‘যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না’
মাননীয় বিচারক,
কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়, এই মহামান্য আদালতকে স্বাক্ষী রেখে,
আমার ৩৬ বছরের সংগ্রামী জীবনকে স্বাক্ষী রেখে
শপথ করছি যে, আমি সম্পূর্ণ জেনে-বুঝে, স্বজ্ঞানে লিখেছি,
আমার ধর্ম ‘মানবতা।’
হিন্দু নয়, মুসলীম নয়, বৌদ্ধ নয়, খৃষ্ট্রান নয়,
ইহুদি নয়, জৈন নয়, শিখ নয়- আমি মানুষ।
মানবতাই আমার ধর্ম।
খুব অবাক হয়েছেন ধর্মাবতার?
জানি, আপনারা আমাকে পাগল ভাবছেন। রাচী কিংবা পাবনার
কোনো এক নির্জন কক্ষে পাঠানোর কথাও ভাবতে পারেন-
এতে আমি অবাক হবো না মোটেই।
মাননীয় বিচারক,
ধর্মান্ধরা আমাকে ‘নাস্তিক’ও বানাতে পারে।
আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৭ টুকরা করে
লেফট-রাইট, লেফট-রাইট মার্চপাস্টে এগিয়ে যেতে পারে
উদ্ধ্যত খোলা চাপাতি।
ভয় পাই না এসব জেনেও।
তাবৎ সুশীল সমাজ চশমার ফাঁকে ভ্রু কুচিয়ে
ভাবতে পারেন- গেল, গেল, সব গেল। এ এক নষ্ট প্রজন্ম।
ধর্মের পরিচয়ে পরিচিত হবে মানুষ।
আর এ পাগল কি না বলছে, ধর্ম নয়, মানুষই তার পরিচয়!
এক্ষুনি গলাবাজিতে সরগরম হওয়ার সময়।
ঝড় তুলতে হবে টকশো কাঁপে!
মাননীয় ধর্মাবতার,
আমি শঙ্কিত নই মোটেই।
ন্যায়ের প্রতীক আদালত, এজলাস, প্রকাশ্য দিবালোক স্বাক্ষী রেখে
আমি আবারো দৃঢ়কণ্ঠে বলছি, দ্রিমিক দ্রিমিক বুকে নয়,
সিনা টান টান করেই বলছি ‘মানবতা, একমাত্র মানবতাই আমার ধর্ম।’
মহামান্য আদালত,
একে কি ধর্ম অবমাননা বলা যায়?
আপনি ভেবে দেখুন।
যদিও ধর্ম শব্দটার অর্থই আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
ছোটবেলায় কেতাবে পড়েছিলাম, সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতু থেকেই
ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি। আর উৎপত্তিগতভাবে ধর্ম মানে ধারণ করা।
সোজাসাপটা বললে দাঁড়ায়, যে যা ধারণ করে তাই তার ধর্ম।
মাননীয় বিচারক,
এই যদি হয় ধর্মের সংজ্ঞা, তাহলে আমার অন্যায়টা কোথায়?
সবিনয়ে জানাতে চাই, মহানুভবতার,
আমি তো শুধু আমার বিশ্বাসটুকুই ধারণ করেছি মাত্র।
এই বিশ্বাসটুকুই যে আমার শিবরাত্রির উপবাস, অষ্টপ্রহর কীর্ত্তন,
মাঘী পূর্ণিমার প্রার্থনা, শবে-ই-বরাতের রোজা কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
মহামান্য আদালত,
আমি তো কোনো শৃঙ্খলিত জীবনে আঘাত করিনি,
করবোও না- এই হলফনামায় স্বহস্তে স্বাক্ষর করতে পারি।
আঘাত করবো না কোনো হিংস্র উন্মাদনায়, আঘাত করবো না
কোনো অনুভূতিতে- এই শপথও করতে পারি স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে।
তর্ক, যুক্তির উর্ধ্বে থেকে শুধু ভালোবাসি মানুষকেই।
মাননীয় বিচারক,
আমি পারিজাত ফুলে সিক্ত হয়ে অমরাবতী চাই না,
মৃত্যুর খাড়ার ভয় পাই না মোটেও,
লোভ নেই সপ্ত আসমান ’পরে জান্নাতুল ফেরদৌসের
বাসিন্দা হওয়ারও।
শুধু সবিনয় নিবেদন, আমি মানুষ, আমার ধর্ম মানবতা-
এই হোক আমার পরিচয়।
এই অনুমতিটুকু কি আমাকে দেবেন না মহামান্য আদালত?
০৪. ০৯. ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২০