মূহুর্তেই হাত-পা সব অবশ হয়ে এলো, মনে হলো এখুনি হয়তো মারা যাবো।
ঢাকা কি একদিন আবর্জনার স্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাবে?
দাবী একটাই ঢাকা শহরকে পরিত্যক্ত নগরী ঘোষণা করা হউক, কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে এই শহরে বসবাস সম্ভব নয় ( ঠিক যেন বাঙালীদের শহর ) এই শহরের সবাই অসুস্থ, চারিদিকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ঢাকার বিশ্রী অবস্থা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই তবুও কিছু কথা না বললেই নয়- ক্রাইমের শহর, ধুলোবালির শহর, শব্দ দূষণের শহর, যানজটের শহর, মশা-মাছির শহর, ময়লা-আবর্জনার শহর, পেশাব-পায়খানার শহর, মসজিদের শহর, আগুনের শহর এই ঢাকা শহর আজ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে! পুরো শহরটাই যেন মস্ত বড় এক ডাস্টবিন। এই শহরের প্রতিটি অলিতে গলিতে মৃত্যু যেন ওত পেতে রয়েছে; আপনি বাসা থেকে বের হবেন কিন্তু জীবিত অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারবেন কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
![:||](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_42.gif)
এত খিস্তি-খেউর করার কারণ হচ্ছে- বেইলি রোডের যে ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে ৪৬ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হলো ( আমি এটাকে হত্যাই বলবো, এটি ইচ্ছাকৃত খুন বই কিছু নয় ) তাদের মৃত্যুর সময়কার দৃশ্যপট চিন্তা করে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি, গতরাতেও ঠিক মতো ঘুমোতে পারিনি, দিনেও ঘুম হয় নি। আজ দুপুরে সবেমাত্র ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে.... হঠাৎ মনে হলো পুরো ভবন যেন থরথর করে কাঁপছে!! এই বুঝি তুরস্কের মত আরেকটি ধ্বংসযজ্ঞ ( ভূমিকম্প ) শুরু হবে..... মূহুর্তেই হাত-পা সব অবশ হয়ে এলো, মনে হলো এখুনি হয়তো মারা যাবো, একটু ধাতস্থ হতেই ভাবলাম 'এটা কি আসলেই ভূমিকম্প না আমার ঘোর?'
-এ কথা ভেবেই ফ্যানের দিকে তাকালাম যে ফ্যান দুলছে কি না?
-কিন্তু না, ফ্যান দুলছে না।
-কিন্তু তাহলে আমার এমন কেন মনে হলো?
-দৌঁড়ে গেলাম বাথরুমে, বাথরুমের বালতিতে যে পানি রাখা আছে তা নড়ছে কি না তা দেখতে।
-কিন্তু নাহ, বালতির পানিও একদম শান্ত আছে, এবার একটু আশ্বস্ত হলাম যে আসলে ভূমিকম্প হয়নি, এটা আমার মনের ভুল ছিল।
গতরাতেও ঘুমের মাঝে আঁতকে উঠেছি বেশ কয়েকবার- মানুষের চিৎকার, মনে হতো মানুষগুলো; আগুন.. আগুন.. বাঁচাও.. বাঁচাও বলে চিৎকার করছে! কেউ হয়তো বাঁচার জন্য জানালা দিয়ে লাফ দিচ্ছে, কারো গায়ে আগুন লাগার কারণে চিৎকার করতে করতে হয়তো ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে, কেউ কেউ জানালা দিয়ে বাইরে হা করে অক্সিজেন নেয়ার চেষ্টা করছে, কেউ হয়তো ফোনে প্রিয়জনের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিচ্ছে, কেউ হয়তো পানি পানি বলে চিৎকার করছে, কারো চোখের সামনেই হয়তো আপনজন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারছে না.....ইত্যাদি সব হৃদয়বিদারক দৃশ্য কিছুক্ষণ পরপর মনস্পটে ভেসে উঠতেই ঘুম থেকে আঁতকে উঠতাম, আজ রাতেও ঘুমোতে পারবো কি না ঠিক নেই।
![:(](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_15.gif)
আসলে আমার এ সমস্যার কারণ হচ্ছে- কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমি সাধারণত সে সব নিউজগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি, দুর্ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ দেখি, স্টোরিস শুনি এরপরের কয়েকদিন পর্যন্ত আমি ঠিকমত ঘুমোতে পারি না; একটু ঘুমের ঘোর শুরু হলেই আমার মাথায় ভিতর এসব মর্মান্তিক দৃশ্য চিত্রায়িত হতে থাকে এবং আমি অস্থির হয়ে যাই, যে কারণে বেইলি রোডে আগুন লাগার খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি দেশীয় সব ধরনের নিউজ দেখা বন্ধ করে দেই, যাতে এসব মর্মান্তিক ঘটনা আমাকে না শুনতে হয়, না দেখতে হয়। কিন্তু গতকাল কিভাবে যেনো আগুন রিলেটেড একটা নিউজ দেখে ফেলি আর ওটা দেখতে গিয়েই একে একে আগুনের সব নিউজ, সব ঘটনাই আমার দেখা হয়ে যায় আর তারপর থেকেই শুরু হয় আমার অস্থিরতা।
![:((](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_16.gif)
ঠিক কেন যেন 'মানুষের মৃত্যু' বিষয়টা আমার ব্রেইন ঠিকমত নিতে পারে না- মানুষকে মরতে হবে কেন? এত বছর জীবিত থেকে এত কষ্ট করে এতকিছু করে শেষ পর্যন্ত মরতে হবে কেন? মরে কি লাভ? না মরলে সমস্যা কি? মৃত্যুর সময় মানুষ কি ভাবে?..... ইত্যাদি সব বিষয় আমার মাথায় ঘুরঘুর করে, বিশেষ করে ঘুমের সময়।
![:||](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_42.gif)
বেইলি রোডের আগুনে এখন পর্যন্ত যে ৪৬ জনের মৃত্যুর হয়েছে, যার মধ্যে একই পরিবারের বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছে, প্রতিটি মৃত্যুর পিছনে রয়েছে আলাদা আলাদা স্টোরি, আলাদা আলাদা কষ্ট, তবে মৃত্যুর যে ঘটনাটি আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে তা হচ্ছে- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতালি প্রবাসীর পুরো পরিবারের এক সাথে ৫ জনের মৃত্যু!!! ভাবা যায়? মা, বাবা, সন্তান, ভাই, বোন একই পরিবারে সবাই একটি কক্ষে আটকা পরেছে, আগুনের কালো ধোঁয়া তাদের দিকে এগিয়ে আসছে.... লেলিহান আগুনে চোখের সামনে প্রিয়জন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে.... কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছে না.... উফ!! আর ভাবতে পারছি না.... ভয়ঙ্কর এ ঘটনা একেবারে সহ্যের বাইরে!! এর চেয়ে বেশি মর্মান্তিক দৃশ্য পৃথিবীতে আর কোন কিছুই হতে পারে না!! ভয়াবহ এ দৃশ্যটি যতবার আমার মনোস্পটে ভেসে উঠে ততবারই আমি অস্থির হয়ে যাই!!! ঘটনাটি বেশিক্ষণ চিন্তাই করতে পারি না।
![:(](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_15.gif)
![:-<](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_49.gif)
![:((](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_16.gif)
The last supper: All five of a family die
![:((](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_16.gif)
![:((](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_16.gif)
এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার যেন কেউ না হয় সে প্রত্যাশাই করি।
যে যেখানেই থাকুন সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।