প্রতিদিন সকাল হয়। উঁকি দেয় হাজারো সম্ভাবনা। পরিবর্তিত হয় ট্রাফিক সিগন্যালের লাল-সবুজ-হলুদ বাতি। হাজারো মানুষের ভিড়ে চলতে চলতে ক্লান্তি নিয়ে কিছু মানুষ পথচলে যায় নীরবে। সূর্যাস্ত থেকে সুর্যদয় আবার সূর্যাস্ত। কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়, কিছু মানুষের! ভেঙ্গে যায় কাঁচের গ্লাসের মত। কিছু মানুষ আবার বসতি ভেলায় ভাসিয়ে দেয়, কেউ কেউ আবার সংসার সাজাবার রঙে নিজেকে উজার করে দিয়ে ভালবাসার সম্পর্কে নিজেকে সপে দিচ্ছে সদ্য জেগে উঠা অর্থহীন ভালবাসার খোঁজে। ঘন্টা শেষে দিন পাড় হয়ে আসে সপ্তাহ, একই নিয়মে পাড় হয় মাস, বছর কিংবা যুগ। কিন্তু, কিছু মানুষের ভাগ্যের চাকা আসলেই পাংচার হয়ে গিয়েছে- কখনো আর ঘুরবে বলে মনে হয় না কিংবা সেটি টিক করে নতুনে রূপ দিবে এমন মিস্রির খুব অভাব চলছে এই জগৎসংসারে।
রোজ অফিসে যাওয়ার সময় ঢাকার রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বেশ কিছু অতিস্বাধারণ মানুষের বড্ড ভীর দেখা যায়। মনে হয় একটা বড়সড় বাজার বসেছে, কিন্তু কোন পণ্যের দেখা মিলবে না। যদি আপনি বাণিজ্যের ছাত্র হয়ে থাকেন তবে হিসাব খুবই সহজ।বাজার হতে হলে অবশ্যি পণ্যের উপস্থিতি থাকতেই হবে। আর আপনি আমি প্রতিদিন যেই মানুষের জটলার বাজার দেখি সেটিও এক ধরনের বাজার ব্যবস্থা।সেখানেও আছে পণ্যের সমাহার।
এখানে প্রতিদিন মানুষের সস্তা শ্রম বিক্রি হয়। ক্রেতা হিসেবে কিছু পরিচিত মুখই ঘুরেফিরে আসে। দামাদামি হয়। কিছু অবিক্রিত থেকে যায়। কিছু হয়তো প্রদিন বাজারে আসে কিন্তু সপ্তাহে এক-দুবারের বেশি বিক্রি হয় না।
যাদের যৌবন আছে তাদের চাহিদা ভাল, বিক্রির দরও ভাল। এখানে একটা মজার ক্যালকুলেশন কাজ করে। যার সংসারের খরচ যত বেশি তার বিক্রি হবার সম্ভাবনা তত কম। কেননা তার যৌবনের জোর এতদিনে বেশ কমে এসেছে।
এদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি নির্মান শ্রমিক হিসেবে। বেশ ঝুকিপূর্ণ কাজে এদের ভাড়া করে নেওয়া হয় যদিও এদের মধ্যে অনেকে বেশ পেশাজীবী আচরন করে এবং বেশ অভিজ্ঞতার অধিকারী। এদের মূল্যায়ন সমাজে নেই বললেই চলে কিন্তু এদেরও পরিবার আছে, আছে বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়। আছে কিছু লুকায়িত স্বপ্ন যা হয়তো সারাজীবনই অব্যক্ত থেকে যায়।
এদের সাথে কেউ আপনি করে কথা বলে না, একবার বলেই দেখুন তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। এরা সমাজের ক্লাসলেস পিউপল কিন্তু এদের স্বপ্ন কোনভাবেই ক্লাসলেস না। এদের আকাঙ্ক্ষা খুব বেশি না। এদের উপস্থিতি কোনভাবেই ঠাওর করা যায় না কিন্তু এরা বেঁচে থাকে। মহাকালের এই অনন্ত ধারায় তাদের প্রয়োজন কখনো ফুরায় না।
এরা আছে বলেই বড়বাবুদের সভ্য সমাজ টিকে আছে- থাকবে কিন্তু এদের হাসিমুখ কখনোই হাস্যজ্জ্বল হতে দেখা যায় না।
তবুও এরা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য সৈনিকের ভুমিকায় যোদ্ধারূপে সমাজে বিদ্যমান।
জয় হোক মানবতার।
(জাকির বালী)
২৮.১০.২০১৭
ছবিঃ লেখক নিজেই- পূর্বাচল থেকে