somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ-জন্মদাগ

১১ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুক রিভিউ
জন্মদাগ
লেখক-ফরহাদ আহমেদ
প্রকাশন-চয়ন প্রকাশন
মূল্য-২০০ টাকা।

তরুণ কথা সাহিত্যিক ফরহাদ আহমেদ এর উপন্যাস জন্মদাগ পড়লাম। লেখকের প্রথম গ্রন্থ সালিশও পড়েছিলাম। ফলে জন্মদাগ বেশ আগ্রহ নিয়েই পাঠ করেছি। জন্মদাগে লেখক সালিশের মতোই নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। যেটি একজন তরুণ লেখকের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ব্যাপার।

লেখক লেখার জন্য গ্রামীণ প্রেক্ষাপট বেছে নেন, এটি আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গ্রাম হবে শহর, সরকারের এই উদ্দেশ্যের ফলে গ্রামেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ফলে গ্রামের আসল সৌন্দর্য উপভোগের সময়কার ঘটনাবলী ও সংস্কৃতিকে লেখনির মাধ্যমে তোলে ধরা দারুণ ব্যাপার। গল্পে গল্পে ইতিহাসের অংশ হওয়ার মতো কাজ এটি। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে লেখতে চেষ্টা করি। ফলে ফরহাদ আহমেদের গল্পের প্লট, শব্দের গাঁথুনি এবং ভাবনা আমাকে তাঁর পাঠক বানিয়েছে ইতোমধ্যেই।

জন্মদাগে লেখক গ্রামীণ রাজনীতি, ডাকাতির ঘটনা ও শহরের কলেজের এক হিন্দু মেয়ে ইন্দিরা ও মুসলিম ছেলে শুভর মধ্যকার সম্পর্ক ও তাদের সম্পর্কের জেরে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার অবতারণা করেছেন।

চেয়ারম্যানদের ক্ষমতার লোভ এবং এক চেয়ারম্যানের গোপনে ডাকাত দলের নেতৃত্ব দেয়ার ঘটনা জন্মদাগ বইয়ের প্রাণ। চেয়ারম্যানের সহযোগী বা ডান হাত কলেজ পড়ুয়া শুভর বাবা সেকান্দার সৎ ভাবে জীবন যাপন করলেও নিজের মেয়ের বিয়েতে চেয়ারম্যান সমস্ত খচর বহন করায় চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা জন্মদাগ বইয়ে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টায় ডাকাতির ঘটনা চিরতরে বন্ধ করার আন্দোলন যখন সফলতায় রূপ নেয়ার অপেক্ষায় তখনই ঘটেছে গল্পের সবচেয়ে রহস্যজনক ঘটনা।

পাশাপাশি সন্দেহের বশে কান কাটা এক ব্যক্তিকে ডাকাত ভেবে মেরে ফেলার পর যখন শেষে যা জানা যায়, তা পাঠকদেরও আক্ষেপ বাড়াবে, যাতে আমাদের সমাজের প্রচলিত নষ্ট চিত্রও ফুটে উঠেছে।

অপরদিকে ইন্দিরার সাথে শুভর সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলেও পূজার সময়ে ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্যের জেরে ইন্দিরার ভাইয়ের করুণ পরিণতি আমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির চিত্র ফুটে উঠেছে।

শুভ ইন্দিরাকে ছেড়ে গ্রামে চলে এসে যা জানতে পেরেছে এর ফলেই তৈরী হয়েছে জন্মদাগ, যা শরীরে না থাকলেও আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

শেষাংশে ইন্দিরা ও শুভর সম্পর্কের ভবিষ্যত বিষয়ে বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে বাক্যচয়ন করেছেন তা পাঠকের জন্য রহস্য হয়েই থাকুক।

শুভর কঠিন বাস্তবতার উপলব্ধিতে ইন্দিরার কাছে আর ফিরে না যাওয়ার বিষয়টি পাঠক হিসেবে আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। লেখাকে পাঠকের মনে গেঁথে দিতে লেখকের চেষ্টায় সফল হয়েছেন বলতে হবে।

লেখক শহরের ও গ্রামের ঘটনা সাজিয়েছেন বই জুড়ে। ৩১টি পয়েন্টে লেখা সাজাতে এগিয়ে এক পয়েন্টে গ্রামের কথা, আরেক পয়েন্টে শহরের কথা বলেছেন। এটি লেখকের বিশেষ প্রচেষ্টা হলেও পাঠকের মনযোগ নষ্ট করেছে। দুটো প্রেক্ষাপটের যোগসূত্র থাকলেও সেটি শেষের দিকে প্রকাশ হয়েছে। ফলে শুরু থেকে একসাথে দুটি গল্পের অবতারণা মনে হয়েছে। যা মূলত একত্রে ভাবতে গেলে কঠিন মনে হবে গল্প বুঝার ক্ষেত্রে। এভাবে লেখাতে পাঠক মনযোগ সহকারে পড়ার বদলে বিরক্ত হতে পারে।

তাছাড়াও লেখক ছোট বড় অসংখ্য চরিত্র এনেছেন গল্পে। এতো এতো নাম নিয়েছেন যে, বই পড়া শেষের পর চরিত্রগুলো মনে রাখা দূরহ হয়ে পড়েছে। লেখক যদি এগুলোকে তোলে ধরতেই হতো, টাইপের বাধ্য হয়ে থাকেন, তাহলে এটা পরিহার করতে হবে পরবর্তী গল্প থেকে। অনিচ্ছাকৃত হলেও পরিহার জরুরি। পাঠকের মনে গল্পটাকে সব সময়ের জন্য গেঁথে দিতে অতিরিক্ত চরিত্রের অবতারণা পরিহার জরুরি।

চরিত্রগুলোর ডায়লগের বাহিরে লেখকের নিজস্ব কথাগুলোতে যথেষ্ট ভালো বর্ণনা করেছেন। তবে লেখকের কথাগুলোতে বড় বড় বাক্যের ফলে লেখার মানে বুঝতে সময় লেগেছে। সাধু চলিত মিশ্রণ বা দুএকটা বানান ভুল লক্ষ্য করা গেলেও এসব স্বাভাবিক বিষয়ই।
সবমিলিয়ে লেখককে সফল বলেই আমি মনে করছি। এভাবে কাজ করতে পারলে ফরহাদ আহমেদ ভবিষ্যতের একজন সফল, জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হবেন আমি বিশ্বাস করি।

লেখকের প্রথম বই -সালিশ-। চয়ন প্রকাশন থেকে ২০২২ বইমেলায় প্রকাশিত।

জুবায়ের আহমেদ
গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×