somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ যে কথা আর কখনো বলা হবে না।

৩০ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি আমার পাশের চেয়ারেই বসেছিল পুরোটা সময়। তার পরনে ছিল লাল কামিজ আর কালো রঙের সালোয়ার। বাম হাতে ছিল চমৎকার একটা ঘড়ি আর চোখে ছিল সোনালী ফ্রেমের চশমা। প্রতিটা গানের শুরুতে সে হাততালি দিচ্ছিল।

আমি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখলাম।
তারপর আরেকবার।
তারপর আরেকবার- দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

এইবার মেয়ের হাতে ধরা পড়ে গেলাম। আমার বুক ধড়ফড় করে উঠলো, কপালের দু পাশে শিড় শিড় করে উঠলো। প্রচন্ড গরম লাগতে লাগলো। পানির পিপাসা পেল খুব। কিছুক্ষনের মধ্যে আমি ঘেমে গেলাম।
মেয়েটার দিকে আমি আর তাকাতে পারলাম না।

আমি খুব ভীতু ছেলে। সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে সেকেন্ড গার্ল পারভীন আমাকে বলেছিল- ” তুই একটা ভীতুর ডিম”। তার গোলাপ ফুলটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম- আম্মু বকবে বলে। সেই থেকে আমি জানি আমি খুব ভীতু। আমি সেটা মেনে নিয়েছি।

আমার খুব ইচ্ছে করছিল মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকাই। তার নাম জিজ্ঞেস করি।
কোথা থেকে এসেছে?
কোথায় পড়ে?
অনুষ্ঠানের গান ভাল লাগছে কি না?
তার হাতে একটা পানির বোতল। আমি কি একবার পানি খেতে চাইবো?
না থাক- মেয়েটা আবার কি মনে করে?
মেয়েটার মোবাইল বেজে উঠেছে। কে যেন তাকে কল করেছে। এই শব্দে সে কিভাবে ফোনের ওপাশের কথাগুলো শুনবে?
আমি একবার তার মোবাইল নাম্বারটা চাইবো?
মেয়েটা উঠে চলে গেল। আর ফিরে এলো না।

প্রতিটা গানের শুরুতে মেয়েটা হাততালি দিচ্ছিল। গানের সাথে সাথে ঠোট মিলাচ্ছিল। এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে আমার পাশে কিছুক্ষণ বসে আবার কোথায় চলে গেল। তার নামটাও জানা হলো না। আর কোনদিন যদি মেয়েটার সাথে দেখা না হয়? এই মেয়েটি কি জানবে তাকে নিয়ে আমি এত কিছু ভেবেছি? তাকে নিয়ে আমি গল্প লিখছি?
না, মেয়েটি কোনদিন জানবে না।

চলে আসার সময় দেখি তার সিটের এক পাশে ছোট্ট একটা নোটবুক পড়ে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে তুলে নেই।নতুন নোটবুক। একদম কিছুই লেখা নেই, সম্পূর্ন সাদা। গোটা গোটা মেয়েলি অক্ষরে নাম লেখা ‘সামিয়া’

মেয়েটা কি তার মোবাইল নাম্বারটা লিখে রাখতে পারতো না?
আমি ভাবি প্রথম পাতায় একটা কবিতা লেখা থাকলে অনেক সুন্দর হয়। পকেট থেকে কলম বের করে লিখে দেই-

মেয়েটি কখনো জানবে না
যুবকের বুকের কোনে- সযতনে
কত বিষাদ ঘেরা যাতনা
যে কথা বহুদিন জমিয়ে রেখে
যুবকের কখনো হয় নি বলা
সে কথা মেয়েটি আর কোন দিন জানবে না!

তারপরে ডাইরিটা যথাস্থানে রেখে বেরিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়াই।

২.
একটা সিগারেট ধরানোর খুব তেষ্টা পেয়েছিল। বাইরে বেরিয়ে এসে চায়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে মনের সুখে টান দিচ্ছিলাম।

লোকটা আমার পাশে এসে দাড়ালো। মাঝবয়েসী, মাথায় ঝাকড়া চুল। হালকা ভুরিও আছে।
কনসার্টে এসেছেন?
আমাকে বলছেন? আমি লোকটার দিকে তাকাই। লোকটাকে দেখে কোন মতলব-বাজ মনে হয় না।
জ্বী, আপনি?

আমিও কনসার্টে এসেছি।
এই বয়সে এই জাতীয় কনসার্টে? আমি জানতে চাই।
আসি, ইচ্ছে হয়। আপনি কেন আসেন? বলে সিগারেটে একটা দীর্ঘ টান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সে ধোয়া দিয়ে রিং বানিয়ে বানিয়ে ছাড়তে থাকে।

কেন আবার? গান শুনতে।
সেটা তো বাড়িতেই শুনতে পারেন। এত টাকা দিয়ে কনসার্টে আসেন কেন?
আপনি কেন আসেন? আমি জানতে চাই।

লোকটা আমার দিকে তাকায়। সিগারেটে আরেকটা দীর্ঘ টান দিয়ে ফিল্টারটা ছুড়ে ফেলে দেয়।

তারপরে বলে- চিৎকার করতে। মাঝে মাঝে মনে হয় বুকটা ভারী হয়ে আছে, তখন খুব জোড়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে জান্তব স্বরে। মনে হয় সজোরে একটা চিৎকার দিলে মনের সব কষ্ট শব্দের সাথে সাথে ভেসে ভেসে বেরিয়ে আসবে বুক থেকে, এই বুকটা একটু হালকা হবে। কনসার্টে চিৎকার করতে খুব সুবিধা, কেউ আমার দিকে খেয়াল করবে না। কেউ আমাকে পাগল ভাববে না।

আমি তাই চিৎকার করার জন্যে কনসার্টের টিকিট কাটি।

লোকটা ভেতরে চলে গেল।

আমি আস্তে আস্তে কনসার্টের দিকে পা বাড়াই। আমাকেও আজ অনেক অনেক চিৎকার করতে হবে। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জান্তব চিৎকার। এমন জোড়ে চিৎকার দিতে হবে যাতে ইথারে ভেসে ভেসে আমার মনের না বলা সব কথাগুলো মেয়েটির কানে গিয়ে পৌছায়। আমাকে বলতেই হবে কারন মেয়েটির যে এই কথাগুলো শোনা খুব প্রয়োজন!


---------------------------------
মিজানুর রহমান পলাশ
নজরুল ইসলাম হল, বুয়েট
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×