somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফানুশ [গল্প]

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ -
" কিরে বুবু স্কুলে যাবি না ?"
নিজের রুমের বিছানায় মরার মতো ঘুমাচ্ছিল অন্তরা । তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে মরিয়া তার ছোট ভাই আকিব । ওরা দুই জনে একই স্কুলে পড়ে । বোনের সাথে প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায় ও । বোনই প্রতিদিন সকালে আকিবকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করে দিয়ে এরপর নিজে তৈরি হয়ে এক সাথে স্কুলে যায় । আজকে এর ব্যতিক্রম হলো । উলটো আকিব অন্তরাকে ডেকে তোলার জন্য এসেছে ।
আজকে ওদের মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী । কিভাবে যে এক বছর কেটে গেলো তা বুঝা বেশ কষ্টকর । রাতে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল অন্তরার । মায়ের সাথে কাটানো সময়গুলো হঠাৎ যেন বেশ জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভাসছিল । আজ নিজের চুলে নিজের তেল দিয়ে বেণী করতে হয় । আজ আর পুতুলের জামা বানিয়ে সাহায্য করার দুটি কোমল হাত , মুখে মৃদ্যু হাসি থাকা মানুষটি আর নেই । অন্তরাকে বাসায় মায়ের আসনে বসতে হলো , অল্প বয়সেই হতে হলো পরিণত । আকিবকে দেখাশোনা করা , বাসার সকল কিছু দেখে শুনে রাখা , রান্না বান্না , হিসেব নিকেষ আরও কত কি । এইসব চিন্তা রাতে ওর উপর ভর করলো । অনেক রাত জেগে ছিল , ঘুম আসে নি । যার জন্যই আজ সকালে এই ব্যতিক্রম । ওর বাবা নকিব সাহেব অফিস চলে গেছেন পাউরুটি আর কলা খেয়ে , মেয়েকে ডেকে দেয়ার সাহস হয় নি । মেয়েকে তিনি তার স্ত্রীর মতোই ভয় পান । মায়ের কার্বন কপি বলা চলে ।

ওর বাবা সহজ সরল মানুষ , নিজের মেয়ের উপর ভরসা করেই সব মেয়ের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন । টাকা আগে স্ত্রীর হাতে তুলে দিতেন এখন মেয়ের হাতে তুলে দেন , মেয়ের কাছেই আলমারির চাবি থাকে ।
আকিব এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে আর অন্তরা নাইনে পড়ছে । আকিব ফোরে উঠলেই ওর আর ওর বোনের স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন হয়ে যাবে । ওর বোন সকালেই ক্লাস করবে আগের মতোই কিন্তু ওকে দুপুরে ক্লাস করতে হবে আর একসাথে স্কুলে যাওয়া হবে না । এই ভেবেই এখন বেশিরভাগ সময় ওর মন খারাপ থাকে । তাই যতদিন বোনের সাথে একসাথে স্কুলে যাওয়া যায় এর একটা দিনও আকিব স্কুল মিস করতে চায় না । তাই বোনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে ও এতো মরিয়া । ওর বয়স আর তারিখ ভুলোমন বলেই হয়তো আজকের দিনের গভীরতা ওকে স্পর্শ করে নি ।
অন্তরার ঘুম ভাঙ্গতে শুরু করেছে । চোখ অল্প একটু খুলে নিজের ভাইকে দেখে আবার চোখ বুজে বললো ," আজকে আর স্কুলে যাবো না রে , শরীরটা ভালো নেই । আজকে সারাদিন বাসায় থাকবো ।"
"কেন , কি হয়েছে বুবু ?"
" তোর বুঝতে হবে না । স্কুলের জামা ছেড়ে শুয়ে থাক । নতুবা কার্টুন দেখ।"
বেচারার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । অন্যদিন হলে হয়তো খুশিতে লাফই দিতো হয়তো । কার্টুন দেখার সুযোগ মেলে বোনের জন্য । টিভি বেশি দেখলে চোখ নষ্ট হবে বলে বকা দেয় সবসময় । কিন্তু তার বোনের সাথে স্কুলে যেতে ও এইবার বেশি ইচ্ছুক । একসাথে যাওয়ার সময় ওর বোন ওর হাত ধরে রাখে সবসময় । স্কুলে কি কি করা যাবে না সেই সম্পর্কে লেকচার দেয় । তখন ওর বুবুর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতেই ওর ভালো লাগে । আম্মু আম্মু একটা ভাব আছে । আবার স্কুল শেষে আসার সময় একই ভাবে হাত ধরে নিয়ে আসে আর কোনদিন আইস্ক্রিম কোনদিন আঁচার, ঝাল মুড়ি কিনে খাওয়ায় । এইগুলো মনে করেই পরের বছরের জন্য মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় ওর।

২ -
ওরা যে বাসায় থাকে ঐ বাসায় আরো ১১ টা পরিবার থাকে বাড়ির মালিক সহ । তারা ছাড়া প্রত্যেকের অবস্থাই অন্তরাদের মতো । এই অবস্থা বলতে আর্থিক অবস্থার দিক থেকে তারা প্রত্যেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের আওতাধীন । হয়তো সেকারণেই কিংবা অন্য কারণে তাদের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করার প্রবণতাটা বড্ড বেশি । রক্তের সম্পর্ক নেই , তবু একের জন্য অপরের যে ভালোবাসা তা অতুলনীয় । অন্তরাদের মা নেই কিংবা আত্মীয়-স্বজনের অভাব পূরণ করতে তারা সর্বদাই চেষ্টা করে । যদিও সকল খালি আসন পূরণের নয় তা যতোই উপযুক্ত মানুষ তাতে আস্বীন হওয়ার চেষ্টা করুক । বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওদের দাওয়াত করে , মাঝেমাঝেই বিভিন্ন বাসা থেকে খাবার রান্না করে পাঠায় , গল্প করতে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় । যদিও অন্তরা আর আকিবের বয়সী কেউই নেই পুরো বাড়িতে । হয় অন্তরার ছোট নাহলে বেশ বড় ।
নকিব সাহেবও বেশ নিশ্চিন্তেই থাকেন । বেশ ভালোভাবেই চলছে দিনকাল , ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছেন সহজেই । এতো সহজে পারবেন আশা করেন নি । মেয়ের কল্যাণে তা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে । অফিস করেন , এরপর বাসায় শুয়ে বসে পড়ে সময় কেটে যায় , এরপর আবার নতুন দিন ।
৩ -
নিজের বয়সী মেয়েদের মতো অন্তরারও ইচ্ছে করে বিকেলে সেজেগুজে বান্ধবীদের সাথে বের হতে, কোন ফুচকার দোকানে দাঁড়িয়ে ঝাল বেশি দেয়া মিষ্টি টকের ফুচকা খেতে কিন্তু ওর পক্ষে এগুলো সম্ভব না । যদিও ও বের হয় মাঝেসাঝে তবে ছোট ভাইকে সাথে করে । মাঝে মাঝে নকিব সাহেবও ওদের নিয়ে বের হোন। ফেরার পথে কোন রেস্তোরায় খেয়ে ফিরে আসেন বাসায় ।
সেদিন শুক্রবার ছিল । এলাকার মাঠে মেলা হচ্ছিল । ওদের বাবা অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে ছিলেন । তাই মেলায় যেতে হলে আকিবকে অন্তরারই নিয়ে যেতে হবে । মেলা হলেই যাওয়ার বায়না ধরে প্রতিবার এইবারও তাও ব্যতিক্রম নয় । আকিবকে শর্ত দেয়া হলো সকাল থেকে যদি সে মন দিয়ে পড়ে তবেই বিকেলে মেলায় ঘুরতে নিয়ে যাবে ওকে । আকিব তো শুনে মহাখুশি । পুরোদমে পড়তে থাকলো । আর ঐদিকে অন্তরা বাড়ির কাজ করে নিজে পড়তে বসে গেলো ।
বিকেল হতেই অন্যদিনের মতো আজ আকিব বাহিরে খেলতে না গিয়ে জামা কাপড় পড়ে একেবারে তৈরি হয়ে অন্তরার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলো । অন্তরাও রেডি ছিল ।
ভাই-বোন মিলে বেশ আনন্দেই মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । মেলার ঢোকার পথেই ওরা দেখতে পেলো একজন টেবিলে বিভিন্ন ধরনের পসরা নিয়ে বসে আছে আর ম্যাজিক দেখাচ্ছে সেসব জিনিস দিয়ে । আবার টাকার বিনিময় কিছুকিছু ম্যাজিকের পণ্য বিক্রিও করছে সাথে শিখিয়েও দিচ্ছে । কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ম্যাজিক দেখলো ওরা । একটু দূরেই ভ্যানে করে চিংড়ির মাথা ভেজে বিক্রি করছিল । আকিব খাওয়ার বায়না ধরলো । অন্তরা ওকে বললো পুরো মেলা ঘুরে যাওয়ার সময় কিনে নিবে । আকিব রাজী হলো ।
পুরো মেলা ঘুরে শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো । তখন চিংড়ির মাথা ভাজা কিনে বাড়ী ফেরার পালা । ফিরে আসার সময় ওরা দেখলো আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছে । আকাশকে কালো ক্যানভাস বানিয়ে নান রঙের যেন এক উদ্দাম ছোটাছোটি সেখানে । অন্তরা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল । এইসব রঙ্গে দেখে ওর যেন চোখে ধাঁধাঁ লেগে গেছে । অন্ধকার ঘরের কোণায় বসে থাকা মেয়ের গাঁয়ে যেন হঠাৎ করেই দরজার ফাঁক গলে সরু আলো এসে ডাক দিয়ে গেলো - " বাহিরে এসো , বাহিরে এসো , আমার হাত ধরেই এসো " । এই রঙের ঘোর কাটতে না কাটতেই । একদল আকাশে রঙিন ফানুশ উড়ালো । অন্ধকারকেও এতো রঙিন করে সাজানো যায় তা ও আগে কখনো ভাবে নি । ও মুগ্ধ , কিংবা তার থেকেও বেশি কিছু । আকিবও এইসব উপভোগ করছিল কিন্তু ওর কাছে তার থেকেও বেশি উপভোগ্য ছিল ওর বোনের অবাক হওয়া উজ্জ্বল মুখ । বুবুকে কখনো এভাবে দেখে নি এর আগে । ইশ , বুবুর মুখে যদি সবসময় এমন চাঞ্চল্য খেলা করতো ।
বাড়ি ফিরলো ওরা কিন্তু ওদের মনে সেই রঙিন ছোঁয়া কি এক ছবি যেন এঁকে দিয়ে গেছে । আকিবের খেয়াল জুড়ে বুবুর সেই মুখ যার চোখে একইসাথে বিস্ময় , মুগ্ধতা , ঠোঁটেও এক আনন্দের রহস্য । কোন শিল্পী রঙের তুলিতে তা ফুটিয়ে তুলতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সেই ছবি সৃষ্টিকর্তা মানুষেতে নিজে এঁকে দিয়েছেন অন্য কারো আর ক্ষমতা নেই । ক্যামেরায় বন্দী হবে শুধু এক মেয়ের ছবি কিন্তু ঐ মেয়ের বিস্মিত নয়ন অধরাই রয়ে যাবে তাতে ।
আর অন্তরার ভিতরে সব যেন গুলিয়ে আসছিল । সাধারণ জীবনের প্রতি একটা টান অনুভব করতে আরম্ভ করলো। সব ভালোবেসেই , সব আগের মতো রেখেই তো সে নিজেকে নিজে মেলে ধরতে পারে , দৌড়াতে পারে তার কিছু স্বপ্নের পিছনে । ধরা দিবে নাকি দিবে না তা পরের ব্যাপার কিন্তু ধরতে যাওয়ার পেছনেও তো আনন্দ আছে । মাঠে প্রজাপতির ধরা সবসময় মিলে না কিন্তু সেই রঙিন উড়ন্ত জিনিসটির প্রতি যে আকর্ষণের বলে ছোঁটা তাই বা কম কি । তাই তো আনন্দ ।
৪ -
প্রতি বছর বুবুর জন্মদিনে আকিব নতুন কিছু করে বুবুকে চমকে দিতে চায় এবং দেয়ও। ঈদের সালামি জমিয়ে রাখে সেই চমক দেয়ার জন্য । বিভিন্ন সময় আত্মীয় স্বজনও হাতে কিছু টাকা দিয়ে যায় । ওসব ও জমিয়ে রাখে । বুবুর জন্মদিনের বেশ আগে থেকেই ও চিন্তা করতে থাকে কি করা যায় । ও বড় হলে আরেকটু ভালো হতো কারো সাহায্য নেয়া লাগতো না হাতে টাকাও একটু বেশি থাকতো । কিন্তু ও বড় হলে যে বুবুও বড় হয়ে যাবে , চমকে দেয়ার জন্য পাশের রুম থেকে বুবুকে ডেকে বলতে পারবে না " শুভ জন্মদিন " তা ও কখনো চিন্তা করে নি । হয়তো একদিন করবে কিন্তু সেই দিন হয়তো বিদায় বলার অস্ময় এসে যাবে ।
কদিন বাদেই বুবুর জন্মদিন । এবার খুব বেশি চিন্তা করতে হয় বুবুকে চমকে দেয়ার জন্য । সেই মেলার ঘটনা ও এখনো ভুলে নি । মেলা থেকে আসার পরেরদিন থেকেই আপুর মুখ থেকে আম্মু আম্মু একটা শাসনের ভাব ছিল তা চলে গেছে । আম্মুর ভালোবাসা পুরোটাই দেয় , শাসনও করে ক্ষেত্র বিশেষে । কিন্তু অল্প বয়সেই দায়িত্বের ভারে নুয়ে পড়া যেই মেয়েটি মহিলা হয়ে গিয়েছিল সে আবার দস্বী মেয়ে হয়ে উঠতে শুরু করেছে । নকিব সাহেবেরও মেয়ের প্রতি ভয় খানিকটা কমেছে । রুমে যেয়ে গল্পটল্পও করেন ।
আকিব তার পরিকল্পনা তার বাবাকে জানায় । বাবাও বেশ খুশি । ঠিক ১২:০১ মিনিটে ওকে ছাদে নিয়ে যাবে ওরা ।
আগেরদিন বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে রাখলেন নকিব সাহেব । আর অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসলেন আতশবাজি আর বেশ কয়েকোটি ফাবুশ । আকিবের দায়িত্ব ছিল অন্তরা যখন কাজে ব্যস্ত থাকবে তখন খেলার অজুহাতে বের হয়ে বাড়ির অন্য সবাইকে ওর পরিকল্পনা জানানো এবং সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা । সবাই দাওয়াত পেয়ে মহাখুশি । তারাও কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলো ছোট -বড় নির্বিশেষে । সবাই যার যার মতো কাজ ভাগ করে কাজ শুরু করে দিলো । সিড়িঘর সাজালো বেলুন দিয়ে , কেকও আনা হলো । রাতে অন্তরা বাসা থেকে বের হয় না বলে কারো কাজে কোন সমস্যা হলো না ।
সব প্রস্তুত । যে যার বাসায় চলে গেলো রাতে দেখা হবে বলে ।
রাত তখন ১১:৫৯ মিনিট । আকিব অন্তরার রুমে ঢুকে দেখলো অন্তরা তখন ডায়েরি লিখছিল আর শাড়ি পড়ে বসে আছে । জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই ও শাড়ি পড়ে থাকে । নীল পাড়ের সাদা শাড়ি , কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ । কাশবনে পড়ে যাওয়ার মতো একটা শাড়ি । তবে রাতে টিউব লাইটের সাদা আলোতেও খারাপ মানায় না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশের চেয়ে পরিধানকারীই মুখ্য , আবার তার থেকেও মুখ্য পরিধানকারীর মনের পরিস্থিতি । শান্ত শীতলতার প্রতীক ।
আকিব হঠাৎ-ই ওর হাত ধরে টানতে শুরু করলো ছাদে যাওয়ার জন্য ।
" এইবার কি করবি শুনি ?"
" আগে আসো না ।"
" শুভ জন্মদিন না বলেই সরাসরি ' আসো না ' ?"
" ঐটা এখনো বলা সময় হয় নি আরো এক মিনিট আছে । তাড়াতাড়ি আসো নাহলে তোমার খবর আছে ।"
" আচ্ছা , বাবা যাচ্ছি ।"
ডায়েরিটা বন্ধ করে সরিয়ে রাখলো এরপর আকিবের পদাংক অনুসরণ করে এগুতে থাকলো ছাদের দিকে । সিঁড়িতে এসেই অবাক হতে শুরু করল কি বেলুন দিয়ে কি সুন্দর করে সাজানো । ওরা তিন তলায় থাকে , সেখান থেকে ছাদ অবধি বেলুন দিয়ে সাজানো । ছাদে উঠে ও আরো অবাক বাড়ির সবাই ছাদে । নকিব সাহেব এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন - " শুভ জন্মদিন , মা " । আকিব অন্তরার হাত ধরেই আছে । আজ এই হাত ও ছাড়বে না । এরপরই শুরু হলো আতশবাজির খেলা । বিস্ময়ের আর শেষ রইলো না ওর । সেই আগের বিস্ময়ের মতোই ও রঙিন খেলায় মুগ্ধ । সবাই এক সাথে গেয়ে উঠলো জন্মদিনের গান । আতশবাজি শেষ হতেই প্রত্যেকে একটি করে ফানুশ উড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো অন্তরার হাতেও একটি দেয়া হলো ।
এরই মধ্যে ঘোলাটে হয়ে এসেছে চোখ । এতক্ষণ দৃষ্টি উপরের দিকে ছিল আকিবকে খেয়াল করা হয় নি । অনুভব করলো আকিব ওর হাত ছাড়ে নি । আর আকিবের দৃষ্টি আকাশে নয় ওর মুখের দিকে । হাটু গেড়ে বসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আকিবকে । আকিবও জড়িয়ে ধরলো যতোটুকু শক্ত করে ধরে থাকা যায় । একজনের চোখের জলে আরেকজন কাঁধ ভিজে গেলো । নকিব সাহেব দূর থেকেই দেখতে থাকলেন এগিয়ে গেলেন না । কিছু কিছু মূহুর্ত দূর থেকে উপভোগ করাই বেশি আনন্দের এটি তেমনই একটি মূহুর্ত ।
অনেকদিন পর আকিবের তার মায়ের কথা মনে পড়লো । মা এভাবে জড়িয়ে ধরতো । বুবু কোনদিন জড়িয়ে ধরে নি । ও অনেকবার চেয়েছে যদিও তা মনে মনে । বুবু ওকে কম ভালোবাসে নি কিন্তু কোনদিন জড়িয়ে ধরে নি । হয়তো এভাবে মায়ের মতো ও জড়িয়ে ধরতে পারবে নাকি সেই ভেবে এড়িয়ে গিয়েছে ।
আকাশে অনেকগুলো ফানুশ উড়ছে । অন্তরার হাতেরটাও ছুটে গেছে আকিবকে জড়িয়ে ধরার মূহুর্তে । ভাই-বোন এখনো জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । কান্না শেষ হবে এক সময় কিন্তু এর রেশ রয়ে যাবে । বয়স বাড়বে , দূরত্ব বাড়বে - কিন্তু এই মূহুর্ত চিরকালই রয়ে যাবে রঙিন ।

[ আজকে এক আপুর জন্মদিন তারে জন্মদিনে কি দেয়া যায় চিন্তা করতে যায়া গল্প লিখার আইডিয়া আসলো । গল্পটাই তারে উপহার দিলাম । ]


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×