সত্য এবং মিথ্যার মাঝামাঝি থেকে আজিজদের জীবন চালাতে হয়। অবেলায় মরে যাওয়া কোন শিশুর মতো কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘুটিয়ে যেতে হয়। সার্বজনীন ভাবে ভালো থাকাটা হয়ে উঠে না তাদের। এই নগরীর বুকে বেড়ে উঠা পাখির মতো প্রতিনিয়ত ডানা ঝাপটে যেতে হয় সুখ নামক শব্দের পিছনে।
রেল লাইনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে অনেক স্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সারাবেলা বদ্ধ ঘরে আটকে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে গেছে আজিজ নামের এই লোকটি। মুক্তির খুব কাছাকাছি এসেও নিয়ন আলোর মাঝে সে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে নিজেকে। সবুজ সিগনাল বাতিটি হঠাৎ রক্ত বর্ণ হয়ে গেলো। প্রচন্ড ভীড় তাকে আঁকড়ে ধরলো। ক্রমাগত শান্ত থেকে অশান্ত হতে লাগলো পরিবেশ। আজিজ উঠে গেলো যন্ত্র দানবের চূড়ায়। এখন কিছুটা শান্ত লাগছে নিজের কাছে। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো যান্ত্রিকতা। এগোতে লাগলো আজিজ প্রকৃতিকে ভেদ করে। বুকের গভীরে জমে থাকা নীলগুলো গভীর হতে লাগলো। বাতাসের প্রতিবন্ধকতায় উল্টেপাল্টে যাচ্ছে সবকিছু। উদ্দেশ্যহীন মিছিলে জীবনটা আটকানোর কোন ইচ্ছে ছিলো না আজিজের। মনুষ্য সৃষ্ট তান্ডব সূর্যের রংটা ক্রমশ ঘোলাটে করে ফেলেছে। অচেনা ছায়াগুলো ক্রমশ এগিয়ে আসছে যেনো। কতকাল আর টিকে থাকা যায় এই নোংরামির মধ্যে। মৃত্যু দিয়ে সবকিছুর মীমাংসা করে যেতে হবে। হ্যাঁ! মৃত্যুই পারে এই লৌকিকতা থেকে মুক্তি দিতে। পাপ পূণ্যের হিসেবে আটকে থাকার আর মানে হয় না। বিজয়ের আনন্দে কখনও উল্লাস করা না হলেও পরাজয়ের গ্লানিতে অনেকটা সময় পৈশাচিকতায় কেটেছে।
হঠাৎ করেই যান্ত্রিকতার গতি মন্থর হতে শুরু করেছে। চিন্তাগুলোও কেমন যেন স্থির হতে হতে হালকা হয়ে যাচ্ছে। তবে কি আজিজ এখন মৃত? কিছুটা সংযত হয়ে আজিজ চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো সবকিছুতেই এক অনবদ্য ভালো লাগা কাজ করছে। এই যে চারিদিকের এতো ব্যস্ততা, বেঁচে থাকার লড়াই এসব তো মৃত্যুর পর থাকার কথা না। তাহলে কি আত্নিক কোন ব্যপারে আটকা পরে গেলো সে? হ্যাঁ!! আজিজের উপলব্ধি ঠিক আছে। সে মরে গেলেও আত্না তার অতি পরিচিত প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি নিতে পারেনি। কারণ যে যেভাবেই তার চলার পথকে উপলব্ধি করেছে তার আত্নাও তাকে ঠিক সেভাবে বাঁচিয়ে রাখে।
পরিশেষে আজিজ খুব শান্ত হয়ে তার মৃত্যুকে উপভোগ করে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩