somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট বছর আগের একদিন.।!!!!

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাস খানেক হয়ে গেছে, সাম্নের সপ্তাতেই হয়ত রেজাল্ট হয়ে যাবে, ২০০৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকের কথা, সেসময় এলাকার মধ্যে নিয়ম ছিল কেউ বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলে তাকে এলাকার মুরুব্বিদের সাথে তাব্লিগে যেতে হত, এটা থিক নিয়ম না, ব্লাকমেইল বলা যেতে পারে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের লোভ দেখিয়ে তাবলীগে নিয়ে যাওয়া আর কি। আর পরীক্ষার পরে সাধারনত খুব ভালো ছাত্রেরও মন দুর্বল থাকে, আর আমরা তো এমনিতেই খারাপ ছাত্র ছিলাম, সুতারাং বলাই বাহুল্য আমরা দল বেধে তাবলীগে নেমে পড়লাম।

ঠিক হল আমরা তিন দিনের তাবলীগে যাব, স্থান ঠিক হল কাকড়াইল জামে মসজিদ। আমাদের সাথে বেশ কয়েকজন মুরুব্বির সাথে সাথে এলাকার কিছু পরিচিত বড় ভাই ও ছিলেন, আর আমার সমবয়সী বলতে ছিলাম আমি আর আমার এক বন্ধু। জিবনে প্রথম বারের মত পরিবারের কাউকে ছাড়া বাইরে যাচ্ছি, সাথে আছে এক বন্ধু, আর কি চাই?? তাবলীগের সউয়াবের চেয়ে মাথায় তখন স্বাধীনতার আনন্দ স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। আর বয়সটাও নেহায়েত কমই ছিল, তাই পুন্য লাভের আনন্দের চেয়ে পিকনিক এর আনন্দই বেশি অনুভব করছিলাম।

বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সন্ধ্যার দিকে, কাকড়াইল মসজিদে জেয়ে পৌছুলাম রাত ৮টার দিকে, নামাজ পড়ে দল বেধে খাওয়া দাওয়া করলাম, খাবার নিয়ম ছিল এক প্লেটে দুই জন করে খেতে হবে, প্রথম দিকে এক প্লেটে দুই জন খাবার কথা শুনে একটু খারাপ লাগলেও পরিবারের কারও গার্জিয়ান গিরি বিহীন পূর্ণ স্বাধীনতা, আর বাসার বাইরে রাত কাটানোর উত্তেজনায় সব ভুলে গিয়ে খেতে বসে গেলাম। কোন এক বিচিত্র কারনে খাবারের স্বাদ হল অপূর্ব। খাবার দাবার শেষ হবার পর রাত ১০টার মধ্যেই সবাই ঘুমানোর বেবস্থা করে ফেললো। মসজিদের ভিতরেই হাজার হাজার মানুষ যে জেভাবে পেরেছে শুয়ে পরেছে, আমাদের দলের সবাই ঘুমানোর জন্যে কিছু না কিছু নিয়ে গিয়েছিল, কেউ কম্বল, কেউ স্লিপিং ব্যাগ, কেউ কাঁথা, আমার ঘুমানোর জায়গা ঠিক হল আমার বন্ধুর সাথে। বিছানা ঠিক মত করে বিছিয়ে আমি আমার বন্ধুকে বললাম চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি, বন্ধুটি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল যদি দলের মুরুব্বি কিছু বলে, তবে আমার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। আমরা বাথরুমে জাবার কথা বলে ঘুমন্ত মানুষদের ডিঙ্গিয়ে মসজিদের বাইরে চলে এলাম। তখন আমার বয়স ছিল কম, তার উপর হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ি নিয়মিত, সুতারাং মনের মধ্যে ছিল অন্যরকম অনুভূতি। হুমায়ুন আহমেদের কত বইতে তখন পরেছি রাতের ঢাকার অদ্ভুত সব গল্প, কিন্তু তখন পর্যন্ত কখনও রাতের ঢাকা স্বচক্ষে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে দেখা হয়নি। সেই ছিল প্রথম।

প্রথমে আমরা মসজিদ থেকে বের হয়ে ভি আই পি রাস্তা ধরে কিছুক্ষন হাটাহাটী করলাম, জুলাই মাস তাই সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হয়েছিল বলে রাস্তা ছিল ভেজা। পাশ দিয়ে হুস করে প্রাইভেট কার চলে যাচ্ছিল, আর নিজেকে কল্পনা করছিলাম উপন্যাসের কোন নায়কের সাথে। প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছিল। উপন্যাসে পরেছিলাম, গভীর রাতে নায়কেরা টং এর চায়ের দোকানে বসে চা খায়। তাই আমি আর আমার বন্ধু কাকড়াইল মসজিদের পাশেই একটি চায়ের দোকানে গেলাম চা খেতে। তখন রাত সাড়ে এগারটার মত বাজে। ঠিক বড় মানুষের মত করে আমরা পরপর দু কাপ চা খেলাম। এত রাতে চায়ের দোকানে বসে পরপর দু কাপ চা খাওয়ার যে এত আনন্দ তা এর আগে কোনদিন বুঝতে পারিনি। ঠিক তখন আবারো মুষলধরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমরা চায়ের বিল দিয়ে দৌরে মসজিদের বারান্দায় চলে এলাম। বাসায় কখনও রাত দু টার আগে ঘুমাইনি, তার উপর কিছুদিন আগেও পরীক্ষার জন্যে রাত জেগে পরেছি, তাই কিছুতেই ঘুম আসছিল না। আমরা দুজন তাই ঠিক করলাম গল্প করে রাত পার করে দেই। আমরা মসজিদের অজুখানার দিকের গেটে সিঁড়ির উপর বসে পরলাম। আমাদের থেকে দুই হাত সামনে বৃষ্টি পরছে আর তার ছাঁট এসে লাগছে আমাদের গায়ে, পাশের মেইন রোডে হলদে আলোয় হেডলাইট জালিয়ে খুব দ্রুততার সাথে বের হয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট কারগুলো। সে এক অদ্ভুত পরিবেশ। এইরকম পরিবেশে আমরা খুলে বসলাম আমাদের গল্পের খেরোখাতা। বিষয় ছিল প্রেম। খুব বেশিদিন হয়নি আমি প্রেমে পরেছি, তাই নব্য প্রেমে পড়ার ইতিবৃত্ত শোনাতে লাগলাম বন্ধুকে। বন্ধুটিও তখন সদ্য প্রেমে পড়ি পড়ি করছে, সেও তার সেই হবু প্রেমের গল্প শোনাতে লাগলো। এভাবে কখন যে রাত দুটা ত্রিশ বেজে গেছে তা টেরও পাইনি। এর মধ্যে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে, কমে গেছে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা। সেই চায়ের দোকান তখনও ছিল খোলা। কোন এক উপন্যাসে পরেছিলাম ঢাকার শহরে কিছু কিছু চায়ের দোকান সারারাত খোলা থাকে, এবারই প্রথম নিজের চখে তা দেখলাম। আমরা আবারো চায়ের দোকানে জেয়ে চা খেলাম। ঘুম আসছিলই না। রাত তিনটার দিকে আমাদের খেয়াল হল আমরা এখানে তাবলীগে এসেছি, আর জায়গাটা মসজিদ, এখানে চাইলেও ফজরের নামাজের সময় ঘুমিয়ে থাকা যাবে না, অথচ তখন আমাদের অভ্যাস ছিল রাত জেগে পড়া আর সকাল -১০টা পর্যন্ত ঘুমানো। অগ্যতা উপায় না দেখে ভাবলাম শুয়ে পড়া যাক।

আজ এই দীর্ঘ আট বছর আগের দিনের কথা হটাত মনে পড়ে গেল কেন ঠিক বুঝতে পারছি না। আজকের রাতের সাথে সেই রাতের কোন মিল কি আছে???
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×