somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নকল্পদ্রুম

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন ভর দুপুরে ঈশ্বর মশাই অলস বসে বসে ঝিমুচ্ছিলেন। তাঁর হাতে দেখা যাচ্ছিল রিমোট কন্ট্রোল জাতীয় কিছু জিনিস। ভিডিও গেম না কি? কে জানে! তো, একলা বসে ঈশ্বর সেই যন্ত্রের বোতামগুলো এলোমেলো টিপে খেলছিলেন আনমনে। খেলাই তো... সঙ্গীহীন-প্রতিপক্ষহীন, অনাদি-অন্তহীন অর্থহীন এক খেলা।

আসলে ঈশ্বরের হাতের সেই খেলনাগুলো ছিল মানুষের স্বপ্ন নিয়ন্ত্রন যন্ত্র। রোজ রাতে বিছানায় শুয়ে কত কী ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মানুষের দল। সুখী দলের কারো কারো ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে নরম মিষ্টি হাসি, কারো হাসিটা একটু ঝুলে বিদ্রুপাত্মক হয়ে যায়। কারো বন্ধ চোখের কোলে জমে থাকে পুকুরের মত টলটলে এক চামচ পানি। জমতে জমতে গড়িয়ে পড়ে, গড়াতে গড়াতে নদী হয়, সমুদ্রও!

তবু মানুষেরা স্বপ্ন দেখে। চোখের পাতা কাঁপিয়ে, হাতের মুঠো বন্ধ করে রাতভর দেখে যায় ভিন্ন জগতের সেই চলচ্চিত্র। নির্দিষ্ট সময় পর ফিরেও আসে সিনেমা অসমাপ্ত রেখে। কেউ কেউ মগজের কোষে করে জমিয়ে আনে একটু একটু অস্পষ্ট স্মৃতি। ঘুম ভেঙ্গে ভাবে আর অবাক হয়। স্বপ্নের গল্প শোনায় তাদের স্ত্রীদের, অফিসের সহকর্মীদের, পাড়ার বন্ধুদের, ছাত্র-ছাত্রীদের, এমনকী পোষা ময়নাটাকেও। ভীষন কৌতূহল জাগে মনে, “কেন এমন অদ্ভুত কেচ্ছা-কাহিনী দেখি ?”

সাধারনেরা ভাবে, আর গবেষকেরা করেন গবেষনা। তাঁরা হাজারো পর্যবেক্ষন করেন, জরিপ চালান, সাক্ষাতকার নেন, নানা রকম যন্ত্রপাতি বসিয়ে ধরতে চেষ্টা করেন স্বপ্নের পালসগুলো। অবশেষে হাজির করেন হাস্যকর কিছু তথ্য। “তুমি যা ভাব, তাই স্বপ্নে দেখ। তোমার অবচেতন মনের ভাবনাই ঘুমন্ত চোখের পর্দায় বন্দী হয় স্বপ্ন হয়ে”-বলে গবেষনায় ক্ষান্ত দেন তাঁরা। এই যুক্তি মেনে নেয় বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক নিরুপায় মানুষেরা।

সেই থেকে সুন্দর স্বপ্ন দেখার আশায় ভাল ভাল চিন্তা করতে চেষ্টা করে লোকজন। ঘুমুতে যাবার আগে উপাসনা, মেডিটেশন, মন্ত্রপাঠ, সুরা-কালাম, জপ-জিকির কোনো কিছুই বাদ যায়না। তবু স্বপ্নেরা আসে কিম্ভূতরূপে, দ্বিগুন ব্যাখ্যাহীন গাঁথুনি সাজিয়ে। অবশেষে হাল ছেড়ে বলে ওঠে তারা, “স্বপ্ন তো স্বপ্নই। এর কোনো অর্থ নেই, এসব নিয়ে ভাবা পাগলামি।“

আবার স্বপ্নই হয়ে ওঠে বিনোদনের একমাত্র উপাদান কারো কারো কাছে। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে স্বপ্নের দুনিয়ায় মল্লিকা, চামেলী বা মুন্নীদের সাথে বেশ নেচে নেয় মুফতে! কেউ হয়ত পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার কাছ থেকে ক্ষনিকের জন্য ছুটি নিয়ে হারিয়ে যায় বহুদিন আগে ভাল লাগা ছিপছিপে কোনো কিশোরীকে নিয়ে। অনেকে আবার পাসপোর্ট-ভিসার তোয়াক্কা না করেই হেঁটে আসে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির পাদদেশ থেকে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল স্বাপ্নিক মানুষগুলোর দিনকাল যুগ যুগ ধরে।

হ্যাঁ, শুরুতে বলছিলাম ঈশ্বরের কথা। বলছিলাম স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কথা। ব্যাপারটা হল এরকমঃ এই যন্ত্রের অগণিত বিন্যাসে সংরক্ষিত আছে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন কোড। ঈশ্বর মহাশয়ের এলোমেলো বোতামের চাপে কারো সাথে কারো কোড ম্যাচ করলেই সেই ব্যক্তি অপর ব্যক্তির স্বপ্নে উপস্থিত হয়। তারপর সেখানে তাদের মাঝে হয়তো গড়ে ওঠে সখ্যতা, নয়তো শত্রুতা!

তো, সেদিন ভরদুপুরে রাত্রির মত কালো আর গভীর মনের মায়াবী মেয়েটার স্বপ্নের জগতে ঈশ্বর হাজির করলেন অচেনা এক যুবককে। দৃশ্যপট সমুদ্রতট। হুহু বাতাসে এলো চুলে হাঁটতে থাকা একলা মেয়েটাকে সে চোরাবালি চিনালো। নোনাবালুকাতেই গজিয়ে দিল লালচে ফুলের এক ছায়ালো গাছ, ফুল ছাড়া ভাব জমবেনা, তা সে ঠিক-ই জানতো! এক হাতে তাকে ধরে সে ভাসল, ডুবল, সাঁতরে নিয়ে গেলো অই দূর দ্বীপে। বাতিঘরের উচ্চতম টাওয়ারটায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে কী যেন বলল মায়াবী-কে। তারপর নেমে এসে একটু দুষ্টুমি, ঝিরঝিরে বালি নিয়ে অযথাই ভাস্কর্য গড়ার খেলা। ভীতু মেয়েটা সারাক্ষণ আড়ষ্ট হয়েই বসে রইল যতক্ষন রহস্যময় ছেলেটি তাকে আদর করল, ভালবাসল, চমকে দিল, পাগলামি করল।

স্বপ্নটা শেষ হল সেখানেই, যেখানে শুরু হয়েছিল। চোরাবালিতে ডুবতে থাকা মেয়েটিকে টেনে তুলছিল ছেলেটা...আর পেছনে অস্ত যাচ্ছিল সূর্য।

বোতাম পালটে দিলেন ঈশ্বর। রাত-রঙের মেয়েটির স্বপ্ন থেকে হারিয়ে গেল জোনাকির মত উজ্জ্বল ছেলেটি। আধ খোলা চোখে শুয়ে অভিভূতের মত ভাবছিল স্বপ্নাবিষ্ট মেয়ে। হাতের দিকে তাকিয়ে খুঁজছিল তাতে বালি অথবা যুবকের স্পর্শ লেগে আছে আছে না কি!

সেই থেকে অপেক্ষায় রইল মেয়ে! হয়ে গেলো সে স্বপ্নাসক্ত! চলতি পথে হঠাৎ হোঁচট খেলেও অভিমান হত তার- “কেন? যে চোরাবালি থেকে উদ্ধার করতে পারে সে কি পারে না হোঁচট থেকে বাঁচাতে?” কখনো ঠিকানা খুঁজে না পেলে বকতো স্বপ্নে দেখা ছেলেকে- “কই গো? সেদিন তো খুব নিয়ে গেলে দূর সাগরের তীরে, এখন যে আমি হারিয়ে গেছি... আসবেনা?”

আমরা কি ঈশ্বরকে একটিবার অনুরোধ করতে পারি না, দুজনের কোড নম্বর মিলিয়ে তাদের এক জগতে মিলিয়ে দিতে? অন্তত একবার? স্বপ্নে অথবা বাস্তবে? না কি তিনি শুধুই এলোমেলো বোতাম টিপে যাবেন? সব-ই বুঝি নিছক খেলা?
এইসব দিন-রাত্রি, জীবনযাপন, স্বপ্ন এবং প্রেম?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×