somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্টসোনা গোল্ডিলকস আর তিনটি ভালুকের গল্প (অনুবাদ)

২৩ শে মে, ২০১০ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেকদিন আগের কথা। এক দেশে ছিলো তারা তিনটি ভালুক। ইয়া বড় বাবা ভালুক, গোলগাল মা ভালুক, আর তাদের একটি ছোট্ট শিশু ভালুক। জঙ্গলের ভেতর একটি সুন্দর কুঁড়েঘরে থাকতো তারা।

একদিন সকালে মা ভালুক তাদের সকালের খাবারের জন্য পরিজ বানিয়ে দিলো। কিন্তু পরিজটা এত গরম ছিলো যে মুখে দেয়া যাচ্ছিলো না, তাই তারা তিনজন ঠিক করলো বাইরে থেকে একটু বেড়িয়ে আসবে, ততক্ষণে সেটা ঠান্ডা হয়ে গেলে তারা নিশ্চিন্তমনে খেতে পারবে।



তারা চলে যাবার একটু পরেই গোল্ডিলকস নামের একটি ছোট্ট মেয়ে সেখানে এলো। গোল্ডিলকস আসলে বনের ভেতর ফুল তুলছিলো আর আপনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, তখনই এই ভালুকদের ঘরটা তার চোখে পড়ে। তাতেই সে খুব অবাক হয়ে হেসে উঠে হাততালি দিয়ে বলেছিলো "বাহ, কি সুন্দর ঘর! কিন্তু কে থাকে ওখানে?" কৌতূহলি হয়ে সে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে তাকালো ঘরের ভেতর। তারপর ভাবলো, কেউ তো এখন নেই এখানে।

তারপর পায়ে পায়ে সে দিব্যি ঢুকে গেলো ঘরটার ভেতরে।

প্রথমেই তার চোখে পড়লো খাবার টেবিলের ওপর রাখা তিন বাটি পরিজ। বাবা ভালুকের জন্য বড় বাটি, মা ভালুকের জন্য মাঝারি বাটি আর ছোট্ট ভালুকের জন্য ছোট বাটি। গোল্ডিলকস দেখলো, চমৎকার সুগন্ধ আসছে সেই পরিজের বাটিগুলো থেকে।

ততক্ষণে তার একটু খিদে পেয়ে গিয়েছিলো কাজেই সে তুলে নিলো একটা চামচ, তারপর গিয়ে দাঁড়ালো বাবা ভালুকের জন্য রাখা বড় বাটিটার সামনে। তারপর একটুখানি নিয়ে মুখে দিলো।



উহ, এ তো দেখি ভীষণ গরম! মুখ পুড়ে গেলো আমার! চমকে উঠে বললো সে।

তারপর সে মা ভালুকের পরিজটা চেখে দেখলো। কিন্তু সেটা আবার ছিলো বেজায় ঠান্ডা।

তারপর সে বাবু ভালুকের পরিজটা মুখে দিলো, আর তার মনে হলো এটাই সবচেয়ে ঠিকঠাক আছে। তাই সে মনের আনন্দে সেটা একেবারে সবটুকু খেয়ে ফেললো।

তখন তার চোখ পড়লো ফায়ার প্লেসের পাশে রাখা তিনটি চেয়ারের দিকে। বাবা ভালুকের জন্য বড় চেয়ার, মা ভালুকের জন্য মাঝারি চেয়ার আর ছোট্ট ভালুকের জন্য ছোট চেয়ার। তার মনে হলো, চেয়ারগুলোতে একটু বসে দেখলে মন্দ হয় না। কাজেই সে বাবা ভালুকের বড়সড় চেয়ারটাতে চড়ে বসলো।

নাহ, এই চেয়ারটা বড্ড শক্ত! ভাবলো সে।

তারপর সে গিয়ে বসলো মা ভালুকের চেয়ারটায়। কিন্তু সেই চেয়ারটা আবার একটু বেশিই নরম।

অবশেষে বাবু ভালুকের চেয়ারটায় বসে সে সবচেয়ে আরাম পেলো।

কিন্তু যেই না আয়েশ করে সে সবেমাত্র একটু গা এলিয়ে বসেছে, অমনি দুম করে সেই চেয়ারটা গেলো ভেঙে!

চেয়ার ভেঙে পড়ে গিয়ে তো বেচারি একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করলো নিজেকে। তারপর ঘরের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো ওপরতলায়। সেখানে তার চোখে পড়লো পরপর সাজানো তিনটি বিছানা, যথারীতি বাবা ভালুকের জন্য একটা, মা ভালুকের জন্য একটা, আর বাবু ভালুকের জন্য একটা।

হাই তুলে সে বললো, এবার বোধহয় একটু ঘুমোনো যায়!

কাজেই সে বিছানার চাদর তুলে বাবা ভালুকের বড় বিছানাটায় উঠলো, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তাকে নেমে আসতে হলো, কারণ সেটা ছিলো অনেক শক্ত।

তখন সে গেলো মা ভালুকের মাঝারি বিছানায়, কিন্তু সেটা ছিলো অনেক বেশি নরম।

বাকি রইলো বাবু ভালুকের বিছানাটা। সেটায় উঠে তার মনে হলো, বাহ! এটাই তো সবচেয়ে ঠিকঠাক আছে। তাই সে খুব দ্রুতই সেখানে ঘুমিয়ে পড়লো।

গোল্ডিলকস যখন ঘুমোচ্ছিলো ঠিক সেই সময় ভালুক তিনটি ঘরে ফিরে এলো। বনের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে তাদের অনেক খিদে লেগে গিয়েছিলো তাই তারা পরিজটুকু খাওয়ার জন্য খুব উদ্গ্রীব হয়ে ছিলো।

কিন্তু টেবিলের সামনে এসেই তারা হতবাক হয়ে গেলো।

বাবা ভালুক চেঁচিয়ে উঠলো, কেউ একজন আমার বাটির পরিজ খেয়েছে। X((
মা ভালুকও চেঁচিয়ে উঠলো, কেউ একজন আমার বাটির পরিজ খেয়েছে।
আর বাবু ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, আর আমার বাটির পরিজটুকু সবটা খেয়ে ফেলেছে!

তখন তাদের নজর গেলো ফায়ার প্লেসের ধারে তাদের চেয়ার তিনটির দিকে।

বাবা ভালুক খেঁকিয়ে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে।
মা ভালুকও খেঁকিয়ে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে।
আর বাবু ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, কেউ একজন আমার চেয়ারে বসেছে আবার চেয়ারটা ভেঙেও ফেলেছে! :((

তারপর তারা সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো তাদের শোবার ঘরে।

বাবা ভালুকটি হুঙ্কার দিয়ে বললো, কেউ একজন আমার বিছানায় শুয়েছে।
মা ভালুকও হুঙ্কার দিয়ে বললো, কেউ একজন আমার বিছানায় শুয়েছে।
আর বাবু ভালুকটি কেঁদে উঠে বললো, আর আমার বিছানায়ও কেউ একজন শুয়েছে, আর এই তো সে!



আর ঠিক তক্ষুণি গোল্ডিলকসের ঘুম ভেঙে গেলো। বিস্ফোরিত চোখে সে দেখলো বিছানার পাশে সেই তিনটি ভালুককে, তারপর বিছানা ছেড়ে পড়িমরি করে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে! তারপর এমন এক দৌড় দিলো যে নিজের বাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত ভয়ে সে আর পিছু ফিরে তাকালোই না!

সেই তিনটি ভালুকও আর কোনওদিন গোল্ডিলকসকে দেখতে পেলো না।


*******************************************


প্রিয় ব্লগার ও সুলেখক মোস্তাফিজ রিপন ভাই উদ্যোগ নিয়েছেন পৃথিবীর সেরা সব শিশুসাহিত্যগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করার এবং তারপর যদি সম্ভব হয়, ব্লগ কর্তৃপক্ষের উৎসাহ (মূলতঃ ব্লগ চতুর্মাত্রিক ডট কম থেকে এসেছে এই ব্যাপারটা) থেকেই গল্পগুলো বই আকারে প্রকাশ করার যাতে আমাদের দেশের শিশুরা এগুলো মনের আনন্দে পড়তে পারে এবং বিশ্বশিশুসাহিত্যের সাথে ছোটবেলা থেকেই তাদের পরিচয়টা সঠিকভাবে গড়ে ওঠে। তিনি আমাদের সকলকে আহবান জানিয়েছিলেন অন্ততঃ একটি করে গল্প অনুবাদ করতে। ইতোমধ্যে আপনারা নিশ্চয়ই ব্লগার তারার হাসি, আকাশ অম্বর, উশৃংখল ঝড়কন্যা এদের অনুবাদ করা গল্পগুলো দেখেছেন এবং পড়েছেন। আমরা যারা আগ্রহী ছিলাম তারা ওনার এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছি। মোস্তাফিজ ভাই নিজেই আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে একটি করে গল্প বেছে দিয়েছেন অনুবাদ করার জন্য, আর সেখানে ব্লগার ভেবে ভেবে বলি'র (অর্থাৎ আমার) :) ভাগে পড়েছে এই গল্পটা। খুব ভয়ে ভয়ে অনুবাদ করলাম (জানি না কেমন হয়েছে)। অত্যন্ত আনন্দিত হবো যদি অনুবাদ সঙ্ক্রান্ত কোনও সাজেশন দিতে পারেন। :)

মূল গল্পটি পাবেন এখানে।

আর এটার চমৎকার একটা ভিডিও আছে ইউটিউবে। আগ্রহীরা ঘরের শিশুদের নিয়ে দেখতে পারেন অবশ্যই। ভিডিওটা এখানে দিয়ে দিলাম।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:০০
৯১টি মন্তব্য ৯১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×