somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৃষ্টিকর্তা যখন ড্রাঙ্ক ছিলেন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে- এই দুজনের মধ্যে এখন যদি যে কোন একজন মারা যায় তখন অপরজনের কি হবে?

২০১৬ সালে সেনেগালের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম হয় সংযুক্ত এই শিশু-দুটির, জন্মের পরপরই ডাক্তার বলেছিলেন এরা হয়তো খুব বেশিদিন বাঁচবে না, কিন্তু ডাক্তারদের অনুমান ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আজ এই ২০২৪ সাল পর্যন্ত শিশু দুটি বাহল তবিয়তেই জীবিত রয়েছে, শুধু তাই নয় তারা এখন স্কুলেও যাচ্ছে। :D



অবাক করা কান্ড হচ্ছে; দুটি শিশুর জন্য মাত্র এক জোড়া পা এবং তাদের দুজনের ডান হাত একটি, আরও অবাক ঘটনা হচ্ছে- শিশু দুটির কোমড়ের নিচ থেকে কাঁধ পর্যন্ত পুরোপুরি জোড়া লাগানো থাকলেও দুজনের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্পাইনাল কর্ড, আলাদা হার্ট এবং মস্তিষ্ক। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- শিশু দুটি বেশকিছু অর্গান শেয়ার করলেও দুজনের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, দুজনের নামও ভিন্ন Marieme এবং Ndeye, Marieme এর যেমন কম কথা বলা এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ আপর দিকে Ndeye প্রচুর কথা বলে এবং ঝাল খাবার পছন্দ। Ndeye এর চেয়ে Marieme সবকিছু দ্রুত শিখতে পারে, কি অদ্ভুত তাই না?



আরে অদ্ভুতের দেখছেন কি! ভয়ানক অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে- যেহেতু দুজনের এক জোড়া পা আর তাই পা নাড়াচাড়া করার জন্য একে অপরের অনুমতি নিতে হয় না; মানে যে কোন একজনের ব্রেইনের সিগন্যাল পেলেই পা সে অনুযায়ী নড়ে যেমন- Marieme এর ইচ্ছে হলো পা'টা একটু নড়াবে তাহলেই সে পা নাড়াতে পারবে, এজন্য Ndeye এর সম্মতির প্রয়োজন নেই। সংযুক্ত ডান হাতের ক্ষেত্রেও তাই, যে কোন একজন ইচ্ছে করলেই হাত নাড়াতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- একজন ইচ্ছে করলো হাত বা পা নাড়াবে কিন্তু অপরজনের ইচ্ছে নাড়াবে না, তখন কি হবে? একজনের ব্রেইন বলছে ইয়েস, অপরজনের ব্রেইন বলছে নো তখন হাত বা পা কোন ব্রেইনের সিগন্যাল পালন করবে? B:-)



শিশু-দুটির বাবা ইব্রাহিম চেয়েছিলেন অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা দুটিকে আলাদা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করতে, আর এ জন্য তিনি তাদের লন্ডনের নামকরা Great Ormond Street হাসপাতাল এ নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু সারা দুনিয়ার বাঘা বাঘা সব ডাক্তারগণ দীর্ঘদিন শিশু-দুটিকে নিয়ে গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত অপারেশন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ অপারেশন করলে দুটি শিশুর যে কোন একজনের মৃত্যু অনিবার্য আর এ জন্য তাদের বাবা ইব্রাহিমকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সে কোন শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় আর কোন শিশুটিকে মারতে চায়? পৃথিবীর কোন বাবার ক্ষেত্রেই এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয় যা ইব্রাহিমের ক্ষেত্রেও ঘটেছে আর তাই তিনি শিশু-দুটিকে আলাদা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে- এই দুজনের মধ্যে এখন যদি যে কোন একজন মারা যায় তখন অপরজনের কি হবে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে একজন মারা গেলে অপরজনও দুইচারদিনের মধ্যেই মারা পড়বে। :|

শিশু-দুটি বর্তমানে লন্ডনের Great Ormond Street হাসপাতালে রয়েছে, বাচ্চা দুটি'কে নিয়ে আগামী বুধবার বিবিসি একটি গবেষণামুলক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করতে যাচ্ছে, তখন হয়তো আরও বিস্তারিত জানা যাবে।

নিউজ লিংক: Conjoined twins given days to live are proving world wrong

এখন আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে- আমার কি এখন সৃষ্টিকর্তাকে গালাগালি করা উচিৎ? কিন্তু গালাগালি তো কোন সমাধান নয় আর এ তো শুধুই দুর্বলের হাতিয়ার। তবে আমি মনে করি সৃষ্টিকর্তাকে গালাগালি না করেও তার সমালোচনা করা যেতে পারে কারণ দৈনন্দিন বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের কারণে সবাই সৃষ্টিকর্তাকে বুঝে না বুঝে শুধু ধন্যবাদই জানিয়ে আসছে কিন্তু তার নানা অসঙ্গতিপূর্ণ, অমানবিক কাজের জন্য কেউ তার সমালোচনা করছে না যা একদম'ই ঠিক না বলে আমি মনে করি। আমি আরও মনে করি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তার সমালোচনাও করা উচিৎ তা না হলে তার স্বেচ্ছাচারিতা কমবে না। তাছাড়া বেসিক নলেজ হচ্ছে- ভালো কাজের জন্য কেউ যদি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবেই খারাপ কাজের জন্য সে সমালোচনার পাত্রও বটে। আবার কারো যদি খারাপ কাজ করার কোন সুযোগ বা ক্ষমতা না থাকে তাহলে তার ভালো কাজগুলো সব মূল্যহীন। সুতরাং বুঝা গেলো সৃষ্টিকর্তার সমালোচনা করা যেতেই পারে এবং এতে দোষের কিছু নেই।



সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমার ধারণা অতি নগণ্যই, প্রাচীনপন্থী কিছু বই-পত্র এবং মানুষের মুখ থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো- তিনি খুবই ক্ষমতাবান, তিনি যখন যা খুশি তাই করেন, তিনি কারো কোন ধার ধারেন না, তিনি করো মুখাপেক্ষীও নন, সবমিলিয়ে তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী এক স্বৈরাচার। ওয়াজ মাহফিল তথা ধর্মীয় সমাবেশ থেকে তার সম্বন্ধে আরও জানতে পারি- সবকিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন, সমস্ত কিছুর ডিজাইনার তিনি নিজেই, আসমান ও জমিন এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তার অবগতির বাহিরে কিছুই নেই, সমস্তকিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, তার তৈরি কোন কিছুতেই বিন্দুমাত্র কোন খুত নেই... ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীতে ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি ডিসেইবলড কোটি কোটি মানুষ রয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার এ ধরণের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে যাদের দুরবস্থার দায় সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার নিজের, এ দায় তিনি কখনোই এড়াতে পারে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে- পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যাদের শারীরিক গঠন এক কিন্তু মানসিক দিক দিয়ে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ, মানে হচ্ছে; পুরুষের খোলসে নারী এবং নারীর খোলসে পুরুষ ঢুকিয়ে দিয়েছেন এই মহান সৃষ্টিকর্তা, যাদের আমরা গে বা লেসবিয়ান বলে থাকি, আর হিজড়া বলে যাদের আমরা চিনি তাদের মধ্যে তো পুরাই জগাখিচুড়ি করেছেন এই সৃষ্টিকর্তা, একই দেহের মধ্যে দুই ধরণের (নারী এবং পুরুষের) অবয়ব, মানসিকতা ঢুকিয়ে দিয়ে সবকিছু লেজে গোবরে অবস্থা করে ফেলেছেন আমাদের মহান এই সৃষ্টিকর্তা।জন্মগতভাবে যারা ত্রুটি নিয়ে জন্মায় এবং যারা হিজড়া সম্প্রদায়; সমাজে টিকে থাকতে তাদের খুব একটা বাধার সম্মুখীন হতে হয় না কারণ তাদের শারীরিক অসঙ্গতিগুলো খালি চেখেই দেখা যায়, কিন্তু সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে যারা গে বা লেসবিয়ান তারা, বাইরে থেকে এদের দেখে বুঝার কোন উপায়'ই নেই যে এই পুরুষটি মানসিকভাবে আসলে একজন নারী বা এই নারীটি আসলে একজন পুরুষ, যে কারণে সমাজের কাছে এরা নানাভাবে হেনেস্তার শিকার হয়, বাধ্য হয়েই অনেকেই লিঙ্গান্তর করে যাদের আমরা ট্রানজেন্ডার পুরুষ বা নারী বলে থাকি, শরীফ থেকে শরীফার ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে?

শেষ কথা হচ্ছে- সৃষ্টিকর্তা এত নিখুঁত এবং অত্যন্ত উঁচুমানের একজন ডিজাইনার হওয়া সত্যেও পৃথিবীতে এত এত অসঙ্গতিপূর্ণ ডিজাইনের মানুষ কেন? সৃষ্টিকর্তা যে অনেক উঁচুমানের একজন ডিজাইনার এ বিষয়ে আমার মনে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই, তবে আমার মনে হয় মাঝে মাঝে তিনি (সৃষ্টিকর্তা) ড্রিংস করেন, তিনি যখন ড্রিংস করেন অথবা ড্রাঙ্ক থাকেন তখনই মনে হয় এসব অদ্ভুত ডিজাইনের জীব তৈরি করেন। এই পোস্টের Marieme এবং Ndeye এর ডিজাইন করার সময়ও খুব সম্ভবত তিনি ড্রাঙ্ক ছিলেন, তা না হলে তাদের এমন অদ্ভুত ডিজাইন হতো না।

সৃষ্টিকর্তার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, সে প্রত্যাশায় বিদায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৭
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×