রেট্রো গেমিং মূলত ৮০-৯০ এর দশকে যে গেম গুলো বেরুতো সেগুলোকে ওল্ড বা রেট্রো গেমিং বলে। সে সময় আমরা যারা পিচ্চি ছিলাম ২ টাকার কয়েন ঢুকিয়ে গেমের দোকানে থাকতাম। তখন গেমগুলি ছিলো ৮ বিটের। আমাদের লাল নীল স্বপ্নের গেম লেভেল পার হয়ে যেতো কতো দুপুর। কতদিন শেষ লেভেলে খেলে জিততে না পেরে বাসায় ফিরে কান্না করেছি। আর গেমগুলো ছিলো ক্লাসিক! মেটাল স্লাগ, কিং অব ফাইটারস, স্ট্রিট ফাইটারস, ক্যাডিলাক্স অ্যান্ড ডাইনোসরস ইত্যাদি।
এর পর আস্তে আস্তে গেম কোম্পানীগুলা তাদের সুদুর প্রসারী চিন্তা ভাবনার ডাল পালা মেলতে শুরু করলো। আশির দশকে হোম গেমিং ডিভাইস বা কন্সোল বের হয়েছিলো। ইনফ্যাক্ট আমিও কন্সোল ইউজ করেছি নব্বইয়ের দশকে। ক্যাসেট ডিস্ক লাগিয়ে খেলতাম। এরপর শুরু হলো থ্রিডি গেমিংয়ের যুগ।
দুই গেমিং মহারথী সনি ও নিনটেন্ডো নিয়ে এলো সনি প্লেস্টেশন, মাইক্রোসফট ও নিনটেন্ডো ডিএস। এরপর যে তারা কি শুরু করলো বিশ্ববাসীই বুঝলো না। সনি প্লেস্টেশন ১ যখন বের করলো নিনটেন্ডো ডিএস বের করলো, মাইক্রোসফট একবক্স। এরপর অবশ্য সনি ২, ৩, ৪ বের করলে নিনটেন্ডো অমন ধরণের সিরিয়াল মেন্টেন করে নি। আবার মাইক্রোসফট এক্সবক্স ৩৬০। ক্খনো সেটা গেমকিউব, থ্রি-ডিএস, সুন্দর গড়নের উই কন্সোল আনলো।
তখনো অ্যান্ড্রয়েড বের হয়নি। সময়টা ২০০৫। সনি অবাক করার মতো একটা খবর দিলো। আমরা যে গেম খেলি তার কন্ট্রোলার দুভাগ করে দিয়ে মাঝখানে একটা স্ক্রীণ বসিয়ে দিলো। এমনকি ওটাতে ডিস্ক ও ঢোকাতে পারবেন। যাকে ইউএমডি ডিস্ক বলে। সাধারণ সিডি ডিভিডির এক তৃতীয়াংশ সাইজের ওই ডিস্ক ঢুকিয়ে খেলা যেতো। এটাকে নাম দেয়া হলো সনি প্লেষ্টশন পোরটেবল বা পিএসপি যা বিশের জনপ্রিয় একটি হ্যান্ডহেল্ড গেমিং ডিভাইস। দশ বছর পিএসপি গো, ১০০০, ২০০০, ৩০০০ মডেল বের করে অসংখ্য গেম ডেভেলপা্রদের পকেট পুরে দিয়ে সনি ঘোষণা করলো পিএসপি উৎপাদন বন্ধ।(তবে পিএসপির গেম খেলা যায় অ্যান্ড্রয়েডে, জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।) এবার আসলো পিএস ভাইটা। আর এতেই মার খেলো সনি। অবশ্য ততোদিনে প্লেস্টেশন ৪ এসে গেছে।
মাঝখান দিয়ে পিসি বা কম্পিউটার গেমিং এর বাজারটাও বেশ বড় হয়ে গেছে। আমি আমার জীবদ্দশায় তিনবার বিল্ড করলাম। লাখ টাকা খরচ হলো তিন জেনারেশন এর তিনটা পিসি বানাতে। ২৫৬ এমবি র্যাম থেকে এখন ৩২ জিবি র্যামের পিসি চলে এসেছে। গ্রাফিক্স কার্ড ১২৮ এমবি থেকে এখন ৮ জিবি। আগে যারা কিনতেন ৩০ হাজার টাকার পিসি এখন একটা পিসি গেমিং এর জন্য কিনতে গেলে ২,৫০,০০০ টাকা লাগে। এদিকে গুগল তার অ্যান্ড্রয়েডের সবিস্তার ব্যবসা চারিদিকে শুরু করে দিয়ে চীনা পাড়ার অখ্যাত কোম্পানীও তার ফোনে অ্যাণ্ড্রয়েড অপারেটিং লাগিয়ে বাজারে ফোন বিক্রি শুরু করলো। শুধু এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ গেমিং অ্যাপ আপডেট করেছে প্লেস্টোরে। আর ভালো রকমের হাই কনফিগারেশন বলতে তো আইফোন আছেই।
সনি হ্যান্ডহেল্ড ব্যবসায় ধাক্কা খেলেও প্লেস্টেশনে রীতিমতো কন্সোলে এগিয়ে আছে। বাজারে কন্সোলের ধান্দায় তারা ২০২০ এর শেষ প্রান্তিকে এনেছে সনি পিএস ৫। এর সাথে মাইক্রোসফট এনেছে এক্সবক্স এক্স। তবে তাদের দাদু নিনটেন্ডো এনেছে ২০১৭ সালে যা গোটা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। যার নাম নিনটেন্ডো সুইচ।
এখন আবার শুনলাম পিএসপি ফাইভ-জি আসবে সামনে। যদি আসে তাহলে আমার ছেলের জন্য তুলে রাখবো আলমারিতে।
যতো যাই কিছু হোক এগুলোর বাইরেও কিন্তু উইন্ডোজ গেম, পিএসপি, নিন্টেন্ডো গেম খেলার হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসও পাওয়া যাচ্ছে। যদি গেম খেলতে চান পছন্দ করে বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন। সবার জন্য হ্যাপি গেমিং!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০০