রাত অনেক হয়েগেছে প্রচন্ড ঠান্ডা কথাটা এখানে কেমন বেমানান দেখাচ্ছে কারণ মেসের গরম আবহাওয়া শীত শব্দটা কোন অর্থ বহন করে না । যদিও বাড়িই একমাত্র শান্তির যায়গা তারপর মনকে এক রকম জোর করেই এখানে নিয়ে এসেছি । উষ্ণ সবুজের গ্রামটা ছাড়তে কতটা কষ্ট হয়েছে তা কাকেই বা বুঝাবো । মাও কিছু বলেননি শুধু বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে জড়িয়ে হালকা কেঁদেছেন ।আপাতত এক আপুর কৃপায় পরিচিত রেষ্টুরেন্টে বসে চায়ে এক চুমুক দু চুমুক দিয়ে আপুর সাথে বসে চা খাওয়ার স্মৃতি চারণ করছি । এখানকার এই রেষ্টুরেন্টটি সেদিনথেকেই আমার বেশ পছন্দ । কারণ সেই একটাই, প্রথম বারের মত কোন মেয়ের সাথে চা খাওয়ার সাধটা এ রেষ্টুরেন্টই আমাকে দিয়েছিল ।
আজ ভালবাসার কথা চিন্তা করে মনে মনে হাসি । ভালবাসা কতটা আসলে আজ অনেক সস্তা । কোন এক সময় ভালবাসা শব্দটিকে সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করতে এক সময় রোমিও জুলিয়েট নামের মত অমর সাহিত্য রচিত হয়েছে ।একবার আমার এক বন্ধুকে এই ব্যাপারে মৃদু মন্তব্য করেছিলাম । বন্ধুটি বিরক্তে ভ্রু কুঁচকে হয়ে বলল সবাইকে একই পাল্লায় মেপো না । এখনো এখানে ভালবাসায় মরে যাবার রের্কড আছে । তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ছিলাম । এর ফল ভালো হয় নি । শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয়ে ভালবাসী শব্দটি পূর্ণভাবে স্থান পেয়েছিল।
(আমি বলছিনা ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ এক জন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
আমি বলছিনা ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাত পাখা নিয়ে কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছিনা ।
আমি জানি এই ইলেকট্রিকের যুগ নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ এক জন জিঞ্জেস করুক:
আমার জল লাগবে কিনা, আমার নুন লাগবে কিনা,
পাট শাক ভাজার সঙ্গে আরো একটা
তেলে ভাজা শুকনা মরিচ লাগবে কিনা ।
এঁটে বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছিনা ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভেতর থেকে আমার ঘরের দরজা খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক , কেউ অন্তত: আমাকে জিঞ্জেস করুক "তোমার চোখ এত লাল কেন ?")
আজ সারাদিন ঘুরে ফিরে "নির্মলেন্দু গুণ'র এই কবিতাটার কথা মনে আসছে । । কোন এক রাতে ভালবাসার উষ্ণতা পোহাতে পোহাতে এই কবিতাটা লিখেছেন বলে মনে হয় ।
কি সব আজে বাজে চিন্তা করছি । আসলে চিন্তা না করেই পারছি না । মেসে বসে তো আর সেই মনোরম পুকুর ঘাটের সাধ পাচ্ছি না। রাতটা কেমন জানি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । আমার মনে হয় এখনকার সময়গুলো এমনেই লম্বা । অদ্ভুদ এক পরিবেশ । ঝুমঝুম কোন শব্দ নেই । গাছের পাতার শনশনানি নেই । ব্যাঙ ডাকছে না । শহরের সকল গাড়ির শব্দ চুসে নিয়েছে সেই মনোরম ঝিঝি পোকার ডাক।
মেডিকেলে রোগির দেখাতে বসে আছি । আমার ডাক এখনো আসে নি । পাশে দুই বুড়া বুড়ি । একজন ম্যাগাজিনের পাতা পাল্টাছে আর একজন দাঁত চেপে বসে আছে । তার দাঁত কিড়মিড় ভাব দেখে আমার দাঁততেও শিরশির ভাব চলে এসেছে । এমন সময় আমার ডাক এলো । তাড়াতাড়ি রেস্পনস করলাম , না হলে দাঁত কিড়মিড় আমারই শুরু হয়ে যাবে । তাড়াতাড়ি ঢুকতে গিয়েই অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম । বিপরীত দিক থেতে আসা লোকের সাথে ধাক্কা । হাতের সবকিছু ফ্লোরে । সাথে সাথে আশপাশের লোকজন উভয়কে কিছুটা কড়া কথা শুনিয়ে দিল । মেয়েটা কোনা চোখে আমাকে দেখে মৃদু গলায় স্টুপিড বলে চলে
গেল । আমি ওর চোখ দেখে আঁতকে উঠলাম , গ্রামে থাকতে নানান সময় আমি পুঁজায় গড়েস মা দুঁগাকে দেখেছি , আজ মনে হল তেমন এক প্রতিমাকে দেখেছি । টানাটানা চোখে মোটা কাজল তবে কি কারণে বাম চোখের কোনাটা কাজল লেপটে গেছে । কাজল যেকোন মেয়েকে আর্কষনীয় করে তোলে তবে তা যে মেয়েটিকে এত সুন্দর করে তোলে তা প্রথম জানলাম । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল লাইফে আমাকে অনেক মেয়েই স্টুপিড বলেছে কিন্তু আড়চোখে এভাবে কোনো মেয়েই আমাকে স্টুপিড বলেনি । মজা পেলাম । সৃষ্টিকর্তা সব কিছুতেই সৌন্দর্য দিয়েছেন শুধু আমরা দেখিনা বা দেখার মানসিকতা নেই ।
খুলনার রোড । প্রচন্ড লাইটের আলোয় চারদিক দারুন আলোকিত হয়েছে। এমন একটা সময় আমি গুটিগুটি পায়ে খুলনা সফরে ঘুরে বেড়াচ্ছি । ঠান্ডা আজ একটু বেশি , সিগারেটটা না খেলেই নয় । সমস্যা হল লাইটার নেই । কি করব না করব ভাবতে ভাবতে রুপসা ব্রীজের উপরে দাড়িয়ে আছি । এমন সময় অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ের আগমন , হাতে সিগারেট । নম্রতার সাথে লাইটার চাইলাম যাতে রিজেক্ট হতে না হয় । না হলে সিগারেট না খাবার দুঃখে, এইখানে সুইসাইড করতে হবে । লাইটারটা এগিয়ে দিলো । লাইটারটাও সুন্দর , মনে হল কোন বিদেশি ভ্রান্ডের । লাইটার জ্বালালাম । সাথে সাথে মেয়েটার চেহারা জ্বলসে উঠলো । সোনালী ঢেউ খেলানো চুল তার । কাজলে রাঙানো চোখ । লাইটারের আলোর জন্যই হোক বা অন্য কিছুর জন্যই হোক আমার মনে হচ্ছিল উপরওয়ালা নিজের হাতে তুলি দিয়ে মেয়েটির চেহারাটা এঁকেছেন । আরো অবাক হলাম মেয়েটাকে দেখে । মেয়েটা আর কেউ না ঐ মেয়েটিই যে তাকে স্টুপিড বলেছিল । মেয়েটিও ওকে চিনেছে বলে মনে হলো । আমি অবাক হলাম এক মেয়ের এত রকম রূপ ??
চলে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি বললাম সরি । মেয়েটা অন্য মেয়েদের মত নেকামো না করে বলল "ঠিক আছে" বুদ্ধিমতী মেয়ে , বলতে হয়েনি কিসের কথা বলেছি । কথা হচ্ছিল হাঁটতে হাঁটতে । আরো কিছু বলতে যাচ্ছি বাঁধা দিয়ে বলল সে ব্যস্ত কথা বলার সময়
নেই । কথাটা আমার নিজের ইগোতে আঘাত আনলো । আমি কন্যা রাশি জাতক জীবনে কখনো মেয়ের পিছে ঘুরতে হয়নি আজ এক এই মেয়েটি আমাকে অপমান করলো ? দাঁড়িয়ে গেলাম দরকার নেই মেয়েটার , চাইলে আমি আরো মেয়ে পেতে পারি ।
আমি প্রায় ভুলেইগিয়েছিলাম মেয়েটির কথা । কিন্তু কোন এদিন ফেইসবুক আমাকে মেয়েটির চেহারা দর্শণ করার সুযোগ তৈরি করেদিল। অনিচ্ছাকৃত ভাবে মেয়েটির পুরো আইডিটি ঘুরপাক খেলাম। খামখেয়ালিপনায় ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টে ক্লিক পড়েগিয়েছিল। নিজেকে সাধু সাজানোর জন্য ম্যাসেজে দু-চার লাইন লিখে দিলাম। সেই থেকে যে কথা বলা শুরু হল তা আজও চালিয়ে যাচ্ছি।
একদিন কথা চলাকালীন সময়ে নিজের নামের বদলে আইডিতে এই নাম ব্যবহারের অর্থ জানতে চাইলাম । স্বশব্দে হাসলো । হাসতে হাসতেই জানালো এই কবিতাটি আমার প্রচন্ড ভাল লাগে । মুখ ফসলে বলেই দিয়েছিলাম কবিতার লেখকে কেমন লাগে ।
ভাল লাগে শুনায় শেষ পর্যন্ত নিজেই লেখকের নাম ধারণ করলাম। এবং সেই ভাল লাগাবে পূর্ণাঙ্গ ভালাবাসায় রুপান্তর করলাম। আজো কি যেন মিশে আছে ভালবাসার মানুষের সেই নামটিতে । সেই প্রথম ভালবাসি শব্দটি আজো চোঁখে ভাসে ।
মেসের জগতে সাত সকালে উঠার মত বাজে কাজ কেউ করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করতাম না । আজ সে কাজটা আমাকেই করতে হচ্ছে !! কারণ আমার হাত বাঁধা , মেয়েটির টানে আমাকে সাত সকালে ঘুম থেকে উঠতেই হয়। সে আমোকে সকালে শুভেচ্ছা জানানোর আগেই যেন আমার বলতে হবে শুভ সকাল।
সময়গুলো সত্যি আজ আমারমত হয়েগেল। আমাদের ভালবাসা জমতে লাগলো । নিখাদ এই ভালবাসা। আমাকে সে ভালবাসার নানাবিধ কথা শুনায় আর আমি থাকে ভালবাসার বিভিন্ন কবিতা শোনাই । এখন আমার ভালবাসার মানুুষটির কাছে যতই মিশি ততই ভাল লাগে । একে দেখে আমি ভাল লাগার ৫টি রূপ বুঝতে পারি । এইভাবে কাটে আমার ও ওর দিনগুলো । প্রায়ই আমাদের পরিকল্পনা চলে কবে আমাদের দেখা হবে ।জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় দুজনে পাশাপাশি বসে কাঠাবো। । আমার রুমমেট ও সহপাটিরা ইর্ষায় র্জজরিত । আমাকে নিয়ে কানাঘুষাও চলে । এক বড়ভাই তো তাচ্ছিল্যতার সাথে বলেই ফেলল ,গ্রীনর্কাডের জোগাড় কি করেই ফেলেছো ? আমি নীরব হাসি হেসে সব রহস্য রেখে দিই ।
কোন এক রাতে নিজ উদ্যেগে ছবি পাঠিয়েছিল। অপলক কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ওর চেহারায় । নিজের সমস্থ ভাললাগার মানুষটির সৌন্দর্য কিভাবে যে নিজের ভিতর তৈরি হয় তার হিসাব কষা আসলে দুষ্কর। ভালবাসার মানুষের মায়াবী মুখটি দেখে চিন্তা করলাম, কতবার যে আমি তোমাকে স্পর্শ করতে গিয়ে গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন। তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকার কথা বলতে গিয়েও কতবার যে আমি সে কথা বলিনি সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন"
মেয়েটি আনমনে হযেগেল । হয়তবা ফেলে আসা কোন কাহিনীর পুনরাবর্তন হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। চোঁখের সামনে উভয়ের তারতম্য অনুধাবন করায় হয়তবা আবার সেই নীরবতা । কিন্তু মেয়েটা বুঝে না কেন ওর অতীত নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই । আমি ওর বর্তমানকে ভালবাসি । আচ্ছা ওকে কি আমি আসলেই ভালবাসি ?নাকি সাময়িক আবেগ ? বারবার মনের ভিতর প্রশ্ন জেগেছিল আমাদের মাঝে কি ভালবাসারসঠিক পরিপূর্ণতা পেয়েছে ? অনেকগুলো প্রশ্নবোধক
চিহ্ন । নিজেকে চিনতে পারছি না ।
আমি তার চোঁখ দেখছি । তারাময় রাতে তার মণি যেন বিন্দু বিন্দুর আলোর উৎস । যতবার দেখি ততবার মনের মাঝ হতে কি যেন বেরিয়ে আসতে চায় । শেষ পর্যন্ত ঠিকই বুঝতে পেরেছি হ্যা আমরা সত্যি একে অপরকে প্রচন্ড ভালবাসেছি। তাই উভয়েই এর স্থায়ী পরিপূর্ণতার জন্য উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করেছি।
উভয়েই একবাক্যে বলেছিলাম : আমরা হাতগুলো শেষ যাত্রা পর্যন্ত ধরে রাখব।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৫