somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" আমি বড় হয়ে মা হতে চাই "

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটদের স্কুল কেন সকাল ৮ টায় হবে ? এতো সকালে কি অয়নের ঘুম ভাঙ্গে ? অয়ন গতমাসেই স্কুলে ভর্তি হয়েছে । আজকে ওর প্রথম ক্লাস ।
- অয়ন বাবা , উঠো । আজকে না তুমি স্কুলে যাবে ?
অয়নের মা সকাল ৭ টায় এসেছে অয়নকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করার জন্য ।
অয়নের কোন সাড়াশব্দ নেই যদিও তার ঘুম ভেঙ্গেছে । রাতে অনেক্ষণ চিন্তা করে ঘুমিয়েছিল যে ক্লাসরুম কেমন হবে ? কেমন বন্ধু পাবে ? বড় আপুর বান্ধবীদের মতো হলে আম্মু মিশতে দিবে না , বকবে । কিন্তু সকালে ঘুমের কাছে ও পরাস্ত । কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছে না ।
অয়নের মা অয়নকে কোলে তুলে নিলো । মা যেহেতু তাই সে ভালো করেই বুঝতে পারছে অয়নের ঘুম ভেঙ্গেছে কিন্তু উঠতে চাচ্ছে না । কোলে করেই বাথরুমের বেসিনের কাছে নিয়ে গেলো , মুখে পানির ছিটে দিলো ।
৭:৩০ টায় পুরো প্রস্তুত হয়ে অয়ন , অয়নের মা-বাবা খেতে বসলো । ওর বাবার অফিস বাসা থেকে দূরে হওয়ায় আগে আগেই বের হতে হয় ।
অয়নের বাবা হঠাৎ করে বলেন ,
- হৃদিতা , আমিই অফিসে যাওয়ার সময় অয়নকে স্কুলে দিয়ে যাবো । খামোখা তোমার আবার বের হওয়ার দরকার পড়বে না ।
এই কথাটা শুনেই অয়নের মুখ ফুলে যায় , চোখ নিচে নামিয়ে বলে ,
- না , আমি আম্মুর সাথে যাবো ।
হ্রদিতা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো ,
- আজকে প্রথম ক্লাস সাথেই নিয়ে যাই । বসে থাকতে হবে , কিছু কথা বলে পরিচিত হয়েই তো ছেড়ে দেবে ।
এরপর খাওয়ার টেবিলে আর কোন কথা হয় নি কারো । সবাই একসাথেই বাসা থেকে বের হলো ।
অয়নকে একেবারে ক্লাসরুমের ভিতরে একটা সিটে বসিয়ে দিয়ে হৃদিতা বের হয়ে এলো । ক্লাসে ২০ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী আছে । এর কিছুক্ষণ পরই ওদের ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকলো ।
- কেমন আছো তোমরা ?
বিভিন্ন সুরে একেকজনের কুশল ম্যাডামের কানে ভেসে আসতে লাগলো ।
- আমি , তোমাদের শায়লা ম্যাডাম । এখন আমি তোমাদেরকে আমার পরিচয় দিলাম ।এখন এক এক করে তোমাদের নামটাও আমাকে বলো । আর আরেকটা জিনিস বলো তোমরা বড় হয়ে কে কি হতে চাও ?
অয়ন চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে । সবার নাম আর বড় কি কে কি হতে চায় তা শুনছে । যার নাম শুনে ভালো লাগছে তাকে দেখে নিচ্ছে । ওদের অনেকেই বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় । একজন মেয়ে বলেছে , ও বড় হয়ে বউ হতে চায় । পুরো ক্লাস বেশ কিছুক্ষণ হেসে নিলো । কেউ কেউ আবার লজ্জায় দাঁড়ালোই না । ম্যাডাম ওদের কাছে গিয়ে কানে কানে শুনে এসেছে ।
এক সময় অয়নের পালা এলো । সিট ছেড়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো , দৃষ্টি হাই মাটির দিকে রেখে , দুটো হাত সামনের দিকে এনে ধরে রাখলো ।
- আমার নাম অয়ন ।
এরপর কিছুক্ষণের নীরবতা ।
নীরবতা ভাংতে শায়লা ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন ,
- তা অয়ন বলো , তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও ?
- আমি বড় হয়ে মা হতে চাই ।
পুরো ক্লাস হেসে উঠলো অনেকক্ষণ পর আবার । ম্যডামও হেসে নিলেন কিছুক্ষণ তবে বেশ অবাক হয়েছেন । মেয়েরা মা হতে চায় , ছোট্ট বাচ্চার কারণে । কিন্তু কোন ছেলের কাছ থেকে এই প্রথম এমন কোন উত্তর শুনলেন ।
- এতো কিছু থাকতে তুমি মা হতে চাও কেন ?
- আমার মা অনেক ভালো ।
- তুমি তো ছেলে তুমি তো মা হতে পারবে না ।
- না , আমি মা হবো ।
- আচ্ছা । বাবা হতে চাও না ?
ম্যাডাম দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারলেন অয়নের চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । তিনি অয়নের মাকে ডাক দিলেন ।
অয়নের মা সে ছেলের চোখ মুছিয়ে দিলেন । এরপর জিজ্ঞেস করলেন ।
- কি হয়েছে ?
অয়ন কথা না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে আছে । ম্যাডামই এগিয়ে এসে ঘটনা খুলে বললেন ।
অয়নের মা তখন ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলেন যে , আজ আর কোন কাজ আছে কি না ? না থাকলে অয়নকে নিয়ে যেতেন । পরিচিত হওয়া ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না তাই অয়নকে নিয়ে হৃদিতা বেরিয়ে এলো । আর ম্যাডাম বাকিদের সাথে পরিচয় পর্ব চালিয়ে যেতে লাগলেন ।
হৃদিতা অয়নকে কোলে নিয়েই বাসার পথে হাঁটছে । অন্য সময় কোলে উঠতেই চায় না । আর আজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে হৃদিতাকে । হৃদিতা কিছু জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু কোনটারই উত্তর দেয় নি অয়ন ।
মাকে জড়িয়ে ধরে অয়ন ভাবছে , আমি বড় হয়ে মা হবো । আম্মুর মতো মা হবো । আম্মু কত্ত ভালো । আম্মুকে সাজলে অনেক সুন্দর লাগে । আমি মা হয়ে আম্মুর মতো সাজবো । আম্মুর মতো আমার ছেলে হলে অনেক আদর করবো । আমি কখনোই বাবা হবো না , কখনোই না । বাবা হলে খালি অফিস আর অফিস । বাবারা খারাপ । বাবারা রাগ করে , মা'রা করে না । এসব চিন্তা করতে করতে মাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়ন ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×