গত ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগ-শিবির-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত গণিত চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ফারুক হোসেনের বাবা মায়ের বুঝতে বড় বিলম্ব হয়ে গেল। শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে কিভাবে সরকার তাদের ছেলের লাশ ব্যবহার করলো সেটা তারা হয়তো শোকের সেই সময় টের পায়নি, এখন যখন পেলেন তখন সময় অনেক গড়িয়ে গিয়েছে।
দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে লাশের রাজনীতির শিকার জয়পুরহাটের সগুনা গ্রামের ফারুক হোসেন। প্রচার করা হয় ফারুক ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। কিন্তু বাবা-মা স্থানীয় লীগ নেতাদের চাপে সেসময় হ্যা সুচক জবাব দিয়েছিল। তাঁর দরিদ্র বাবা ফজলুর রহমান কোনো রকম ক্বষি কাজ করে সংসার চালান এবং ছেলে ফারুকের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শিক্ষাঋণও নিয়েছিলেন। ফারুক হত্যার পরে সরকারী দলের এক বিশাল নেতা ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু আশ্বাস এখন দীর্ঘশ্বাসে পরিনিত হয়েছে।
বাবা-মায়ের আশা ছিল ফারুককে ঘিরে যে সে পড়া শেষ করে পুরো পরিবারের হাল ধরবে। সেজন্য প্রায় সময় বাবা-মা তাকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলতো। সেইমতে ফারুক রাজনীতি থেকে বরাবরই দূরে ছিল বলে তার মা জানালো। যেদিন সে লাশ হলো সেদিন ৮ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায়ও ফারুক ফোনে মা হাছনা বানুকে ফোন করেছিল এবং মাকে ভবিষ্যতের সোনালী দিনের স্বপ্নও শুনিয়েছিল। কিন্তু সরকারী দলের লাশের রাজনীতির বলি হয়ে ফারুক লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে। ফারুকের বাবা বলছিল শত শত পুলিশের সামনে সরকারের সাহায্য ছাড়া ফারুককে হত্যা করা এবং সেটা টেনে নিয়ে ম্যানহোলে ফেলা কিছুতে সম্ভব না। কিছুদিন আগে ফারুকের বাবা রাজশাহী গিয়েছিল মামলার খবর নিতে। বলা হয়েছে ফারুকের হত্যাকারীকে ধরা হচ্ছে। আসলে ফারুকের হত্যাকারীকে নয় সরকার রাবিকে নিজের পকেটে রাখতে সবাইকে গ্রেফতার করছে আর মামলাকে করছে হাল্কা। অপরাধী না ধরে হয়রানীমুলক গ্রেফতারের কারনে সবাই জামিনে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। শুধুমাত্র কতিপয় জামাত-শিবির নেতাকে ভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে রাখা হয়েছে।
আর ফারুক হত্যা মামলার সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এই মামলার তদন্ত শুরু হলে প্রচুর পুলিশ ধরা খাবে। সেজন্যেই পুলিশ বারবার এই মামলা নিয়ে লুকোচুরী খেলছ।
ব্লগে ফারুকের জন্য কতশত মায়াকান্না দেখলাম। অথচ কেউ ফারুকের বাবা-মায়ের খবর নিতে সময় পান না। পুত্রশোকে আজো ফারুকের আম্মা ঢুঁকরে কেঁদে উঠেন আর বাবা বিচারের আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এভাবেই ফারুক হোসেনের মত নীরিহ ছাত্ররা যুগে যুগে ক্যাম্পাস দখলের হাতিয়ার হিসেবে দুনিয়া ত্যাগ করে আর তাদের লাশের উপর ভর করে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায় ক্ষমতাসীনরা।
ডাঃ ভাইদের একটা প্রশ্ন- রগ কাটলে কতদিনে সুস্থ হওয়া যায় এবং পায়ের রগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মানুষ বাচে কিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫২