১৮.০৬.১১
তখন রাত ৯.০০ টা। দিনে প্রোগ্রামের ব্যস্ততা থাকায় রাতেই যাবার সিদ্ধান্ত। প্রচন্ড বেগে বৃষ্টি ঝরছে। যত সমস্যাই হোক শহীদ নোমানী ভাইসহ সতের জন শহীদের রক্তে রাঙা ক্যাম্পাস ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ পরিদর্শন না করে রাজশাহী ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ১ টি মোটরসাইকেলে আমরা তিনজন। ড্রাইভিং- এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারী, মাঝখানে আমি আর পিছনে বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। বৃষ্টির কারনে রাস্তা অনেক বেশী পিচ্ছিল। তাছাড়া রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে ছোটখাট কুপের মত সৃষ্টি হয়েছে। কলা ভবন,বিজ্ঞান অনূষদ,,সেন্ট্রাল লাইব্রেরী,সিনেট ভবন, শিক্ষক কোয়ার্টার, ইবলিস চত্বর, শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর ট্যান্ট, ভিসির বাসভবন, এস এম হল, জোহা হল, কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে শেরে বাংলা হলের সামনে এসে থেমে গেলাম। আর সামনে এগুতে ইচ্ছে করছিলনা। বৃষ্টি ভেজা শরীরটি কেমন জানি চিন্ চিন্ করে উঠলো। অব্যক্ত এক কষ্টে শিহরিত হল দেহ-মন। এই সেই হল, যেখানে খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তির ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে শহীদ হামযা রা. এর মিছিলে নাম লিখিয়েছিলেন আমাদে প্রিয় ভাই, সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী। এই সেই স্থান, যেখানে নোমানী ভাই বাতিলের হাতে অবরুদ্ধ আমাদের ৯ জন ভাইকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই পাড়ি জমালেন মহান রবের সান্নিধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ইঞ্চি মাটি আর সুউচ্চ ভবনগুলোর প্রতিটি ইট যেন রক্তিম বর্ণ ধারণ করে নোমানী ভাইসহ সতের জন শহীদের রক্ত ঝরানো ত্যাগ-কোরবানী আর শাহাদাতের জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করছে। শুনশান নীরবতার মাঝে তিনজোড়া চোখ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হলের দিকে। হলের দেয়াল, গেইট আর উপর তলার দরজা-জানালাগুলোর দিকে চুম্বকের মত আটকে আছে আমাদের চোখগুলো। চলে যেতে ইচ্ছে না করলেও সঙ্গত কারনেই বেশীক্ষণ এখানে অবস্থান করা গেলনা। বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে রেখে বিনোদপুর দিয়ে বের হয়ে আসলাম আমরা। একটু সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। সবাই চুপচাপ, কারো মূখে কোন কথা নেই। কেমন জানি আন্মনা হয়ে গেলাম সবাই। আর তখনই ঘটল বিপত্তিটি। সামনের স্পীড ব্রেকারটির দিকে কারও নজর পড়লনা। স্লীপ খেয়ে মোটরসাইকেলটি উল্টে গেল। তিনজন লুটিয়ে পড়লাম তিনদিকে। ফলে যা হবার তাই হলো। আমার ও সাংবাদিক ভাইটির হাটু ও পায়ের আংগুল থেকে চামড়া খসে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তবুও বড় ধরনের কোন ক্ষতির হাত থেকে আল্লাহ রক্ষা করলেন। ব্যথিত হৃদয় আর আহত শরীর নিয়ে ফিরে এলাম রাজশাহী মহানগর অফিসে। তখনও স্মৃতি হয়ে তাড়া করছিল একটু আগে ঘুরে দেখা শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলো। বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী ভাইয়ের রক্ত মিশ্রিত পবিত্র চেহারাটি। ইয়া আল্লাহ ! ইয়া মালিকুল আরশ!! তোমার কাছে একটাই প্রার্থনা, সতের জন শহীদের রক্তে ভেজা এই ক্যাম্পাসটি চিরতরে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য কবুল করে নাও। বার বার উচ্চকিত হোক ‘নারায়ে তাকভীর- আল্লাহু আকবার ধ্বনি।