somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার 'আলা-ভোলা' বুড়ো বাপ

২৩ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা হলেন দুনিয়ার সবচেয়ে সহজ সরল মানুষদের একজন। আমাদের পরিচিত সার্কেলে এইটা অবশ্য নতুন কথা না, সবাই জানে। আব্বার অফিসে বেশ কয়েকবার গিয়েছি, উনার প্রায় সব কলিগদের মুখে একই কথা - "তোমার বাবা খুবই ভাল মানুষ। তবে এই যুগে এরকম মানুষ................" বাকীটা আর বলেনা। আমি লাইনের মাঝখানে বুঝে নেই। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে গ্রামের যে যুবক চাকরী নিয়ে শহরে এসেছিলো, নাগরিক জীবনের এত জটিলতা আর কুটিলতার মধ্যেও কিভাবে এতটুকু পরিবর্তন না হয়ে সে থাকতে পারে তা আমার কাছে এক মহা বিস্ময়ের ব্যাপার।

আব্বা জীবনে তেমন কিছু করতে পারেননি। সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতেন, মাসের ১০/১৫ দিন যেতে না যেতেই ধার-দেনা শুরু হয়ে যেত। তবে যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন। আব্বার বউ ভাগ্য ভাল, আমার আম্মার মত বুদ্ধিমতী মহিলাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছিলেন। তাছাড়া আম্মা স্কুলে মাষ্টারী করে সংসারে কিছু আয়ও যোগ করতেন। আমাদের সংসার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হলেও চলে যেত।

পড়ালেখায় ভাল ছিলাম, ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হতাম। তাই হয়ত কিছুটা অহংকারী হয়ে গিয়েছিলাম। বাবা-মা'র অতিরিক্ত আদর যত্ন প্রাপ‌্যই মনে করতাম। বহুদিন পর সেই ভুল ভাঙ্গালো আমারই এক ফুফাত ভাই। জুয়েল ভাইয়া আমাদের চট্টগ্রামের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো। একদিন রাত দশটার দিকে বাড়ি আসলাম। আসার সাথে সাথে আমাকে খুব সিরিয়াস ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা মামা যে তোর জন্য রাস্তায় হাটাহাটি করে তুই জানস?" আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম, "হ্যাঁ জানি"। আমি রাত ৯টার মধ্যে বাসায় না ফিরলেই আব্বার হাটাহাটি শুরু হয়। আমাকে অবশ্য কিছু বলেননা, শুধু একবার বলেন "আইছস?" এর মধ্যে খুব অবাক হবার কিছু আছে বলে আমার কখনো মনে হয়নি। জুয়েল ভাই মুক্তিযুদ্ধে বাবাকে হারিয়েছেন। খুব হাহাকার মেশানো গলায় বললেন, "আমাগো লাইগা তো কেউ হাঁটে নারে..........?"

১৯৯৬ সাল। বিরোধী দলগুলোর অবরোধে সারা দেশ অচল। আমি তখন আটকা পড়ে আছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। টাকা পয়সা শেষ, হলের ডাইনিং এ গণ বাকী খাচ্ছি ছাত্ররা সবাই। হঠাৎ কে যেন ডাক দিলো, 'তোমার আব্বা আসছে'। গিয়ে দেখি আমার পঞ্চাশউর্ধ্ব বাপ প্রতিবেশী কার যেন সাইকেল ধার করে চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার পথ প‌্যাডেল মেরে ছেলের জন্য টাকা নিয়ে এসেছেন। আমাকে দেখেই তার চিরাচরিত বোকা-সোকা গাল ভরা একটা হাসি দিলেন। ক্লান্ত শ্রান্ত চেহারা, কিন্তু আহ্লাদের ছেলের মুখ দেখে আব্বার সেই হাসি দেখে- শরৎচন্দ্রের ভাষায় 'আমার সারা পৃথিবী যেন চোখের সামনে দুলিয়া উঠিলো'।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×