গভীর রাতেই কেন জানি সব চিন্তাভাবনা এসে ভীর জমায়...
দুনিয়ার যত হিসেব নিকেশ তখুনি মাথায় আসে...চাওয়া পাওয়ার হিসেব হারানোর হিসেব কান্নার হিসেব ভালবাসার হিসেব..সারারাত জুড়ে চলে হিসেব নিকেশের খেলা..
বিমলের আজকের ইন্টারভিউটাও ভালো হয়নি এদিকে বাবাও রিটায়ার করেছেন মার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ডাক্তার বলেদিয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনটা করিয়ে নিতে ছোট একটা বোন্ও আছে তার ও ভবিস্যত নিয়ে কিছু একটা করতে লাগবে এসব ভেবেই রাত কেটে যায়...
স্বপন মাস্টারের সারাজীবনে হাজার হাজার ছাত্র পড়িয়েছেন তার হাতদিয়ে কত ছাত্র বেরিয়েছে কতজন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলো তার হিসেব নেই, এখনো দেখলে কত সম্মান জানায় অথচ তার ছেলের ঘরেই আজ তার জায়গা হয়না কত গঞ্জনা শুনতে হয়, এখন রাত জেগে ভাবেন তার শিক্ষায় কোন দিকদিয়ে ত্রুটি রয়েগেল..
মিথিলা অনেক সাহস করে ঘর ছেড়েছিল প্রকাশের সাথে, ভেবেছিল একসাথে মিলে বানাবে স্বপ্নের সংসার ভালবাসার মেঘ ধরা দেবে তাদের ছাদে..ভুলটা ভাঙ্গে দেড় বছরের মাথায়, এখন প্রকাশ রোজ রাতে মাতাল হয়ে মারধর করে..মিথিলাও বুঝে পায়না এমন হলো কেন ? এমনটা তো হবার কথা ছিল না ? আগের সেই সৌন্দর্য আর কিছুই অবশিষ্ট নেই মিথিলার মধ্যে যে সৌন্দর্যে ধরা খেয়েছিল প্রকাশ এখন রয়ে গেছে তো একটা কঙ্কালসার দেহ..এখন আর চোখের জলে বালিশ ভেজে না চোখের জল ও শুকিয়ে গেছে..
দুধে আলতা রং ছিল বলে মা ওকে আদর করে ডাকত গোলাপী, সেই গোলাপীর কপালে এমন ছিল কেউ ভাবতে পারেনি..গ্রামের এক নেতার ছেলের কূপ্রস্তাবের উত্তরে কষিয়ে দেওয়া এক চড়ের প্রতিশোধটা এত ভয়ানক ভাবে আসবে সে ভাবতেও পারেনি সেদিন হটাত করেই কে বা করা তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল জঙ্গলের স্কুলঘরের পেছনে রাত ভর কতগুলো জানোয়ার পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠলো সেখানে ফেলে রেখে যাবার আগে মুখে এসিড ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েগেলো..এর পর মেয়েকে চরিত্রহীন বলে গ্রামছাড়া করলো..এখন রোজ রাতে গোলাপী ভাবে তার দোষটা কোথায় ছিল ?
রাত শেষ হয়,
সকাল হতেই দুটো মখে গুঁজে বিমল আবার বেরিয়ে পরে কাজের খুঁজে যাবার সময় মায়ের মুখটার দিকে আরেকবার তাকিয়ে যায় আদরের বোনটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়..বাবার মুখের দিকে তাকানোর সাহস হয়না..
স্বপন মাস্টার এখনো পড়ানো ছাড়েননি এখন রোজ সকালে নাতিকে পড়াতে বসেন..নিজের ছেলেকে যা শেখাতে পারেননি তা নাতিকে শিখিয়ে দিয়ে যাবেন যেন উনার ছেলে যেন উনার মত কষ্ট না পায়..বাবা হয়ে ছেলের কষ্ট কি করে দেখবেন ..
মিথিলা সকাল হতেই ঘর গুছিয়ে রান্না বসাতে যায়..পুরোনো ময়লা শাড়িটা কোমরে জড়িয়ে আবার সংসারের হাল ধরে..কাজে যাবার আগে যখন প্রকাশ খেতে বসে তখন একমনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মিথিলা..মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে ওর, খোঁচা খোঁচা দাড়িতে মুখটা অন্ধকার হয়ে থাকে দেখলে কেমন মায়া হয়..ভালাবাসা তখন অজান্তেই দানা বাঁধে..
সকাল থেকেই ব্যাস্ততার শুরু গোলাপির, শহরে এসেছে আজ বছর কয়েক হলো সারাদিন রাত পরিশ্রম করে এখন নিজের দুটো পার্লার, সেলাইমেশিন এর কাজ শেখানোর সেন্টার খুলেছে, খুলেছে নাচের স্কুল.. নিজের একটা বাড়িও কিনবে এরই মধ্যে..
রাত যায় আরেকটা নূতন সূর্য উঠে, জেদটা আরো জোরদার হয় দাঁতে দাঁত চেপে আবার লড়াইটা শুরু হয়..লড়াইটা নিজের সাথেই..