বাঙালী মাত্রই আমরা জানি যে, মোচা হচ্ছে কলার ফুল। কলার কাঁদিতে যেমন গুচ্ছ গুচ্ছ কলা (যাকে কলার ছড়া বলে) সাজানো থাকে তেমনি কলার জন্মের আগে মোচাতেও সেই একের পর এক শিশু কলা ছড়া আকারে সাজানো থাকে এবং সেই সাজানো কলার উপর একটি করে গাঢ় রঙের আবরণ থাকে যা দেখতে অনেকটা ডিঙি নৌকার মত। এই মোচার ভেতরে পরতে পরতে কলার ফুল সাজানো থাকে যা কিনা ভবিষ্যতে কলা হয়ে বেরিয়ে আসে। মোচা রান্নার রকম ভেদে যেমন সুস্বাদু তেমন উপকারীও বটে। মোচায় প্রচুর আয়রণ আছে যা শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এই মোচা রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কেউ কুচিয়ে চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজি করে খান, কেউ সেদ্ধ করে, বেটে বা মিক্সিতে পেস্ট তৈরী করে তেল-মশলায় ভুনে খান, আবার কেউ নানাভাবে এর চপ তৈরী করেন। আমার মায়ের কাছে শেখা তেমনি একটি মোচার চপ তৈরীর রেসিপি আজ জানাবো।
একটি মোচা বেছে, ধুয়ে কুচিয়ে নিয়ে শুধু পরিমানমত লবন এবং খুব সামান্য পানি দিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করে বাড়তি পানিটুকু ঝরিয়ে নিন। এরপর ঠান্ডা হলে সেদ্ধ মোচা শীলে বেটে নিতে পারেন অথবা মিক্সিতে দিয়ে পেস্ট করে নিন। খুব মিহি করার দরকার নেই।
উপকরণ:
১। বাটা মোচা দুই কাপ
২। মসুরির ডাল বাটা আধ কাপ
৩। নারকেল কোরা এক কাপ
৪। কুচনো পেঁয়াজ আধ কাপ
৫। আদা এবং রসুন বাটা এক চা চামচ করে
৬। কাঁচা মরিচ কুচনো এক চা চামচ
৭। জিরে এবং ধনে গুঁড়ো আধ চা চামচ করে
৮। দারুচিনি গুঁড়ো আধ চা চামচ এবং এলাচ গুঁড়ো ৪/১ চামচ
৯। বেকিং পাউডার অথবা খাওয়ার সোডা আধ চা চামচ
১০। লবন পছন্দ মত এবং চিনি এক চা চামচ
১১। ডিম একটি
১২। ভাজার জন্যে তেল।
প্রণালী:
একটি কাঁচের বাটিতে ডিম, পেঁয়াজ কুচি এবং তেল ছাড়া বাকি সব উপকরণ একসাথে খুব ভাল করে মেখে ১০/১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর আলাদা একটি পাত্রে পেঁয়াজ কুচি একটু চটকে নিয়ে এতে ডিম দিয়ে ভাল করে ফেটে নিন। এর সাথে যোগ করুন ফ্রিজে রাখা উপকরণটি। আবারও ভাল করে মাখিয়ে নিন এবং পছন্দমত আকারে চপ গড়ে নিয়ে একটি ট্রেতে সাজিয়ে ডিপ ফ্রিজারে ১০/১৫ মিনিট রেখে দিন (তাহলে ভাজবার সময় চপগুলোর শেপ সুন্দর থাকবে)। এরপর একটি ফ্রাইং প্যানে বা লোহার কড়াইতে ডুবো তেলে যত্ন করে ভেজে নিন। দেখুন, কি দারুণ চপ তৈরী হয়ে গেল।
চপের সাথে সস বা চাটনি:
একটি কাঁচের বাটিতে পানি ঝরানো এক কাপ টক দই, এক টেবল চামচ চিনি, সামান্য গোলমরিচ গুড়ো, এক চা চামচ পুদিনার পেস্ট এবং পছন্দ মত বিটলবন দিয়ে বিটার/কাঁটাচামচ/কাঠের চামচ দিয়ে ভাল করে ফেটে নিন। ব্যাস, তৈরী হয়ে গেল সস বা চাটনি।
বিকেলে চায়ের সাথে কিংবা দুপুর বা রাতে ভাতের সাথে খেয়ে এবং খাইয়ে দেখুন তো কেমন হলো ঘরে-বাইরে আপনার জনপ্রিয়তা প্রমানিত হয়ে যাবে নিমেষেই।
ভালবাসা সবার জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫