গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর এক কনসার্ট হলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১৪৩ জন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে এবং শত শত জনকে আহত করা হয়েছে যা আমরা সবাই জানি। এ হামলার দায় স্বীকার করছে ইসলামিক সংগঠন আইএস। ইসলামি এসব সংগঠনগুলো প্রায়শই বিশ্বের নানা প্রান্তে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণ নাগরিকদের সমাবেশ স্থলে হামলা চালিয়ে থাকে। কনসার্ট হল, থিয়েটার, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, খেলাধুলার মাঠ, রাজনৈতিক সমাবেশ স্থল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি সব স্থান তাদের হামলার লক্ষবস্তু হয়ে থাকে; উদ্দেশ্য একটাই, খুব অল্প সময়ে যত বেশী সম্ভব মানুষকে হত্যা করা, তাদের এসব হামলায় টার্গেট হয়ে থাকে একেবারেই সাধারণ জনগণ। এখন কথা হচ্ছে- নির্বিচারে এসব সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এদের কি ফায়দা হয়? এরা আসলে চায় কি? সাধারণ জনগণ হত্যা করে তারা কি প্রতিষ্ঠা করতে চায়? রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ইউক্রেন দখল করতে চায় বা ইউক্রেনে রাশিয়ান মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু এসব ইসলামি দলগুলোর উদ্দেশ্য আসলে কি?
ধরি, আইএস এর সাথে পুতিনের বা রাশিয়ার ঝামেলা আছে; তাহলে তাদের হামলার লক্ষবস্তু হওয়া উচিৎ ছিল ক্রোমোলিন অথবা রাশিয়ার সরকারি বাহিনী কিন্তু তা না করে নিরপরাধ সাধারণ নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে তারা রাশিয়াকে কি বার্তা দিতে চায়? এর আগেও চেচেন মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলো বেশ কয়েকবার রাশিয়াতে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু তাতে রাশিয়ার তো কিছু হয়'ইনি উল্টো চেচনিয়াকে এখন পুরোপুরি কব্জা করে রেখেছে রাশিয়া, চেচনিয়া এখন রাশিয়ার তালেবর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
গত ৭ ই অক্টোবর ফিলিস্তিনের আরেক জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস বাহিনী ইসরাইলের এক গ্রামের কনসার্ট হলে হামলা চালিয়ে ১৩০০ জনকে হত্যা এবং শত শত জনকে জিম্মি করে; ফলশ্রুতিতে গাঁজায় আজ কি হচ্ছে তা আমরা সবাই জানি, রাশিয়া চেচনিয়াতে যা করেছিলো এখন ইসরাইলও ফিলিস্তিনে ঠিক তাই করছে, তাহলে কি চেচনিয়ার মত ফিলিস্তিনও ইসরায়েলের তালেবর রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে? প্রশ্ন হচ্ছে- রাশিয়াও যদি এখন আইএস নির্মূলের লক্ষ্যে সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকে হামলা চালায় তখন কি হবে?
নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা করেছিলো কোন এক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আর তাতে সমর্থন জানিয়েছিলো লাদেন বাহিনী, যার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকা ২০ বছর আফগানিস্তান দখল করে রেখেছিল। এসব চোরাগুপ্তা হামালা চালিয়ে ইসলামি দলগুলো আজ পর্যন্ত কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বলে শুনিনি, তাহলে এগুলো করে তারা লাভ পায় কি? এ কি শুধুই জান্নাত পাওয়ার পাঁয়তারা?
২০১৬ সালে বাংলাদেশের হলিআর্টিজোন রেঁস্তোরায় হামালা চালিয়ে এতজন বিদেশী নাগরিককে হত্যা করে তারা কি ফায়দা হাসিল করিলো? তারা কি বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করতে পেরেছে? শুধু নিজের জীবন শহীদ করা ছাড়া তাদের কোন ফায়দাই আমি দেখি না। শহীদদের বিনা হিসেবে জান্নাত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তাদের মতবাদে। যতবেশী বিধর্মী, গান-বাজনা পছন্দ করা, স্কুল কলেজে পড়ুয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষকে হত্যা করা যাবে ততবেশি জান্নাতে পুরুষ্কার পাওয়া যাইবে, জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে শর্টকাট উপায় হচ্ছে এভাবে মানুষ হত্যা করা। এভাবে মানুষ হত্যা করে দুনিয়াবি কোন লাভ তারা হাসিল করতে পেরেছে তা আমি দেখছি না, সুতরাং জান্নাত পাওয়ার লোভেই তারা এসব করছে ইহা আজ প্রমাণিত।
যুদ্ধক্ষেত্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যে সকল সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয় আর ইচ্ছে করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সমাবেশ স্থলে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা এ দুটির মধ্যে কিন্তু পার্থক্য রয়েছে, নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় ঘটনাটি কাপুরুষিত হত্যাকাণ্ড, আর হাজার বছর ধরে এসব কাপুরুষিত হত্যাকাণ্ড'ই চালিয়ে আসছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো শুধুমাত্র ওই জান্নাতের লোভেই। রাশিয়াও ইউক্রেনে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিককে হত্যা করছে, কিন্তু তাতে পুতিন বা রাশিয়াকে কেউ জঙ্গি তকমা দিচ্ছে না, বড়জোড় তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কিন্তু জঙ্গি নয়। ৭১ সালেও পাকিস্তান বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে কিন্তু উহা ছিল যুদ্ধ, জঙ্গি কার্যক্রম নয়। যুদ্ধ আর জঙ্গি কার্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যুদ্ধে দুই পক্ষের লড়াই হয় এক পক্ষ হেরে যায় অন্য পক্ষ পরাজয় বরণ করে বিজয়ী পক্ষের অধীনে চলে যায়, যুদ্ধের পক্ষে দুদলেরই থাকে নিজস্ব যুক্তি বা লজিক, কিন্তু জঙ্গিবাদে কোন লজিক থাকে না, না থাকে দুনিয়াবি কোন লাভ, জঙ্গিবাদের একটাই উদ্দেশ্য তা হচ্ছে কাপুরুষিত হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে জান্নাতে যাওয়ার লজিক, যা খুবই ভয়ঙ্কর এক লজিক ( জঙ্গি লজিক ) ।
এই ১৩৩ জনকে হত্যা করে আইএস আসলে রাশিয়াকে কি বার্তা দিতে চায় সে বিষয়টি আশা করি আমাদের ব্লগের বিজ্ঞ ইসলামি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানিতে পারিবো।
রাশিয়ার ভুল: অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়াতে বড় ধরণের জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে রাশিয়ান সরকারি বাহিনীকে সতর্ক করেছিলো আমেরিকান গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএ, কিন্তু রাশিয়া এতে পাত্তাই দেয়নি, বাধ্য হয়ে আমেরিকা রাশিয়ায় অবস্থানরত নিজ নাগরিকদের রক্ষার্থে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছিলো এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরণের সভা, সমাবেশ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। এখন দেখার বিষয় এ হামলায় কোন আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে কি না? যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে তারা সতর্কবার্তায় পাত্তা দেয়নি।
শেষ কথা হচ্ছে-' জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে কখনো ইসলামি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না' এ বিষয়টি ইসলামি সংগঠনগুলো যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই বিশ্ববাসীর মঙ্গল হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মৃত্যুর পর কি হবে তা আমরা জানি না, আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে, এই বিশ্ব জগত এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ একজন আছেন, আব্দুল কাদের জিলানী পানির উপর দিয়ে হেঁটে যেতেন, আরেক বুজুর্গ বাতাসের উপর দৌড়তেন ইত্যাদি সব বুলশিট বলে বলে কেউ যদি মস্কোর এই হামলাকে জায়েজ করার পাঁয়তারা করেন তাহলে তাকে ভেরিফায়েড জঙ্গির তকমা দেয়া হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সোর্স: Moscow attack: Day of mourning after 133 killed at Crocus City Hall concert.
Did Russia ignore US 'extremist' attacks warning?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০৩