somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেশবদের জন্য শুভ কামনা

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলফামারীর দরিদ্রপীড়িত কেশব; অভাবের তাড়নার স্কুল ছেড়ে ভাঙারীর দোকানে কাজ করতে হয়। এরই মাঝে তার কপালে জোটে.......
জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশন’!
এরপর কেশবের ভাগ্য হয়তো পাল্টে যাবে...। পড়াশুনায় মনোযোগী হলে এগিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে কেশবকে।

কিন্তু হাজারো কেশব রয়েছে বাংলাদেশে। যাদের অমিত সম্ভাবনা হারিয়ে গেছে কালের অতল গহবরে.... তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই..। তারপরও কেশবরা এগিয়ে যাক.। জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক.। অভিনন্দন তোমাকে কেশব.......


ভাঙারির দোকান থেকে বিশ্ব আসরেঃ
স্কুলের নাম বিন্যাকুড়ি বিসি সরকারি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় এই স্কুল। সকালবেলা সার বেঁধে যে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যায়, কেশব রায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। বাবা অজিন্দ্র বর্মণ দিনমজুর, মা রঞ্জিতা রায় গৃহিণী। এলাকার শিশু সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন কেশব, নাটক-গানে নিয়মিতই অংশ নিতেন। অভাবের সংসার, তবু ভালোই কাটছিল দিন।
হুট করেই বাবা অসুস্থ হলেন। চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। ছোট ভাই রঞ্জিত রায়সহ চারজনের সংসারে ভাত জোটানোই কঠিন। কেশব বাবার বড় ছেলে। ক্লাস সিক্স পেরোনো ছোট মানুষটাকেই তাই নিতে হলো বড় দায়িত্ব। সহপাঠী বন্ধুরা যখন ক্লাস সেভেনের নতুন বই-খাতা কাঁধে নিয়ে স্কুলে যেতে শুরু করল, কেশবের কাজ শুরু হলো ভাঙারির দোকানে। মাসে ৩০০ টাকা মজুরি। স্কুলের পাশেই দোকান। স্কুল শুরু আর ছুটির সময় দোকানের দরজা বন্ধ রাখতেন কেশব; বন্ধুদের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যাওয়ার ভয়ে, লজ্জায়!
নীলফামারীর কেশব রায় তখনো জানতেন না, একদিন বিশ্বজোড়া নাম হবে তাঁর। যে মানুষটার ‘এডুকেশনের’ পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তিনিই পাবেন জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশন’!

ইয়ুথ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশনের জন্য সারা বিশ্ব থেকে সাতজনকে বাছাই করেছিল জাতিসংঘ। তাঁদের মধ্যে একজন আমাদের কেশব রায়। কেমন করে কেশব এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন, জানতে আমরা চোখ বোলাই কেশবের কাছে জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের লেখা চিঠিতে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিটি ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে তুমি অবদান রেখেছ। এর স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা তোমাকে তরুণদের জন্য অনুসরণীয় একজন নেতা হিসেবে মনোনীত করেছি। তোমাকে অভিনন্দন।’

কেশব এখন জলঢাকা বিএমআই কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্ল্যান বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি এসেছিলেন সাভারের বিসিডিএম (ব্র্যাক সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) কার্যালয়ে। ভাঙারির দোকান থেকে জাতিসংঘের পুরস্কার অবধি পুরো গল্পটা শুনতে আমরা হাজির হই সেখানে। লাজুক লাজুক মুখ করে এক সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণ আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান। দেখলে বিশ্বাসই হতে চায় না, এই মানুষটা প্রায় ২৫টি বাল্যবিবাহ রোধ আর ৫০টি ঝরে পড়া শিশুকে স্কুলমুখী করতে অবদান রেখেছেন।



জলঢাকার শিশুদের কেশবদা

‘ভাঙারির দোকানে কাজ করছিলাম এক বছর। বাবার শরীরটা একটু ভালো হওয়ার পর আমাদের শিশু সংগঠনের সভাপতি কাঞ্চন রায়কে বললাম, “আপনি বাবা-মারে একটু বোঝান, আমি আবার স্কুলে যাইতে চাই।” কাঞ্চনদা কথা বললেন। বাবা মা-রাজি হইল। শেষ মাসের বেতন পেয়ে ১৫০ টাকা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হইলাম, আর ১৫০ টাকা দিয়ে বই-খাতা কিনলাম।’ বলছিলেন কেশব। শুরু হলো আবার কেশবের স্কুলজীবন। প্ল্যান বাংলাদেশের জলঢাকা উপজেলার শিশুদলের সঙ্গে কেশব নিয়মিত কাজ করতে শুরু করলেন। শিশু অধিকার, শিশুবিবাহ বন্ধ, স্যানিটেশন, গর্ভবতী মায়েদের সেবা, ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন। হয়ে উঠলেন জলঢাকা উপজেলা ও রংধনু শিশু ফোরামের সভাপতি। এলাকার বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করলেন কেশব। পাশাপাশি চলল বাল্যবিবাহ বন্ধের তৎপরতা।

গল্পের এক ফাঁকে কেশব বললেন মনুফার ঘটনা: ‘২০১২ সালের কথা। এলাকার স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ত মনুফা। আমাদের শিশুদলের সদস্য জুলেখা আক্তার আইসা জানাইল, মনুফার নাকি বিয়ে। আমরা ভাবলাম, একটা কিছু করা দরকার। কয়েকজন মিলে গেলাম মনুফার বাবা আবদুল মান্নান চাচার কাছে। তিনি খুব রাগ হইলেন। আমরা বোঝাইলাম। অল্প বয়সে মা হওয়ার ঝুঁকির কথা বললাম, পড়ালেখার প্রয়োজন বোঝাইলাম। চাচা কিছুতেই মানেন না। শেষে আমরা গ্রাম উন্নয়ন কমিটির মেম্বার আর আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে মনুফার বাবার সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁরা বোঝাইলেন, আইনের কথা বললেন। শেষে চাচা বুঝলেন। মনুফা এখন দশম শ্রেণীতে পড়ে, ভালো ছাত্রী সে। আমারে প্রায়ই বলে, “দাদা, আপনার জন্যই পড়ালেখাটা করতে পারতেছি।”’ এ রকম আরও কত ঘটনা কেশবের ভান্ডারে!

প্রদেশ চন্দ্র রায় ক্লাস ফাইভে পড়ে। হঠাৎ করেই একদিন বাবা পাগালু চন্দ্র রায় তার পড়ালেখা বন্ধ করে কাজে লাগিয়ে দিলেন। খবর পেয়ে কেশব গেলেন পাগালু চন্দ্র রায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বললেন, ‘আপনি কি চান বড় হয়ে আপনার ছেলে আপনার মতো ভ্যানচালক হোক?’ প্রদেশ চন্দ্রের বাবা মাথা নাড়েন, তিনি চান না। কিন্তু তাঁর কোনো উপায়ও নেই, একার আয়ে সংসার চলে না।

কেশব ব্যাপারটা বুঝলেন। কিন্তু প্রদেশ চন্দ্রের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, সেটাও মানতে পারছিলেন না। ছোট্ট ছেলেটার ভেতরে যে কষ্ট-লজ্জা কাজ করছিল, সেটা কেশবের চেয়ে ভালো কে জানে! বুদ্ধি করে কেশব প্রদেশ চন্দ্রকে সিএমইএসে (সেন্টার ফর ম্যাস এডুকেশন ইন সায়েন্স) ভর্তি করে দিলেন। দরজির কাজের পাশাপাশি এখন চলছে প্রদেশ চন্দ্রের পড়ালেখা। প্রদেশ খুশি, বাবা পাগালু চন্দ্রও খুশি!


Untitled-11প্রথম দিকে মানুষের কটু কথা, বকাঝকা শুনতে হলেও এখন বেশ সচেতন হয়েছে জলঢাকা উপজেলার মানুষ। কেশব বলছিলেন, ‘আগে সমস্যা হইত। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে গেলে মেয়ের বাবা-মায়েরা বলত, “তুই বিয়ে বন্ধ করতে আসছিস, পরে কি তুই বিয়ের ব্যবস্থা করবি?” এখন এলাকার লোকজন সাহায্য করে। বোঝে, আমরা ভালো কাজ করি।’
সম্মাননা গ্রহণ করতে নিউইয়র্ক যাওয়া হয়নি কেশবের। তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি। তবে এরই মধ্যে বিলেত ভ্রমণ হয়ে গেছে তাঁর। শ্রীলঙ্কায় ‘শিশুর সুরক্ষায় শিশুদের অংশগ্রহণ’ বিষয়ক সেমিনার ও সমাবেশে, আর থাইল্যান্ডের শিশু সম্মেলনে প্ল্যানের পক্ষ থেকে অংশ নিয়েছেন কেশব।
পড়ালেখা চলছে, সামাজিক কর্মকাণ্ডও চলছে নিয়মিত। তাই বলে ভাববেন না, রাতারাতি কেশবদের দিন বদলে গেছে। দিনমজুরের ছেলে, লাজুক তরুণটি কথায় কথায় জানালেন, ‘আমি পড়ালেখার পাশাপাশি কাজও করি। কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে ঘরের খুব ক্ষতি হইল। বাবার টাকা দরকার। আমি গেছি বগুড়া, ছোট ভাই গেছে চট্টগ্রামে। দুজন সেইখানে খেতখামারে কাজ করছি। আমি ছয় হাজার, আর ছোট ভাই চার হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছি। বাবার হাতে তুলে দিছি। বাবা-মায়ের কষ্টটা বুঝি। ওই দিকটাও তো দেখতে হবে।’


তথ্যসূত্রঃ
Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×