গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। স্বাধীন রাষ্ট্রে নাগরিকের সকল যুক্তিসঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের মূল কর্তব্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি সংবিধান তৈরি করিয়েছেন। আমরা ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক বলে সংবিধানের আদি স্বীকৃতি বজায় রাখার জন্য।
২০১১ সনের ১৩ জুলাই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে নাগরিকের যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করবে। ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে মুদ্রিত আছে, সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। অনুচ্ছেদ ২৭ এ বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সমতা নিশ্চিতকরণের কথা। এই অনুচ্ছেদে লেখা আছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয় শুধু নাগরিক হিসেবে সংবিধানের উল্লিখিত অনুচ্ছেদ অনুসারে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারলে হয়তবা ইতিহাসের জঘন্যতম কালো অধ্যায়টির সূচনা নাও হতে পারত। ১৫ আগস্টের সেই বিভিষিকাময় রাতে বিপথগামী সরকারি-বেসরকারি লোকজন সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন বিধায় বাংলাদেশ আজ অভিভাবকহীন।
একটি অপরাধও সংবিধান লঙ্ঘন ব্যতীত সংঘটিত হয় না। আমরা চাই না বারবার আমাদের সংবিধান লঙ্ঘিত হোক। রাষ্ট্র নাগরিকের জান মাল ও সামজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এটি নাগরিকের দয়া ও করুণা নয় সাংবিধানিক অধিকার মাত্র।
১০ ফেব্রুয়ারি রাতে উদীয়মান সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিজ বেডরুমে নৃশংসভাবে খুন হন। যেহেতু আইনসঙ্গত ভাবে তারা বৈধ স্বামী-স্ত্রী এবং নিজ বেড রুমে শান্তিপূর্ণ ও সহ অবস্থানে ছিলেন সেহেতু এই ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম শব্দটির বত্যয় ঘটেনি। সাগর-রুনি যেহেতু বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক সেহেতু সংবিধানের ১৫(গ) ও (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারেই তাদের বেডরুম শুধু নয় বাড়ি তথা সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বাধ্য ছিল।
স্বাধীনতার ৪০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গকারী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ওপর বর্বরোচিত নৃশংসতার পর নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের দুঃখ প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথিত মনভোলানো রাজনৈতিক বক্তব্য এমনকি নাগরিকের বেডরুমের নিরাপত্তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর অসহায়ত্ববোধ করা আমাদের কারো কাম্য নয়। জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানিদের হটিয়ে অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। অথচ তিনিই নিরাপত্তার অভাবে নৃশংসভাবে সপরিবারে শহীদ হলেন। সেই নেতার ঔরসজাত উত্তরসূরী এবং বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে নাগরিকের সাংবিধানিক নিরাপত্তা দেয়ার অসহায়ত্বের কথা বাঙালি জাতির কাছে অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়।
আমরা সাধারণ নাগরিক। সংবিধান বোঝার মত বিশেষজ্ঞ নই। শুধু সংবিধানের বাংলা সংস্করণ পড়ে নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকারগুলো সংরক্ষণের দাবি জানাই।
আমরা দেশের খেটে খাওয়া নাগরিক। হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনির পর ক্লান্ত হয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুমানোর সময় গভীর ঘুমে যাতে কেউ আমাদের উপর পিশাচের মত হামলা না করে, মানুষ যেন দৈত্য বেশে মানূষের উপর ঝাপিয়ে না পরে সেই নিরাপত্তাটুকুই চাই। আমরা শান-শওকাত চাই না, চাইনা পদ্মা, লাগবে না যমুনা, সুগন্ধা আর গণভবন। ওগুলো আপনাদের জন্যই।
নিম্নশ্রেণীর কর্মজীবী মানুষের কর্মস্থল ময়লার ডাস্টবিন আর বনের পাতায় যেন বোমা না থাকে। নদীর পাড়ে বিলের ধারে ছোট গাছের ছায়ায় ক্ষুধার্ত মানুষের ডাল ভাত আর শুকনো রুটির উপর যেন আক্রমণ না হয়। ফুটপাতের পলিথিনের ঘরে অথবা মাটি ও ইটের পাঁজরের ছোট বিছানায় শিশু সন্তানের সামনে ক্লান্ত বাবা-মার ঘুমন্ত দেহ আর যেন রক্তাক্ত না হয় ন্যূনতম সেই নিরাপত্তাটুকু চাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।
নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা বিছানায় যে দেশে রাষ্ট্রপতি খুন হয় সে দেশে নিরাপত্তাহীন নাগরিকের নিরাপত্তা চাওয়া লজ্জাকর হলেও রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারেই আমাদের চাইতে হয়। নাগরিক নিরাপত্তা চাওয়ার অধিকার রয়েছে বিধায় চাই তবে এটিকে করুণা বা দয়া ভেবে উপহাস করা উচিত নয় ।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, ভোট দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী বানাই; কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভোটে আমাদের নাগরিক হতে হয় না। যে শর্তে আমরা ভোট দেই সে শর্তের কথা মনে না থাকলে ভোট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার পূরণ হয়ে যায়। তবে অর্পিত দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে উপহাস করলে ভবিষৎ আস্থার জায়গা অনাস্থায় ঘিরে যায় ও জাতি আস্থার সন্ধানে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় তা অনুভব করতে পারে না।
জাতি আশা করে, সরকার শপথকে সমুন্নত রেখে সংবিধান অনুসারে নাগরিকদের নিরাপত্তা সহ মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী
বাংলাদেশ সময় ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বেডরুমের নিরাপত্তা সংবিধানের ১৫(গ) অনুচ্ছেদের অধিকার
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ



ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।