somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন খুনির ডায়েরী থেকে

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি great power comes with great responsibility তাহলে তো worst power comes with worst responsibility , তাই না? নিজের অজান্তেই এই worst responsibility টা পালন শুরু করলাম প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে স্কুলের একটি ছেলেকে দিয়ে। তা লেখার আগে আরো কিছু লেখা প্রয়োজন, তা লিখি।

ছোট থেকেই সবচেয়ে পাতলা ছিলাম। সবাই বলত, বাতাসেই নাকি আমি পড়ে যাবো। যাদের সাথে খেলতে যেতাম, তারাও এসব বলে খেপাতো। এবং আমি কিছু বললে উল্টো মারত। কোন দিন ঠোঁট পাটিয়ে দিত, কোন দিন দাঁত নড়বড়ে করে দিত। কোন দিন মাথার এক পাশে টিলা করে দিত। আমাকে ঠিক মত খেলতেও দিত না। সবাই খেলত, আর আমি বসে বসে দেখতাম।

রাতে আমার ঘুম আসতো না, চিন্তা করতে থাকতাম আমি কিভাবে খেলতে পারি। কিভাবে এদের মত শক্তিশালী হতে পারি। কিভাবে আমাকে মারার প্রতিশোধ নিতে পারি। অনেক চিন্তায় ডুবে থাকতাম। এভাবে এক সময় ঘুমিয়ে পড়তাম। রাত ঘুম না হওয়ার কারণে সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠতাম। বাবার মার খেতে হতো এ জন্য। একবার মারলে সব ফুলে থাকতো। বিকেলে খেলতে গেলে আবার তা দেখলে সবাই আবার খেপাতো।

কিভাবে যেন আমি খুব প্রতিশোধ পরায়ণ চিন্তা আমার মনের ভেতর ফুঁসলে উঠতে লাগল। ওদের শায়েস্থা করতেই হবে।

খেলতে নিত না বলে প্রায় সময়ই গল্পের বই পড়ে কাটাতাম। এক দিন ব্যাটারি , কন্ডাক্টর, এমপ্লিফায়ার এসব দিয়ে হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ শক দেওয়ার কথা জানলাম। এরপর আমি নিজে কিভাবে একটা পেতে পারি না নিয়ে চিন্তা শুরু করলাম। বিজ্ঞান বই পড়ে নিজে নিজে একটা তৈরি করে নিলাম। নিজেকে নিজে টেস্ট করতে গিয়ে বিশাল একটা শক খেয়ে বসে ছিলাম। চোখে মুখে কিছুই দেখি নি অনেকক্ষণ। কাজ করে তাহলে!

আমার থেকে বয়সে বড় হচ্ছে রবিন। SSC দিয়ে ফেল করেছে। এখন ছোট ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করে বেড়ায়। আর যাকে তাকে উত্তেক্ত করে বেড়ায়। তার বাবার টাকা আছে বলে কেউ কিছু বলে না। আমাকে দেখলেই মাথায় একটা ঠোকা দিয়ে বলব কিরে, কি অবস্থা? ও বুঝতে চায় না যে আমি অনেক ব্যাথা পাই। কিছু বললে আরো বেশি মারে।

সকাল বা বিকেল বেলায় রবিনের কাজ হচ্ছে স্কুলে যাওয়া মেয়েদের উত্তেক্ত করে বেড়ানো। ছোট ছেলেরাও রেহাই পেত না। মেয়েদের আজে বাজে কথা বলত। ঐ দিন একটি মেয়ে এর প্রতিবাদ করায় তার গায়ে হাত তুলেছে। দূর থেকে আমি দেখে কিছুই করতে পারি নি। চিন্তা করতে লাগলাম আমার পর্যাপ্ত শক্তি থাকলে আমি রবিনের নাক ফাটিয়ে দিতাম। কিন্তু, আমার সেই শক্তি ছিল না।

আমার এক দূর সম্পর্কের ফুফু আত্মহত্যা করেছে। তাদের বাসা থেকে স্কুলে যেতে নিষেধ করছিল। বলছিল মেয়েদের বেশি পড়ার দরকার নেই। ঐ ফুফুটি পড়তে ছেয়েছে। একদিন স্কুলে যেতে এমন একটি ছেলে বিরক্ত করেছিল। ঐদিন স্কুলে না গিয়ে বাড়ি ফিরে আসছিল ফুফুটি। এরপর বাড়িতে সবাই আজে বাজে কথা ছড়াতে লাগল। ফুফুটিকে অনেক বকাঝকা কর। সকালে উঠে সবাই দেখে ফুফুটি গলায় ফাঁস দিয়ে মরে আছে।

ফুফুর কথা মনে পড়ল আমার। এরপর ঐ দিন রাতে আমি আবার ঘুমাতে পারি নি। চিন্তা করলাম কিভাবে রবিনকে ধরে শায়েস্থা করা যায়।

ইলেকট্রিক শকের কথা মনে পড়ল। কিন্তু এ ভোল্টেজে শুধু মাত্র একটা শক খাবে। তাছাড়া রবিন আমার থেকে অনেক বড়। শক কম ও খেতে পারে। আমি ভোল্টেজ তিন গুন বাড়ানোর চিন্তা করলাম। এরপর মোবাইলের পুরাতন ব্যাটারি আরো দুইটা যোগাড় করলাম। পুরাতন ব্যাটারি হলেও যথেষ্ঠ শক্তিশালি। আমি বাতি জ্বালিয়ে দেখলাম বাজারের নতুন পেন্সিল ব্যাটারি থেকে এই পুরাতন মোবাইলের ব্যাটারি গুলো একবার চার্জ করে নিলে ভালো কাজ করে। তিনটা ব্যাটারি এবং এগুলোকে ৩০০০ গুন এমপ্লিফাই করিয়ে নিলাম। দুই তিন সেকেন্ড শক দেওয়া যাবে। এক সেকেন্ড শক দিতে পারলেই রবিন কাবু হয়ে যাওয়ার কথা।

রবিনকে শক দেওয়ার সময় রাতে ঠিক করে নিলাম। আগে থেকেই জানতাম রবিন সন্ধায়র পর কোথায় থাকে। আমি দূর থেকে ফলো করতে লাগলাম। অনেক রাতে সে বাড়ি ফিরে। আমিও আজ দেরি করে বাড়ি ফিরব বলে ঠিক করে নিলাম। আমি জানি দেরি করে ফিরলে আমাকে আবার আমার আব্বা মারবে। তারপর ও আজ দেরি করেই ফিরব। একটা কিছু করতেই হবে।

রাত বাড়তে লাগল, সবাই যার যার বাড়ি ফিরল। আড্ডার দোকান গুলো বন্ধ হয়ে গেলো। রবিন বাড়ির দিকে ফিরল। বাড়ি মোটামুটি দূর। পথে একটা মাঠ পড়ে। দুই পাশে পানি। মাঝে রাস্তা। রবিনের হাতে লাইট রয়েছে। আমাকে দেখে বলল কিরে, এত রাতে কোথায় ছিলি? বলেই দিল একটি থাপ্পড় আমার পিঠে। আমার রাগ বেড়ে গেলো। বললাম দোকানে আসছি। এখন বাড়ি যাবো। আপনাকে দেখে আপনার সাথে যেতে এসেছি। চারদিকে অন্ধকার। আর কেউ আছে কিনা আমি দেখে নিলাম। নাহ, আর কেউ নেই। রবিন একবার লাইট অন করে সব দেখে আবার বন্ধ করে। আমার ভয় লাগা শুরু হলো।

সাথে অনেক কিছুর কথা মনে পড়ল। সকল প্রতিশোধ এর কথা। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে এত চুপচাপ কেন? আমি বললাম কিছু না। এবার কিছু একটা করতেই হবে চিন্তা করলাম। লাইট বন্ধ করার সাথে সাথে আমি রবিনের ঘাড় বরাবর শক দিলাম। এক চিৎকার করে সে মাটিতে পড়ে গেলো। মাটিতে পড়ে চটপট করতে লাগল। বাড়ি থেকে আসার সময় বেল্ট এর নিচে করে গরু জবাই করার একটা চুরি নিয়ে এসেছি। কম ধারালো। এগুলোতে শুধু মাত্র ঈদের আগের দিনই ধার দেওয়া হয়। চুরিটা বের করে আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে রবিনের গলায় ঢুকিয়ে দিলাম।

এক সময় চটপট বন্ধ হলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। চলে আসতে যাবো, তখন মনে হলো চুরিটা কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে। আমি তার গলা থেকে চুরিটা খুলে পানিতে ফেললাম। এরপর বাড়ির দিকে ফিরলাম।

অনেক দিন পর সব কিছুর প্রতিশোধ নিতে পারার কারণে অনেক খুশি খুশি লাগছে। বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে আব্বা জিজ্ঞেস করল কোথায় ছিলি, আমি বললাম দোকানের দিকে। এরপর আমাকে মারতে লাগলো। পড়ালেখা রেখে দোকানে আড্ডা হচ্ছে? শুধু ঐ দিন আমি আব্বার হাতের মারে ব্যাথা পাই নি। উল্টো ভালো লেগেছিল।

আমার এখনো মনে পড়ে, ঐ দিন রাতে আমার সুন্দর একটা গুম হয়েছিল। আহ!

ঐ খুনটা করার পর অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে আমার। খেলাধুলা করা ছেড়ে দিয়েছি। আগে কারো সাথে মিশতে চেষ্টা করতাম। এরপর থেকে মেশা ছেড়ে দিয়েছি। পড়ালেখা করতে ভাল লাগত না, একা একা তাই করতাম। এতে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। অনেক কিছু। এরপর বিভিন্ন কারণে অনেক গুলো খুন করতে হয়েছে। তবে ঐ রবিনকে মারার মত মজা কোথাও পাই নি। অন্য কোন দিন সে সম্পর্কে লিখব। আজ ঘুমাবো। রবিনকে খুন করার রাতের মত ঘুম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×