somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাতের ভয়ংকর নেতারা : আব্দুল কাদের মোল্লা

০২ রা মে, ২০১২ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
‘জবাইয়ের পর ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হয় মাথা’


Wed, May 2nd, 2012 5:03 pm BdST


প্রদীপ চৌধুরী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ঢাকা, মে ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মিরপুরের ‘কসাই’ নামে কেন আব্দুল কাদের মোল্লাকে ডাকা হত, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের একটি ঘটনার বর্ণনাতেই তা উঠে এসেছে।

এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বুধবার প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধকালে মিরপুরে কবি মেহেরুন্নেসা এবং তার পরিবারের হত্যার বর্ণনা তুলে ধরেন।

একাত্তর সালের ২৭ মার্চ হত্যা করা হয়েছিল মেহেরুন্নেসা, তার দুই ভাই রফিকুল হক বাবলু, শরিফুল হক টুকু ও তাদের মাকে।

“সকাল ১১টা। আলবদর বাহিনীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে কিছু অবাঙালি এবং অন্য সহযোগীরা কবি মেহেরুন্নেসার মিরপুরের বাসায় উপস্থিত হয়।

এরপর কাদের মোল্লার নির্দেশে মেহেরুন্নেসাকে জবাই করে তারা। শরীর থেকে মাথা কেটে রশি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর একে একে জবাই করা হয় বাবলু, টুকু ও তাদের মাকে,” বর্ণনা দেন প্রসিকিউটর।

এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সাতটি ঘটনা উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ আলী। তবে এর মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় ঘটনা দুটিকে বিচারিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান মোহাম্মদ আলী।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের ‘যুদ্ধাপরাধের’ আরেকটি ঘটনা তুলে ধরেন প্রসিকিউটর, যাতে স্থান পেয়েছে মিরপুরের কালাপানিতে হযরত আলী হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা।

“একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যের ঘটনা। স্থান মিরপুরের কালাপানির ৫ লাইনের ২১ নম্বর বাড়ি। হঠাৎ করে হাঁপাতে হাঁপাতে নিজের বাড়িতে উপস্থিত হয় হযরত আলী। ন্ত্রী দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢুকে তিনি বলেন, ‘কাদের মোল্লা আর আখতার গুণ্ডা পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে আমাকে ধাওয়া করেছে’। বড় মেয়ে মোমেনা ও মেজ মেয়ে আমেনাকে নিয়ে চৌকির নিচে ট্রাঙ্কের পেছনে পালায় তারা।”

“কিছুক্ষণ পর সেখানে কাদের মোল্লাসহ অন্যরা উপস্থিত হয়। হযরত আলীকে বাইরে আসতে বলে তারা। কথা না শোনায় দরজায় বোমা মারে আখতার গুণ্ডা। এরপর একটি দা হাতে হযরত আলী দরজা খুলে বেরিয়ে এলে তাকে কাদের মোল্লার নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করা হয়। ২ বছরের শিশুকে মারা হয় আছাড় দিয়ে,” বলেন প্রসিকিউটর।

তিনি বলেন, “ওই ঘটনা দেখে ১১ বছর বয়সি আমেনা চিৎকার দিলে তাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে ১২ জন পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে। মোমেনা জ্ঞান হারিয়ে ঘরেই ছিল। পরে জ্ঞান ফিরলে সে ওই স্থান থেকে পালিয়ে যায়।”

মোমেনা এই ঘটনার এক জন সাক্ষী বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান মোহাম্মদ আলী।

সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও দুই সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুাল-২ এর কার্যক্রম শুরু হয়।

সঠিকভারে আবেদন ও অভিযোগ সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে না ধরতে পারায় মোহাম্মদ আলীকে কয়েকবার ট্রাইব্যুনালের কড়া কথা শুনতে হয়।

প্রসিকিউশন কাদের মোল্লার ছাত্রজীবন, রাজেন্দ্র কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে ইসলামী ছাত্র সংঘে যোগদান, আল বদর বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক, একাত্তরের তার ভূমিকা, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

এরপর পল্লবীর আলোকদিয়া গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাত জনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খান বাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরো দুটি গ্রামের অসংখ্য লোককে হত্যার ঘটনাগুলো তুলে ধরে প্রসিকিউশন, যাতে কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে মৌখিক সাক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন লিখিত ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন।

মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এই মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে গত বছরের ১ নভেম্বর জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/পিসি/এমআই/১৬৫১ ঘ.
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×