আমার বই পড়ার সর্বশেষ আপডেট দিয়েছিলাম গত মার্চে
তারপর আরো কিছু বই পড়ে শেষ করেছি। খুব সংক্ষেপে বইগুলো সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন তুলে ধরলাম। কমন পড়লে আওয়াজ দেয়ার আমন্ত্রণ রইলো।
কিশোর রচনাবলী সমগ্র- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
টেনিদাকে তো জানি আমরা অনেকেই। কিন্তু টেনিদা ছাড়াও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আরো অনেক সাহিত্য রচনা করে গেছেন। সেগুলোই এক মলাটের মধ্য এনে এই বই। টেনিদা তো থাকছেই, সাথে আরো কিছু মজার গল্প-উপন্যাস বোনাস। 'অন্ধকারের আগন্তুক' নামে প্রথমেই একটা চমৎকার উপন্যাস আছে যা একই সাথে মজার এবং রোমান্চকর।
পন্চগ্রাম- তারাশঙ্কর
শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ২য় খন্ড কিনেছিলাম বেশ আগে। প্রথমেই পড়েছি 'কবি', যেহেতু এটাই বোধকরি উনার সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস। প্রিয় ব্লগার তায়েফ আহমাদ খুব সুন্দর একটা আলোচনা করেছেন এই উপন্যাস নিয়ে। 'কবি'র পর শুরু করি 'পন্চগ্রাম', কিন্তু সেই শুরুই, শেষ হবার আর নাম নেই। অবশেষে গত ৮/১০ দিন ধরে একটু বেশী করে পড়ে শেষ করেছি গতরাতে।
দেবু পন্ডিত চরিত্রটির প্রতি কেবল হিংসেই হয়। সব পুরুষই তাকে ভালবাসে (শ্রীহরি ছাড়া), সব নারীই বোধকরি তাকে চায়। পদ্ম, দূর্গা এবং সবশেষে কিশোরী স্বর্ণ- সবাই বিপত্নীক দেবু পন্ডিতের জন্য পাগলপারা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগের গ্রাম বাংলার জীবনযাত্রার নিখুঁত এক ছবি অত্যন্ত আটপৌড়ে ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন তারাশঙ্কর। অবশ্য তাঁর বেশীর ভাগ উপন্যাসেই গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটে উঠেছে। পড়লে একটা কথাই বারবার মনে হয়, শহরের ড্রয়িং রুমে বসে এই উপন্যাস লেখা হয়নি বরং এই সব মানুষের সাথে ঘনিষঠ ভাবে মেশার কারণেই তারাশঙ্কর এত চমৎকারভাবে তাদের কথা লিখতে পেরেছেন।
বাকী বইগুলো সবই জনপ্রিয় পেপারব্যাক টাইপের বই, মহৎ সাহিত্য যাকে বলে তা বলা যায়না। এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে। কারো কমন পড়লে কিছু লেখার অনুরোধ থাকলো।
ডিজিটাল ফরট্রেস- ড্যান ব্রাউন
২৪৯ পৃষ্টার বই, ২০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেছি। তবে এরপর থেকে ত্যানা প্যাচানো হইছে। ওখানেই শেষ করা যেত। মূল কাহিনী হচ্ছে আমেরিকার এক গুপ্ত সংস্থা নিয়ে যাদের আছে একটা সুপার কম্পিউটারের মত এক জিনিস। এটা দিয়ে তারা যেকোন এনক্রিপটেড কোড বা মেসেজ ব্রেক করতে পারে। ঐ সংস্থাতেই কর্মরত এক জাপানী ট্যালেন্ট মনে করে এই ভাবে সাধারণ মানুষের চিঠি, টেলিফোন, ইমেইল সহ অন্যান্য বিষয়ে গোপনে নাক গলানো অন্যায়। প্রতিবাদে সে চাকরী ছেড়ে দেয় আর বের করে এমন এক কোড যা দিয়ে যেকোন ইমেইলকে 'আনব্রেকেবল' করা যাবে। অর্থাৎ তখন গুপ্তসংস্থাটি (এনএসএ) সাধারণ মানুষের আর কোন মেইল পড়তে পারবেনা। এই কোড উদ্ধারে নেমে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক আর তার পিছু ধাওয়া করে ভয়ংকর খুনী।
ডিসেপশন পয়েন্ট- ড্যান ব্রাউন
দারুণ কাহিনী, শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা। পৃথিবীতে এলিয়েনদের আগমনের প্রমাণ উপস্থাপন করে নাসা কিন্তু পরে জানা যায় এটা ছিলো ভূয়া এবং কিছু মানুষের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশবিশেষ। আর সবকিছুর মাঝে আটকা পড়ে কিছু নিরীহ মানুষ।
দ্যা সামনস- জন গ্রিশাম
কঠিন হ্রদয় কিন্তু নীতিবান বিচারক অ্যাটলী মৃত্যুর আগে তার দুই ছেলেকে সমন পাঠান তার সামনে হাজির হওয়ার জন্য। বড় ছেলে এসে আবিষ্কার করে তার চিরকালের অনেষ্ট বাবার বাসায় লুকিয়ে থাকা ৩ মিলিয়ন ডলার।
দ্যা অ্যাসোসিয়েট- জন গ্রিশাম
দ্যা অ্যাপিল- জন গ্রিশাম
কর্পোরেট নোংরামীর এক বাস্তবসম্মত কাহিনী। বড় বড় কোম্পানী গুলো কিভাবে বিচারকদের অর্থ দিয়ে কিনে নেয় তার এক দীর্ঘ স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা।
হোয়াইট ডেথ- ক্লাইভ কাসলার
এক বড় ফিশারিজ কোম্পানী জেনেটিকালী মডিফাইড বড় বড় মাছ তৈরী করে সমুদ্রের সব মাছ মেরে ফেলতে চাইছে। এরপর শুধু তাদের কাছেই সামুদ্রিক মাছের সাপ্লাই থাকবে ফলে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পারবে।
ট্রোজান ওডিসি- ক্লাইভ কাসলার
দারুন উপন্যাস এটি। ট্রয়ের যুদ্ধের ব্যাপারে একটা নতুন থিউরী দেয়া হয়েছে যার মূল বক্তব্য হলো এই যুদ্ধ মোটেই হেলেনের জন্য সংঘটিত হয়নি। বরং যুদ্ধের মূল কারণ ছিলো মূল্যবান টিনের খনি দখল, আর যুদ্ধটাও গ্রীসে হয়নি, হয়েছিলো ইংল্যান্ডে।
স্যাকেট ব্র্যান্ড- লুই লামুর
রাইড দ্যা রিভার- লুই লামুর
ওয়েষ্টার্ণ উপন্যাসগুলোর মধ্যে যারা একটু ভিন্ন স্বাদ বা ব্যতিক্রম খোঁজেন তাদের কাছে খুবই ভাল লাগবে।
দ্যা স্কেয়ারক্রো- মাইকেল কনোলী
এই লেখকের কোন বই আগে পড়িনি কিন্তু একটা পড়েই ভক্ত হয়ে গেলাম। দারুণ এক কাহিনী!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৩:২৯