somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীর অতীত ঃ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান

০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীন বাংলা’ চেক পোস্ট খুলে নির্যাতন চালাত কামারুজ্জামান বাহিনী
তরিকুল ইসলাম সুমন:


স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তার নেতৃত্বে ওই সময় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সীমান্ত এলাকায় ‘স্বাধীন বাংলা’ নামে একটি চেক পোস্ট খোলা হয়। এ চেকপোস্ট দিয়ে যারা ঢুকতেন তাদের নির্যাতন ও হত্যা করত কামার"জ্জামানের বাহিনী। ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের পাক বাহিনীর প্রধান সুলতান মাহমুদের মনোরঞ্জন ও তার নির্দেশে স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করত এই বাহিনী। ¯'স্থানীয় মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলে ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রকাশিত নানা বই থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কামারুজ্জামান বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল মোমেনশাহী (ময়মনসিংহ) জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়। এ সংঘের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহম্মদ কামারুজ্জামান। পরীক্ষামূলকভাবে পুরো ময়মনসিংহ জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হত। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল, সমাবেশ এবং সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক মুহাম্মদ কামার"জ্জামান। শেরপুর থানার বাজিতথিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়ার কৃষক পরিবারের সন্তান মুহাম্মদ কামার"জ্জামান। ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র শিবির করা হয়। প্রথম কমিটিতেই তিনি সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা জিয়াউল হক জানান, একাত্তরের ২২ আগস্ট বিকাল পাঁচটায় কামাড়িচরের নিজ বাড়ি থেকে আলবদরের নির্যাতন সেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি কামার"জ্জামানকে দেখেছেন। একই সেলে শেরপুর কলেজের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে ধরে নিয়ে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে শরীরে চুন মেখে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে পুরো শেরপুর শহরে ঘুরিয়েছিলেন।

শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারন সম্পাদক মোশারফ হোসেন তালুকদার জানান, তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফাকে একাত্তরের ২৪ আগষ্ট কামার"জ্জামানের আলবদর বাহিনী রাস্তা থেকে প্রথমে ধরে নিয়ে যায় শহরের সুরেন্দ্র মোহনের (আলবদর বাহিনীর টর্চার ক্যাম্প) বাড়িতে। সেখানে দিনব্যাপি হাতে পায়ের রগ কেটে রাত আটটার দিকে শেরী ব্রীজ এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া কামার"জ্জামানের নির্দেশেই ওই সময় ¯'স্থানীয় জি.কে স্কুলের ছাত্র ও কৃতি ফুটবল খেলোয়াড় কাজল এবং কায়ছারকেও হত্যা করা হয় বলে তিনি জানান।

শেরপুরের বহুল আলোচিত আত্মস্বীকৃত রাজাকার মোহন মুন্সি (মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামানের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত) সম্প্রতি স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, জীবন বাঁচাতে তিনি এসব কাজ করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি কামারুজ্জামানের বিচার দাবী করে মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীরদের বিচার চেয়ে হয় বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের সহযোগি আব্দুল বারীর একটি রোজনামচা থেকে পাকিস্তানি ক্যম্পে জোর করে পাঠানো নারী ও মুক্তিকামী মানুষ হত্যার বিবরণ জানা গেছে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, একাত্তরে তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। ¯'ানীয় জামায়েত নেতাদের দাবি, কামারুজ্জামান নয় কামরান নামে এক রাজাকারের ভুত কামারুজ্জামানের ঘাড়ে এসে ভর করেছে। বর্তমানে ওই রাজাকার কামরান বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। তবে এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছাত্র সংগঠক আমজাদ হোসেন জানান, আলবদর কামরানের কথা বলে কামার"জ্জামানের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কামারুজ্জামানের হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে শেরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল ওয়াদুদ ওদু জানান, শুধু শেরপুরেই নয় তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় গণহত্যা, লুট, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং পাকবাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে কামারুজ্জামানের বাহিনী। এছাড়া সদর উপজেলার সূর্যদী, নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর, ঝিনাইগাতি উপজেলার জগৎপুরসহ অসংখ্য স্থানে গণহত্যা ও লুটতরাজের মূল নায়ক ছিলেন এ কামারুজ্জামান।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পরে কামারুজ্জামান অনেকদিন পালিয়ে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও পরে জানা গিয়েছিল। তিনি সিলেটের হযরত শাহজালাল (রা.) এর দরবারে ছিলেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×