somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্ধ দগ্ধ শরীরে এটাই ছিল আমার শেষ চাওয়া

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগুনে পোড়াকে ছিল আমার আজন্ম ভয়। পুড়তে আমি ভীষন ভয় পেতাম, তাই ম্যাচ জ্বালিয়ে পোড়া কাঠিটা পানিতে ভিজিয়ে নিশ্চিত হতাম যে ওটা নিভে গেছে।

পড়তে বসে কারেন্ট চলে গেলে ছোটবেলায় মোম জ্বালিয়ে দিতেন মা। মোম উলটে আগুন লেগে যাবে ভয়ে বইটা সরিয়ে রাখতাম দূরে। দূর থেকে আবছা আলোয় পড়তে দেখে মা বকা দিতেন- "চোখ দুটো হারাবি"... আমি ভাবতাম, চোখ হারালেও জ্যান্ত পুড়ে মরতে তো আর হবে না!

রান্না করতে গেলে গ্যাসের চুলা জ্বালাই। খুব আস্তে দিয়ে রাখি আঁচটা। বাড়াই না কখনো শিখা। গনগনে ওই কমলা বা নীল রঙের আগুনের শিখা কেমন যেন আতঙ্কিত করে রাখে আমাকে রান্নার কাজের পুরোটা সময়...

কতবার যে রাস্তায় পড়ে থাকা আধা জ্বলন্ত সিগারেটের ফিল্টার পা দিয়ে মাড়িয়ে নিভিয়ে দিয়েছি! অন্যের ফেলে যাওয়া বিড়ির আগুন নেভাতে আমার এই ব্যগ্রতা দেখে বন্ধুরা হেসেছে, ব্যঙ্গ করেছে। আমি কিচ্ছু মনে করিনি। শান্তি পেয়েছি- আগুন লাগার ন্যূনতম একটা সম্ভাবনাকেও খতম করে দিয়েছি বলে।

সেবার শীতের ট্যুরে যখন সবাই মিলে ক্যাম্প ফায়ার করা হল, আগুনে ঝলসানো বনমোরগের বারবিকিউ...কী দারুন উৎসব হচ্ছিল আগুনকে ঘিরে! এই আমি; অগ্নিভীতু রইলাম হোটেলের রুমে বসে। কেউ বুঝলনা আমার এই পাগলামির কারণ কী!

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়েছি, কোনোদিন জ্বালাইনি মরটিন কিংবা গুডনাইট।
ভয়! কয়েলের ওই এক টুকরো আগুনকেই!

আমার চামড়া আমার মাংস আমার কাছে এতটাই প্রিয় ছিল যে, কখনও রোদেও একটু পুড়তে দেইনি, হতে দেইনি একটু তামাটে/ বিবর্ণ, ম্লান। রোদ চশমা, ছাতা, সানব্লক-ক্রীমের কয়েক পরত আস্তরন ছিল আমার নিত্য সাথী।

হ্যাঁ, আমার এই দেহ আমার কাছে এতই প্রিয়। আর হ্যাঁ, আমি অনেক ভীতু। আগুনে দাউ দাউ করে কিছু জ্বলার দৃশ্য কল্পনা করতেও আমার ভয়। বার্ণ ইউনিট, অগ্নিদগ্ধ মানুষ- এই শব্দগুলো আমায় শিহরিত করে আতঙ্কে।
তাই বলে কি আমি ক্ষমা পেয়েছি? অবিশ্বাস্য আতঙ্কে সেদিন যখন ছুটে আসতে দেখেছি একটা আগুনের গোলা আমার দিকে, চারপাশটা নিমিষেই নরক হয়ে উঠেছিল যখন, অসহনীয় উত্তাপে পুড়তে শুরু করেছিল আমার প্রিয় সাদা ওড়নাটা, আমার চুল, চোখের পাঁপড়ি, আমার কাঁধে ঝোলানো নীল ব্যাগ, ব্যাগের ভেতর জমানো আমার এতদিনের গবেষনার ভীষন জরূরী সব তথ্য, ছাতা, খাতা, টুকিটাকি... আমি ছুটতে চেয়েও পারিনি। আমার পায়ের নিচেও কেবলই আগুন!! সেই আগুন, আমার চিরায়ত ফোবিয়া যাকে ঘিরে, সে এখন আমাকে আলিঙ্গন করতে এসেছে...কই! আমি তো কারো এতটুকু দয়া পাইনি...?

শুধু ফিস ফিসিয়ে আমার প্রিয় মানুষটাকে বলেছি- তোমার ক্যান্ডেল-লাইট ডিনার আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এই যে দেখো, আমি আজ থেকে মোমের আলোয় মিশে গেলাম...

বলেছি মা, তোমার বানানো কাবাব আমার অসম্ভব প্রিয় ছিল। আমার গায়ে কেন যেন আজ কাবাবের গন্ধ- স্বাদটাও বুঝি এক?

বাবা... তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল, আর বলা হলনা! ভার্সিটিতে খোঁজ নিও, জানতে পারবে!

আর কিছু ভাবিনি, অপেক্ষা করেছি পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে মিলিয়ে যাবার। ছাই হয়েই যেতে চেয়েছি... চাইনি বার্ণ ইউনিটে আরো কটা দিন অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে আর নোংরা রাজনীতির ধারক সেইসব নেতাদের নিঃশ্বাসে দূষিত বাতাসে আর একটা দিনও শ্বাস নিতে!
এই অর্ধ দগ্ধ শরীরে এটাই ছিল আমার শেষ চাওয়া...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×