আছে, কোনটি ভাল কোনটি মন্দ তা বোঝার ক্ষমতা আছে। এমন কি জ্ঞান বিদ্যার চাইতেও মানুষের মানবতা বোধকেই ধরা হয় পশু আর মানুষে প্রধান পার্থ্যক্য। কিন্তু আসলেই কি মানুষ আর পশুর ভিতর তেমন কোন পার্থক্য আছে?
আমরা প্রায়ই দেখেছি গরুর মাংশের দোকানে কত গুলো জীবিত গরুর পাশে একটি গরুকে জবাই করতে। কোরবানীর সময়ও একই ঘটনা ঘটে। আমার মাথায় মাঝে মাঝে কাজ করত জীবিত গরু গুলো কি বুঝতে পারছে এখানে কি হচ্ছে। পরে বুঝতে পারলাম সে কারনেই তো ওরা গরু(পশু)। ওদের বোঝার ক্ষমতা নেই ওদের পাশে কি হচ্ছে। বুঝলেও ওদের তোয়াক্কানাই কারন এটিতো আর ওর নিজের হচ্ছেনা হোক না একই জাত তাতে কি।
কিন্তু আজ আমারা কি দেখতে পাচ্ছি? আমাদের ও ব্যাবহার ঠিক এই পশু গুলোর মত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পাশেই মেরে ফেলা হচ্ছে জলজ্যান্ত মানুষকে, অথচ আমাদের এর মধ্যে কো ভ্রুক্ষেপ নেই।কারন ওটা তো আর আমাদের হচ্চেনা। সহপাঠিরা যেখানে ভাইভাই সম্পর্ক স্থাপন করার কথা সেখানে সহপাঠিকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে ছয়তলার ছাদ থেকে সুধু তাই নয় নিচে নেমে আবার অর্ধমৃত দেহটির উপর চালানো হচ্ছে তান্ডব।(জাহাংগীরনগর এর ঘটনা)।গনপিটুনিতে মেরে ফেলা হচ্ছে কাউকে যদি সন্দেহ করা হয় তাহলেই। জানার কোন উপায় নেই আসলেই সে সন্ত্রাসী কিংবা ডাকাত নাকি। কখনো কখনো সামান্য কাপর কিংবা খাবার চুরি করার জন্য মেরে ফেলা হচ্ছে কাউকে। আমরা বলি ওরাতো মানুষ না মেড়ে ফেললেই কি যায় আসে। মৃত শরীরের উপর অথবা কখনো কখনো জীবত মানুষটির মৃত দেহে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আগুন এবং যন্ত্রনায় কাতর মানুষটির চারপাশে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। এযেন মহা কোন বিজয়ের দৃশ্য। সবার মুখে হাসি, বিজয়ের হাসি। ঠিক যতটা কষ্ট সহ্য করে এর মানুষটির মৃত্য হচ্ছে ঠিক ততটারি যেন আনন্দ সকলকে করতে হবে। এ খেলার যে এই নিয়ম।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে এভাবেই খুন করা হ্ল আমাদের ছয় জন ভবিষ্যতকে। অনেকেই হয়ত বলতে পারেন যে এখানে গ্রামবাসির কি দোষ ছিল তারা তো এদের ডাকাত মনে করেছিল। শুধু মনে করার উপর ভিত্তি করে আমরা ছয় জন মানুষকে খুন করতে পারি । আর আমরা সবাই দেখেছি ওরা সবাই ছাত্র জানার পর ও সবার মাঝে সেই বিজয়ের হাসি, তাদের মধ্যে কোন অনুশুচনা নেই। যেন ভুল হলেই কি , খুন করতে পেরেছি এটিই সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। এখন উৎসব কর।
আর সর্বশেষ একুশে টিভিতে প্রচারিত নাসির বাহিনির তান্ডব। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করছে সাতজন মানুষকে। আর সবাই মিলে মজা দেখছে। হাসছে তামাসা করছে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছে। এ যেন এক আনন্দ ময় খেলা। কয়েকশত বছর আগে হলে এদের হয়তবা দেখাযেত মৃত লাশ দিয়ে বারবিকিউ করে তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে সবাই গান করছে।
পশুরা বুঝতে পারেনা, তাই তাদের পাশে যখন কখনো তাদের কোন সহজাতিকে মারা হয় তখন তাদের মাঝে কোন অনুভুতি থাকেনা। কিন্তু মানুষ তো এমন না, তারাতো বুঝতে পারে, তারা বুঝতে পেরেও তারা সেই লাশের পাশে বসে আনন্দ উৎসব করে। তাহলে মানুষ আর পশুর মধ্যে ভাল পার্থক্য তো দূরে থাকূক মানুষ পশুর চাইতে অধমে পরিনত হয়। আর আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত জাতি হিসেবে দাবি করি, সচেতন নাগরিক সমাজ বলে মনে করি, আমরা যদি এই গর্হিত কাজের বিরুদ্ধে রুখে না দাড়াই তাহলে আমাদের সাথে ঐ মানুষরুপী পশু গুলোর মধ্যে পার্থক্য খুবকমই থাকবে।