somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টান

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

★টান★

________
নুরিতার মন খারাপ। তার অনেক গুলো কারণ আছে। প্রধান কারণ হল তার স্বামী আসিফ সাত দিনের জন্য আমেরিকা গেছে একটা কনফারেন্সে। আসিফ পেশায় একজন ডাক্তার হওয়ায় তাকে প্রায়শই বিদেশ যেতে হয়। সাত দিনের দুই দিন গেছে। বিদেশে গেলে প্রতিদিন রাত নয়টায় সে স্কাইপেতে নুরিতার সাথে কথা বলে। আজ শুধু একটা মেসেজ দিয়েছে - Can't talk. আসিফের একটা সমস্যা হল সে কোন কথা বিস্তারিত বলে না। তিন বছরের সংসার জীবনে সে কোন বাক্য পুরোপুরি বলে নি। কেন কথা বলতে পারবে না? এটা মেসেজে লিখতে এক মিনিট সময় লাগত। তারপরও বলবে না। এটা যে কম ভালবাসার কারণ তা নয়। আসিফ নুরিতাকে অনেক ভালবাসে এবং তার প্রমাণও রেখেছে। গত বিবাহ বার্ষিকীটা তার জীবনে সবচেয়ে আনন্দদায়ক ঘটনা, তা আসিফের নির্বাক ভালবাসার কারণ।

নুরিতার জীবনে আসিফ দ্বিতীয় অধ্যায়। প্রথম ছিল সোহেল। সোহেল একটা পাগল টাইপের ছেলে ছিল। তার সাথে নুরিতার বিয়ে ঠিক, গায়ে হলুদের আগেরদিন হঠাত সোহেল উধাও। এরপর তাকে অনেক খোজা হয়েছে, সোহেলের ফ্যামিলি থেকে অনেক যায়গায়, অনেক পীর ফকিরের কাছে গিয়েছে। কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায় নি। কোন মেয়ের বিয়ের বর উধাও - এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে। নুরিতা শক্ত মনের মেয়ে তাই সমস্যা হয় নি। অন্য কোন মেয়ে হলে হয়তো সুইসাইড করত। এখনো নুরিতার নিঃসঙ্গতায় সোহেলের আগমন ঘটে।
একদিন সোহেল তাকে একটা কৌটায় এক হাজার জোনাকি গিফট দিয়েছিল। এত জোনাকি সে কিভাবে ধরেছে কে জানে। বিস্ময়ে নুরিতা তাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিল। আজ যদি সোহেলের সাথে তার বিয়ে হত তাহলে কি সে আরও সুখী থাকত? সুখ আপেক্ষিক। নুরিতা যদি ভাবে যে সে সুখী নয় তাহলে সে কোনদিন সুখী হতে পারবে না। নুরিতা আসলেই সুখী। সোহেলের বিষয়টা আসিফ সহজভাবে নিয়েছে। এবং সে তাকে স্বান্তনাও দিয়েছে। এটা নিয়ে আসিফ কোন দিন কোন কথা তুলে নি আর তুলবেও না।

রাত এগারোটা। বাতাস বন্ধ হয়ে গেছে। সম্ভবত বৃষ্টি হবে। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। নুরিতার ভয় লাগছে না কিন্তু অস্বস্তি লাগছে। হঠাত বাথরুমে ট্যাপ ছাড়ার শব্দ পেল। কে ট্যাপ ছাড়বে? হয়তো তার মনের ভুল। সে ফ্লাস্ক থেকে এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় বসল। শব্দ করে চা কফি খেতে নুরিতার ভাল লাগে। সোহেল চা বা কফির সাথে দুইটা সিগারেট শেষ করত। ছেলেটা চেইন স্মোকার ছিল। সিগারেটের গন্ধে নুরিতার বমি আসত তবুও সে সহ্য করত। আসিফ অবশ্য সিগারেট খাই না। কি মনে করে নুরিতার সিগারেট টানতে ইচ্ছে করছে। সে দারোয়ানকে ডেকে এক প্যাকেট সিগারেট আনতে বলল। দারোয়ান চোখ বড় করে তাকালেও কিছু বলল না।
সিগারেটে টান দিয়েই নুরিতা কাশতে লাগল। এই বিশ্রী জিনিসটা ছেলেরা খায় কিভাবে? তখনই বাথরুমের পাশ থেকে শিস দেওয়ার শব্দ শুনল। এতো সেই সুর। সোহেল প্রায় "কেন এই নিঃসঙ্গতা..কেন এই মৌনতা ....." গানের সুরে শিস দিত। নুরিতার ভয় করতে লাগল। এটা কি করে সম্ভব? ভয়ে ভয়ে নুরিতা এগিয়ে গেল।

নুরিতা আবছা আলোয় দেখল বাথরুমের বাইরে কেউ বসে আছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। নুরিতার মনে হল তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সে কি উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছে? নাতো, শুধু কফি আর সিগারেট এক টান দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
-কেমন আছ?
নুরিতার ভয়ে বুক কাঁপছে। সে বুকে হাত দিয়ে কম্পন রোধ করার চেষ্টা করছে।
-অনেক সুখে আছ, না?
নুরিতা তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করল, কে?
-এখনো চিনতে পারছ না? যাকে সবসময় ভাব, তাকে চিনতে পারছ না?
-তুমি? তুমি এখানে কিভাবে এলে?
-এটা বাদ দাও। তার থেকে বরং বলি, কোথায় কিভাবে ছিলাম।
নুরিতা চুপ। সে মেঝেতে বসে পড়ল।
-সেদিন ভাবলাম আমি শুদ্ধ না। তোমাকে বিয়ে করলে শুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাব না। তাই অজানার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
-কোথায়?
-ভারতে। সেখানে এক বাবার সান্নিধ্য পেলাম। নাম ঘুম বাবা। সবসময় ঘুমিয়ে থাকে। সেখানে বেশিদিন থাকলাম না।ভাবলাম আমি যদি শুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে আমার ভিতর থেকে 'মানুষ' হারিয়ে যাবে। আমি মানুষ থাকব না। তাই অশুদ্ধতাকে আপন করে নিলাম। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করেছি। এক সময় ভিক্ষাও করেছিলাম। হঠাত তোমার প্রতি, বাড়ির প্রতি মায়া লাগতে শুরু করল। তাই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
-আমার ঠিকানা কোথায় পেলে?
-আমি সব জানি। সব বলতে পারি। তোমার হাজবেন্ড আসিফ এবার একদিন আগে ফিরবে।আজ ফোন দেয় নি, সকালে ফোন দিবে।
-মানে কি?
-কোন মানে নাই।
-তুমি ভ্রম, আমার কল্পনা। যখন কেউ কোন বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়, হ্যালুসিনেশন হয়।
-বাহ ভালই তো জান। আর কি কি জান?
-প্লিজ, তুমি চলে যাও।
-আমি কিভাবে যাব? আমি তো হ্যালুসিনেশন, তোমার কল্পনা।
-স্টপ ইট। গেট আউট।
-চিৎকার কর না। পাশের ফ্লাটের মতিন সাহেব চলে আসবে। আর আমি বেশিক্ষণ থাকবও না। তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
-বল। বলে বিদায় হও।
-সরি। আমার সেদিন চলে যাওয়া ঠিক হয় নি। তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ, আমাকে ক্ষমা করে দাও, প্লিজ।
-তো?
-আমি এক্সিডেন্ট করেছি। পা ভেঙে গেছে। তাই দাঁড়াতে পারছি না। আমার লাশ এতক্ষণে বাড়ি পৌছে গেছে। আমি মারা গেছি।
একথা শুনে নুরিতা অজ্ঞান হয়ে গেল।

কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরল জানা নেই। সে সাথে সাথে সোহেলের বাড়ি ফোন করল। সোহেলের মা ফোন রিসিভ করে কেঁদে কেঁদে বলল, মা নুরিতা, সোহেল ফিরে এসেছে। কিন্তু সে আর কোনদিন আমাকে মা বলে ডাকবে না।.....

নুরিতার হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেল।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×