somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ রামায়ণ-লঙ্কা কান্ড(৭)

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লঙ্কার প্রায় সব বীর মারা গেছে।রাবনের দিক থেকে দেখলে ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব করার সাহসও অবশিষ্ট নেই।একে একে কুৎসিত ষড়যন্ত্রে ছেলেরা মারা গেছে।ইন্দ্রজিতের মৃত্যু তো অসহ।কোনও সভ্য জাতির লোক যে এভাবে চুরি করে মন্দিরের মত পবিত্র জায়গায়,খাস যজ্ঞাগারে কাউকে পিছন থেকে সদলবলে আক্রমন করতে পারে—তা রাবনের এতদিনের জীবনে জানা ছিল না।সবচেয়ে কষ্ট হয় বিভীষণের কথা ভাবলে।মতান্তর হতেই পারে ,তা বলে শত্রুদের নিয়ে অন্তঃপুরে ওই পবিত্র মন্দিরে গুপ্তপথে নিয়ে আসা ,আর ছেলের মত ভাইপোকে হত্যা করানো –এ পাপের কী শাস্তি হবে না!

মাথা গরম হয়ে ওঠে রাবনের।যুদ্ধের সাজে সেজে নেয় রাবন।তার সমস্ত স্ত্রী ও অন্তঃপুরের মহিলারা চোখের জল মুছে আবারও আশঙ্কায় কেঁপে উঠছে—যাদের সঙ্গে লড়াই তারা যে মানুষ নয়,পিশাচ!

রাবণ রাগে অন্ধ হয়ে প্রায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে লক্ষ্মণকে ঠিক খুঁজে বার করে ফেলে।ইন্দজিৎকে মেরে সেদিন লক্ষ্মনের সাহস একটু বেড়েছিল।একটা বড় যুদ্ধ-পাথর ছুঁড়ে লক্ষ্মনকে ঘায়েল করে রামের খোঁজ করে রাবণ।কিন্তু রাবনের ধৈর্য নেই আর—কোথায় রাম! সে লক্ষ্মণের চিকিৎসার জন্য গেছে সুষেণের কাছে।সুষেণ এসে লক্ষ্মণকে পরীক্ষা করে ,রাবন তখন রামকে গরু খোঁজা খোঁজার পর সবে ফিরে গেছে।সুষেন জানায় লক্ষ্মণের তখনও শ্বাস আছে।হাত-পায়ে তখনও রক্ত চলছে---গন্ধমাদন পাহাড়ে গিয়ে বিশল্যকরণী আনতে পারলে লক্ষ্মণ আবার বেঁচে উঠবে।

রাম বললে,সুষেণ,আপনি আমার বন্ধু,যা ইচ্ছা করুন,যাকে ইচ্ছা পাঠান কিন্তু দয়া করে লক্ষ্মণের প্রাণ বাঁচানো যায় কি না দেখুন

সুষেণ হনুমানকেই আবার অনুরোধ করে বলে,গন্ধমাদন পাহাড়ে শাল-পিয়ালের বনে নীল ফুল,হলুদ লতা,পিঙ্গল পাতা,লাল ডাঁটা যে গাছ পাবে ,তাই বিশল্যকরণী।সেটা নিয়ে আসবে যত তাড়াতাড়ি পারো,যদি লক্ষ্মণকে বাঁচাতে চাও।

হনুমান ছাড়া আর কেই বা আছে রামের দলে ক্ষমতাবান,অগত্যা হনুমানই আবার রওনা দিলো গন্ধমাদনের উদ্দেশ্যে।

আবার...আবার লক্ষ্মণকে ওই ওষুধ দিয়ে বাঁচিয়ে তুলবে এই বানর –মানুষরা।রাবন জানত আগেই,বীর ইন্দ্রজিৎ তিন তিনবার এই লক্ষ্মণকে যমের দক্ষিনদুয়ারে পৌঁছে দিয়েও কপালফেরে এর হাতেই মারা গেল। তাই অনেক ভেবে মামা কালনেমিকে ডেকে পাঠাল রাবণ।কালনেমিকে রাবন বলে,মামা তোমার অনেক বুদ্ধি ,কাজেই চেষ্টা কর একবার অন্তত।আমারই রাজ্যে বসে এভাবে অন্যায় করেও বার বার বেঁচে উঠবে রাম-লক্ষ্মণ,এ হয় না।তুমি যেমন করে পারো হনুমানকে আটকাতে সাহায্য কর

কালনেমি বলে,হনুমান বীর,আমার ভয় করছে।কিন্তু করতে হবে কী?

রাবন পরিকল্পনার কথা জানায় এবার।গন্ধমাদন রাবনের চেনা জায়গা।সেখানে যেমন করেই হোক ভুলিয়ে হনুমানকে পুকুরে পাঠাতে হবে নাইতে।গন্ধমাদনের বিশাল পুকু্র কুমিরের জন্য বিখ্যাত।যদি ঠিকঠাক হনুমানকে সেখানে ফেলা যায়,আর দেখতে হবে না।কাজটা করে দিতে পারলে আর্ধেক লঙ্কা দিয়ে দেব ।

কালনেমি ভাবতে বসে,হনুমান বীর কিন্তু সে তো হনুমানের সঙ্গে লড়াই করবে না।করবে একটু কৌশল মাত্র।ব্যাটারে কোনও ক্রমে পুকুরে নিয়ে ফেলতে পারলেই অর্দ্ধেক লঙ্কা।ভাবাই যায় না,এই সোনার লঙ্কা অনায়াসে হাতে চলে আসবে...

বেশ,আমি রাজি

-তাহলে খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে গন্ধমাদনে আমারই বানানো একটা কুটিরে হনুমান পৌঁছানোর আগে গিয়ে বসে থাকো গা—খুব সাবধান,ব্যাটা যেন টের না পায়

কালনেমি রাবনের কথামতন এসে কুটিরে বসে থাকে।হনুমান সেই লঙ্কা থেকে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পৌঁছিয়েই খুজছে কোথায় পিঙ্গল পাতা,না নীল নীল ফুল,লাল লাল ডাঁটা-গুলিয়ে সব খিচুড়ি পাকিয়ে যায়।এমন সময় দেখে কুটির,সেখানে এক মুনি বসে আছে।হনুমানকে দেখেই মুনি উঠে সাদরে ডেকে নেয় কাছে।হনুমান বলে আমাকে একটু গাছটা চিনিয়ে দাও না মুনি,কী যেন নীল পাতা ,না পিঙ্গল ডাঁটা...

মুনি বলে,আগে স্নান সেরে এসো,খাবার খাও,নইলে আমার বাড়ি থেকে অতিথি চলে গেলে তার ফল ভালো হবে না

হনুমান জানায় ,না মুনি,আমি ওষুধ নিতে এসেছি,লক্ষ্মণ ওদিকে মর মর অবস্থায়।সুষেণ বদ্যি বলে দিয়েছে যত তাড়াতাড়ি পারি ,যেন ওষুধ নিয়ে যাই

মুনি রূপী কালনেমি বলে ,আমার বাড়ি না খেয়ে গেলে তোমারও খিদা লাগবে,আর আমারও নিন্দা হবে আর তুমি হাজার খুঁজলেও সে ওষুধ পাবা না।কাজেই নেয়ে-খেয়ে ওষুধ নিয়ে যাও,আমার আশীর্বাদে লক্ষ্মণ ভালো হয়ে যাবে



হনুমানেরও খিদে পেয়েছিল,আর ফালতু কর্তব্য না দেখিয়ে সে স্নানে গেল-গিয়ে পুকুরে নামতেই কুমিরে তাড়া করল।কুমিরটাকে মেরে কোনওক্রমে জল থেকে উঠে হনু সব বুঝেছে।গন্ধকালী নামক শাপভ্রষ্টা দেবী হনুকে জানালো যে আসলে রাবনেরই কুটির ওটা আর ওই ছদ্মবেশী রাবনের চর তার সঙ্গে শত্রুতা করে ইচ্ছে করে পুকুরে পাঠিয়েছে।

এদিকে কুটিরে বসে বসে কালনেমি লঙ্কা ভাগ করছে মনে মনে।অর্দ্ধ লঙ্কা মানে একটা দড়ি ধরে উত্তরে দক্ষিনে দাঁড়িয়ে ভাগ করব।আমি নেব পূর্বদিকটা কারণ পশ্চিমে সাগর,সেদিকে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবণা আছে।এছাড়া রাজকোষের যত রত্ন,হাতী ,ঘোড়া আছে সবকিছুর ভাগ করব সমান ভাগে।এরপরে আমি যাব রাবনের অন্তঃপুরে ।মন্দোদরীর সঙ্গে তো দিনেই রাত্রিযাপন সুখে সময় কাটাব,আহা! এখনও মেয়েটার বাঁধুনি কি! পাগল না হলে কেউ ঘরে এমন বিদ্যেধরীকে রেখে...

হনুমান এসে কথা নেই বার্তা নেই এক ধাক্কায় ফেলে বুকের উপর চড়ে বসে হাঁটুর চাপে মেরে ফেলে কালনেমিকে—তার কল্পনার লঙ্কাভাগ মিলিয়ে যায় আকাশে বাতাসে
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×