somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসি তাই …

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐ দিন তারিন আমাকে ডাকল। শেষ দেখা হয়েছিল তার বিয়ের দিন। ওর বিয়েতে যেতে কষ্ট হয়েছিল। তারপর ও গিয়েছি। ক্লাসমেটেরা সবাই ছিল। ছিল পরিচিত অনেকেই। না গেলে সবাই খারাপ বলত। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও গিয়েছি।

আমি তারিনের বন্ধু ছিলাম। আর তারিন ছিল আমার স্বপ্ন। নিজের স্বপ্নের কথা কোন দিন ও তারিনকে জানাই নি। বন্ধুর মত অভিনয় করে গিয়েছি। এর এক সময় স্বপ্নের কথা বলব বলে ঠিক ও করেছি। কিন্তু তখন ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল।

আমি পছন্দ করতাম তারিন কে। আর তারিন ভালবাসত স্বপ্নিল কে। আসলে তারা দুই জন দুই জনকেই ভালোবাসত। তারিন তাদের গল্প আমার কাছে এসে বলত। আমি শুনতাম। প্রচণ্ড হিংসে হতো। তারপর ও বন্ধুর মত শুনে যেতাম। বন্ধুর মত।

তারা বিয়ে শাদী করে সংসার শুরু করল। আর আমি চলে যাই ডক্টরেট করতে। রোবট নিয়ে পড়তে পড়তে ততদিনে আমি নিজেও রোবট হয়ে গিয়েছিলাম। মানব অনুভূতি গুলো লোপ পাচ্ছিল। সহ কর্মী একটা মেয়ে তা ফিরিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছিল। মেয়েটি অনেক সময় দিচ্ছিল আমাকে। রিসার্সের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করত। আমি আমার দেশের গল্প করতাম। ছোটবেলার গল্প বলতাম। বেড়ে উঠার গল্প বলতাম। জেনি নামের মেয়েটি বলত তার গল্প। এক জন সহকর্মীর মতই। এর বেশি কিছু না।

জেনি আমাকে মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যেতো। উৎসাহ না থাকা সত্ত্বেও যেতাম। অ্যামেরিকায় সাধারণত ছেলেরা মেয়েদের প্রপোজ করে। হঠাৎ করে একদিন জেনি আমাকে প্রপোজ করে বসল। আমি অবাক হলাম। আমি বললাম, জেনি এভাবে হয় না। অনেক কিছু বুঝানোর চেষ্টা করলাম ঐ দিন। বুঝে নি। চোখে এত গুলো পানি নিয়ে বাসায় ফিরে গেলো। পরের দিন আর ল্যাবে আসে নি। পরে দিন ও না। এর পরের দিন ও না। আমি ফোন করি, ফোন রিসিভ করে না। একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। চিন্তা করলাম এবার একটু বাসায় গিয়ে খবর নেওয়া যাক।

জেনিদের বাসায় ঐ দিনই প্রথম যাওয়া। গিয়ে দেখি ও অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে। আমার সাথে কথা বলবে না। আমি জোর করে ওকে নিয়ে বের হলাম। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। মুখ ভার হয়ে ছিল। কোন কথার উত্তর দিচ্ছিল না। আমি ওর মুড ঠিক করার জন্য বললাম চল বিয়ে করি। আমার দিকে তাকালো। সত্যি? আমি বললাম হ্যাঁ, সত্যি। ও চেয়ার ছেড়ে লাপ দিয়ে এসে আমার উপর ঝাফিপে পড়ল। এত জোরে জড়িয়ে ধরল যে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। রেস্টুরেন্টের অন্যান্য মানুষ তাকিয়ে রইলো। জেনি যখন চিৎকার করে বলল i love you, তখন অন্য সবাই তালি দেওয়া শুরু করলো।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া ছাড়াই বের হয়ে আসলাম আমরা। ঐ দিনই জেনিকে বিয়ে করলাম। নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিয়ের পর সবই ঠিক মত চলছিল। আমাদের কিউট একটি মেয়েও হয়েছিল। তিন জনের সংসার। খুব সুন্দর ভাবে কাটছিল।
এরপর এক সময় থিসিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। খাওয়া দাওয়া, ঘুম, ফ্যামিলিতে সময় দেওয়া সহ সব কিছুইতে অনিয়মিত হয়ে পড়লাম। জেনির সাথে দুই একবার কথা কাটা কাটি ও হতে লাগল।

একদিন জেনি আমাকে বোর, ডাল আরো কত কিছু বলে ছেড়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় মেয়েটিকেও নিয়ে গেলো। আমি বললাম অন্তত মেয়েটিকে রেখে যাও। সে হেনাকেও রেখে যায় নি। কষ্ট পেতে মনে হয় অব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম রাত ঘুমুতে পারি নি। দ্বিতীয় রাত থেকে ঠিকই আবার কাজে মনোযোগ দিয়েছিলাম। তৃতীয় রাতে জেনি এসে হেনাকে দিয়ে গেলো। হেনা নাকি কান্না করছিল শুধু। মেয়েটি আমাকে দেখে শান্ত হলো।

থিসিস জমা দিয়ে দেশে ফিরলাম। তারিন জানতে পেরে ডাকল। তাই দেখা করতে আসা।
তারিন অনেক দিন পর দেখা হওয়ার পর অনেক কিছুই বলল। বলত তারা ভালো নেই। তাদের সম্পর্ক ভালো নেই। অথচ এই স্বপ্নিল তাকে অনেক ভালোবাসার কথা বলত। তাকে স্বপ্ন দেখাতো সুন্দর একটা পৃথিবীর, সারাজীবন আগলে রাখবে বলত। সারাজীবন এক সাথে কাটিয়ে দিবে বলত। কিন্তু তার ব্যবহার আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে যখন ডাক্তার বলে তারিন কখনো মা হতে পারবে না।

অনেক দিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে সব বলল। বলার সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি টিস্যু এগিয়ে দিলাম। চোখ মুছল। মুছে আমার কথা জিজ্ঞেস করল। আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করল। উত্তর দিলাম ভালো আছি। অনেক ভালো। অনেক দূরে তকালাম। কাছের সব কিছু কেমন ঝাপসা লাগছিল।

অ্যামেরিকা ফিরে যাওয়ার আগে তারিনের সাথে দেখা করতে গেলাম। সাথে ছিল হেনা। তারিন হেনাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। অনেক কথা বললাম। ফ্লাইটের সময় হচ্ছিল। স্বপ্নিলকে বললাম আমি ফিরে যাচ্ছি। হেনাকে তোমাদের কাছে রেখে যাই। তারিন লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করল সত্যি? আমি উত্তর দিতে পারি নি।

টিক টিক করে সময় যাচ্ছে। আমি বের হলাম। তারিন এগিয়ে দিল। স্বপ্নিল হেনাকে কোলে করে আরেকটি রুমে গেলো। যে রুমে বাচ্চাদের অনেক গুলো খেলনা। তারিনের চোখে আজ ও পানি। বলতে ইচ্ছে করছিল, কান্না করিস না পাগলি, আমার মেয়েটিকে ভালো রাখিস। বলি নি। বলতে পারি নি। হাঁটা দিলাম।

কিছু দূর গিয়ে পেছনে ফিরলাম, জানালা দিয়ে দেখলাম হেনা এদিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছল ছল করছে। স্বপ্নিল অনেক গুলো খেলনা নিয়ে তাকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকার বলে আর আমাকে কেউ দেখছে না। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। অন্ধকার বলে তা আর লুকাতে হয় নি। কেমন এক ধরনের কষ্ট লাগছিল। আবার সুখ ও। মনে হচ্ছিল রোবটের সাথে থেকে এখনো রোবট হয়ে যাই নি। মানুষই রয়েছি। কারণ রোবটের চোখ দিয়ে কখনো পানি বের হয় না, হবে না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×