somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ রামায়ণ-লঙ্কা কান্ড(৪)

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সন্ধ্যা নামছে,যুদ্ধ বিরতি ঘোষিত হবার সময় হয়ে গেছে—মাঠে পড়ে আছে রাম,লক্ষ্মন সহ সমস্ত সেনারা—একমাত্র বৃদ্ধ জাম্ববাণ,হনুমান ও বিভীষন তখনও বেঁচে!

রাতে জাম্বুবাণ বিভীষণের সঙ্গে আলোচনায় বসে।জাম্বুবান জানায় উপায় আছে ,বানর জাতির বন্য মানুষের জানা আছে সেইসব ওষুধ,গাছ গাছড়ার খবর-কিন্তু সেগুলি পাওয়া যায় ঋষ্যমুক পাহাড়ের উপরে।মোট চার রকমের দুষ্প্রাপ্য গাছের প্রয়োজন।এক নম্বর হল,বিশল্যকরণী।দ্বিতীয় মৃতসঞ্জীবনী,তৃতীয় অস্থিসঞ্চারিনী ও চতুর্থ সুবর্ণ কারিনী। এই চারটি গাছ যদি পাওয়া যায় তাহলে এ যাত্রায় বাঁচানো সম্ভব হবে রাম-লক্ষ্মণ ও অন্যান্যদের।নল,নীল ,অঙ্গদ সকলেই মৃত।

অতএব বিভীষণ ও জাম্বুবানের অনুরোধে হনুমান আবার চলল ঋষ্যমুকের দিকে।পাহাড়ে গিয়ে তো খুঁজে খুঁজে হয়রাণ।সে কি কবিরাজ! সব ঝোপ ঝাড় খুঁজে একই রকম মনে হয় ।হয়রান হয়ে পাহাড়ের উপরে থুতু ছিটায় সে । বহু খুঁজেও সেই গাছ চিনতে পারল না হনুমান।তারপরে হঠাৎ দেখা এক সন্ন্যাসীর সাথে।তারই সাহায্যে শেষ পর্যন্ত গাছগুলি সংগ্রহ করে রাতারাতি ফিরে এল লঙ্কায়।জাম্বুবান বানালো ওষুধ। এমন সেই গাছের গুণ,মৃতপ্রায়ও প্রাণ ফিরে পেল।ভাঙা হাড় জোড়া লেগে গেল,মিশ্রণ ওষুধ সুবর্ণ করনীর গন্ধে সমস্ত সেনারা উঠে বসতে লাগল একে একে।কোলাহলে ভরে উঠল সুগ্রীবের সেনাদের সমস্ত ঘুমন্ত লঙ্কা।রাবণ মধ্যরাতে জেগে উঠে শুনল সেই জয়োল্লাস।ইতিমধ্যে মারা গেছে তার প্রিয় সেনাপতি,সন্তান,ভাই— তারা তো কেউই বেঁচে ওঠেনি আবার। অথচ বার বার ...দীর্ঘশ্বাস পড়ে রাবনের বুকের গভীর থেকে—

সম্বিত ফিরেই রাজা সুগ্রীব মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।এভাবে চলবে না,ভাগ্যবল প্রাণ পাওয়া গেছে ,তাবলে বার বার বাঁচা যাবে না এভাবে—রাক্ষসরা নিজেদের দেশে বসে আছে,তাদের মনোবল বেশি।বানরসেনারা বহুদিন প্রবাসে—তাই সিদ্ধান্ত হল লঙ্কার বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ফেলা হবে।কোনও ঘর,কোনও রমনী যেন রাক্ষসসেনার জন্য অবিকৃত না থাকে।সমস্ত শান্তিময় গৃহকোন জ্বালিয়ে দাও-পুড়িয়ে ফেলো---চূড়ান্ত বাঁদরামিতে ভরিয়ে তোলো লঙ্কার বাতাস রাক্ষসসেনারা তখন শিবিড়ে,লঙ্কার অন্তপুঃরে মেয়েরা ঘরের কাজে ব্যস্ত—বানর সেনারা পারদর্শী ছিল হঠাৎ আক্রমন করে পালিয়ে আসার কৌশলে।আগুন লাগানো শুরু হল সোনার লঙ্কায়,সমস্ত গৃহিনী ও বিদ্যেধরীদের পুড়িয়ে দেওয়া হল ।পুড়ে গেল লঙ্কার সমস্ত গৃহপালিত পশু,পাখি—লঙ্কার শান্তি!



রাবণ আর সভায় আসতে পারে না লজ্জায়।দেশের নারীদের যে অপমান হয়েছে এরপরে আর তার মুখ নেই।কুম্ভ-নিকুম্ভ নামে দুই ভাই,মেজভাই কুম্ভকর্ণের দুই ছেলে।তারাই পিতৃহত্যা ও দেশের সম্মাণের কথা ভেবে পরদিন যুদ্ধের সেনাপতি হবে।যুদ্ধে গিয়ে দুইভাই সমস্ত বানরসেনাদের বিধ্বস্ত করে তুলল।প্রচন্ড আহত হয়ে পড়ে গেল সুগ্রীব।হনুমানকে আক্রমন করে হারিয়ে ,দড়ি দিয়ে বেঁধে লঙ্কায় আনা হয়।লঙ্কার নারীরা কুম্ভ-নিকুম্ভকে আশীর্বাদ করল,ঘোর পোড়ানি,অপমানকারী হনুকে ধরবার জন্য।বিকেলে রাজসভায় বিচার হবে হনুমানের।নিকুম্ভের বাড়িতে রাখা হল হনুমানকে।একসময় যখন জ্ঞান ফিরল হনুমানের,অসচেতন নিকুম্ভের উপরে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে মল্ল যুদ্ধে তার ঘাড় মটকিয়ে দিয়ে পালিয়ে এল রামের কাছে।



কুম্ভ-নিকুম্ভের পরে মকরাক্ষকে পাঠানো হল ,তারপরে বিভীষনের ছেলে তরনীসেন।তরনীসেন শান্ত প্রকৃতির ,সরমা তার মা,সীতার সর্বসময়ের সহচরী।তার বাবা বিভীষণ রামের সাহায্যকারী।রাবণ ডেকে জানায় সব ভাইরা গেছে—তোমাকেও যেতে হবে এবার ।তরনীসেন রাজি। বিভীষণ যুদ্ধক্ষেত্রে দেখে সন্তান আসছে যুদ্ধে,সে রামকে বলে ,আপনি এবার যুদ্ধ করুন রাজা,কোনও ভয় নেই।

যুদ্ধে জয়লাভ করলে বিভীষণ হবে লঙ্কার রাজা, সিংহাসনের জন্য সন্তান কুরবান!তরনীসেন আসলে যে তার ছেলে একথাও প্রকাশ করে না বিভীষণ।বিভীষণ নিজে থাকে রামের পাশে—তরনীসেন যুদ্ধ করে ,করতে হবে বলে,আগেই বোঝে তার জীবন লঙ্কার সিংহাসন লাভের অঙ্গীকারে বিক্রিত! তরনীসেনের মৃত্যুর খবর যায় লঙ্কায়—রাবন,মন্দোদরী ,সরমা কান্নায় রাজ-অন্তঃপুর ভেসে যায়।বিভীষণও জানায় সকলকে –তারই ছেলে আজ ভাগ্যবলে শ্রীরামের হাতে নিহত!

গন্ধর্ব কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে রাবন বিয়ে করেছিল।সেই রানীর ছেলে বীরবাহু তখন ছিল স্বর্গে—গন্ধর্ব কন্যার পুত্র হিসাবেই সে লেখাপড়া শিখতে সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।তারকাছে খবর পাঠালো রাবন,দেশের করুন অবস্থা,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে যেন ফিরে আসে লঙ্কায়।বীরবাহু ফিরে এসে সব শুনে যুদ্ধ যাত্রায় যায়।বীরবাহুর একটি দৈবদত্ত বা মামাবাড়ি থেকে পাওয়া হাতি ছিল।সেই হাতি এতই ভালো যে বীরবাহুর প্রাণ যেমন করে হোক সে রক্ষা করত।বিভীষণের পরামর্শে রাম এসে জোরহাত করে সম্ভাষণ করল বীরবাহুকে—রীতি অনুসারে বীরবাহু হাতির পিঠ থেকে নেমে করজোরে দাঁড়ায় রামের সামনে—সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আক্রমণ।হাতির পিঠে চড়ে বসবার আগেই চতুর্দিক থেকে আসা অতর্কিত আক্রমনে বীরবাহু নিহত হয়।

লঙ্কার রাজপুরীতে কান্নার রোল উঠল আবারও।রাজপুত্র বীরবাহুর মৃত! মন্ত্রীদের পরা মর্শে শিল্পী বিদ্যুজ্জিহ্ব বানাল অবিকল সীতার মূর্তি।যুদ্ধের মাঠে গিয়ে বানর সেনাদের সামনে সেই সীতাকে কেটে ফেলল ইন্দ্রজিৎ।যুদ্ধের উদ্দেশ্য যদি না থাকে অবশ্যই মনোবল ভেঙে যাবে রামের তথা সুগ্রীবের সেনাদের।খবর পেল রাম,কিন্তু বিভীষণ অন্তঃপুর থেকে খবর এনে দিল,সীতা অশোক বনে বহাল তবিয়তেই আছে—কোনও ভয় নেই।কিন্তু ভয়ের কথা হল ইন্দ্রজিৎ নিকুম্ভিলা যজ্ঞের আয়োজন করছে।এই যজ্ঞের ফলে সে যে অস্ত্র হাতে পাবে,তারপরে রামের আর একজন সেনাও বাঁচবে না।পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।ইন্দ্রজিতের সঙ্গে লড়াই করার মত বীর যে একজনও নেই তা আগে বহুবার প্রমান হয়ে গেছে,কাজেই ভাবতে হবে একমাত্র কীভাবে ইন্দ্রজিৎকে ছলে-বলে কৌশলে মারা সম্ভব,সেই কথা!
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×