somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তাক্ত প্রান্তরে বিবর্ণ অনুভূতির কথামালা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই তো বেশ ভালো আছি। প্রতিদিন নতুন রেজারে দাড়ি কামাচ্ছি, এ.সি. বাসে চড়ে অফিস যাচ্ছি, লাঞ্চে চিকেন-মাটন খাচ্ছি, বিকেল হলে আড্ডা পেটাচ্ছি, রাতে দয়িতার সাথে সঙ্গমে সঙ্গমে ক্লান্ত হচ্ছি- এই তো চলে যাচ্ছে বেশ নিরুদ্রপ জীবনের ঢেকুর তুলতে তুলতে। প্রাত্যাহিক ক্যালেন্ডারে না ঘটছে কোন ঘটনা, না দুর্ঘটনা। তাই দারুন নিভার্বনায় নির্লিপ্ত হয়ে আছি।


আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না! একটা ছোট-খাট দুর্ঘটনা। এই যেমন- প্রতিদিনের মতো অফিস যাওয়ার পথে যেই না বিজয় স্মরণীর মোড় পেরুতে যাচ্ছি অমনিই র্র্যাংগস ভবনটা ধ্বসে পড়ল গাড়ির উপর। চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ইট-পাথরের স্তুপের নীচে যন্ত্রণায় ছটফট করছি আমি আর অপেক্ষা করছি কেউ এসে উদ্ধার করার জন্য। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একসময় সারা শরীর অবশ হয়ে আসলে অতপর ঢলে পড়লাম অনিবার্য মৃত্যুর কোলে। বাইরে অপেক্ষমান আমার পরিবার-পরিজন চিৎকার আর আহাজারিতে ভারী করে তুলছে বাতাস। তারা শুধু শেষবারের মতো আমার থেঁতলে যাওয়া মুখটা দেখতে চায়, পরম যত্নে অন্তিম বিদায় জানাতে চায় প্রিয় মানুষটিকে। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকলে একসময় পচতে থাকে লাশ, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে বাতাসে, যদিও সে বাতাস এই শহরের বড় বড় গিঞ্জি দালানগুলো পেরিয়ে কখনোই পৌঁছাতে পারে না প্রহরীবেষ্টিত ওই সাদা দালানের ভেতরে। তবু যদি কখনো একখন্ড উন্মুক্ত প্রান্তরে ক্ষণিক সময়ের জন্য অবস্থানের সুযোগ ঘটে, আমি নিশ্চিত জানি, হে মহামান্য রাষ্ট্রপ্রধান আপনি তখন নূন্যতম সময়ের জন্য হলেও এক দমকা বোঁটকা গন্ধে নাসিকা কুঞ্চিত করতে বাধ্য হবেন যদি না আপনার অনুভূতির শেষ অংশটুকু অবশিষ্ট থাকে।

কেউ আপনাকে প্রশ্ন করার ধৃষ্ঠতা দেখাবে না। কারণ তারা জীবিত, আর জীবিতদের বড় ভয় ওই আটপৌঢ়ে জীবনটাকে নিয়ে। তাই তারা চোখের জলে বুক ভাসাবে কিন্তু রক্তে প্লাবন জাগাতে পারবে না কখনো। কিন্তু মৃত মানুষের এসবের কোন বালাই নেই। তাই- হে মহামান্য আইন রক্ষক, আমি সবিনয়ে আপনার কাছে জানতে চাই- কি এমন জরুরী প্রয়োজন ছিল ভবনটিকে মাত্র একদিনের নোটিশে ভাঙ্গার, কেন ভবন ভাঙ্গার কাজে অদক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, কেন বুয়েট বিশেষজ্ঞ সহায়তা দিতে অপারগ হলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা হলো না? আমি জানি, এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কোন দায় নেই আপনার। শুধু এটুকু জানতে চাই- আপনাদের মহান অভিপ্রায়গুলো বাস্তবায়নের পথে আর কতোজন সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে বলি হতে হবে?


তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা; তার রাজনীতি,
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি না,- তার অনেক কারণ রয়েছে।
----------- (হুমায়ুন আজাদ)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:৩৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×