somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগামী ৬ জুন দেখা যাবে আমাদের জীবদ্দশার সর্বশেষ শুক্রগ্রহ ট্রানজিট

০১ লা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যের উপর দিয়ে কোন গ্রহের অতিক্রম করার বিষয়টি একটি দুর্লভ মহাজাগতিক ঘটনা। পৃথিবী থেকে দেখলে শুধুমাত্র বুধ এবং শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটা সম্ভব। গড়ে প্রতি একশ বছরে ১৮ বার সূর্যের উপর দিয়ে বুধ গ্রহের চলন ঘটে থাকে। আর শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে প্রতি একশ বছরে ঠিক আট বছরের ব্যবধানে দুই বার। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়বার পৃথিবীবাসী শুক্রের এই ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করা সুযোগ পেয়েছে। এই বছর ৬ জুন সকালে বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে আমাদের জীবদ্দশার সর্বশেষ শুক্র ট্রানজিটটি। এরপর আবার অপেক্ষা ১০৫ বছর। ২১১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর পুনরায় পৃথিবী থেকে দেখা যাবে এই দুর্লভ মহাজাগতিক ঘটনাট।

এই শতকে সূর্যের উপর দিয়ে শুক্রের প্রথম চলন ঘটেছিল ২০০৪ সালে। স্বভাবতই এই জোড়ার দ্বিতীয় চলনটি ঘটবে এই বছরে, বাংলাদেশের হিসেবে আগামী ৬ জুন, ২০১২ তারিখে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ট্রানজিট অব ভেনাস’। এক্ষেত্রে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে একই সরলরেখায় শুক্র গ্রহ চলে আসে এবং সূর্যের উপরে শুক্রের চলমান ছায়া পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হবে। এই ব্যাপারটি অনেকটা সূর্যগ্রহণের মতই, শুধু চাঁদের পরিবর্তে শুক্র গ্রহ অবস্থান করে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব চাঁদের দূরত্বের চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি। তাছাড়া সূর্যের ব্যাসও চাঁদের ব্যাসের তুলনায় ৪০০ গুণ বড়। তাই পৃথিবী থেকে দেখলে চাঁদ ও সূর্যের আয়তন হুবহু একই রকম মনে হয়। একারণে সহৃর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যের উজ্জলতম অংশকে পরিপূর্ণ বা আংশিকভাবে ঢেকে ফেলতে পারে। কিন্তু শুক্রের চলন বা ট্রানজিটের সময়ে তার অবস্থানগত কারণে সূর্যকে আড়াল করতে পারে না। ফলে সূর্যের উপর দিয়ে অতিক্রমের সময় সূর্যের উজ্জ্বল চাকতির উপর শুক্রকে একটি কালো বিন্দুর মত মনে হয়।

বুধ ও শুক্র গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের উপর হেলানো রয়েছে বলেই পৃথিবী থেকে আমাদের সৌরজগতের এই দুটি গ্রহের ট্রানজিট দেখা সম্ভব। শুক্রের ক্ষেত্রে গড়ে প্রতি ১.২৫ শতকে দুটি ট্রানজিট ঘটে থাকে। দেখা গেছে শুক্রের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষতলকে জুন এবং ডিসেম্বর মাসের শুরম্নর দিকে অতিক্রম করে। ফলে এই সময়ের দিকে শুক্র গ্রহ যদি সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থান করে তবেই এই ধরনের ট্রানজিট ঘটা সম্ভব।

কোন শতকে শুক্রের প্রথম ট্রানজিটটি ঘটার ঠিক ৮ বছর পরে দ্বিতীয় ট্রানজিটটি ঘটে থাকে। এর কারণ হলো শুক্রের (২২৪.৭০১ দিন) এবং পৃথিবীর (৩৬৫.২৫৬ দিন) কক্ষপথ পরিভ্রমন কালে প্রতি ৮ বছর পর পর পরস্পরের রেজোন্যান্স ঘটে। অন্যভাবে বলা যায়, এই সময়ে পৃথিবী সূর্যকে আটবার প্রদক্ষিণ করে আর শুক্র তেরোবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবী ও শুক্র এই ৮ বছর পর পর একই সরলরেখায় আসে।

১৬২৭ সালে জ্যোতির্বিদ জোহান্স কেপলার গ্রহগতি সংক্রানত্ম যে তালিকা প্রকাশ করেন সেখানে গ্রহগুলোর ভবিষ্যত অবস্থান এবং তাদের কিছু অদ্ভুত বিন্যাসের বিসত্মারিত তুলে ধরেন। তিনি তখন বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন, সৌরজগতের শুধুমাত্র বুধ ও শুক্র গ্রহ সূর্যের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তিনি হিসেব কষে বের করেন ১৬৩১ সালের শেষের দিকে বুধ ও শুক্র উভয়েরই এরকম চলন ঘটবে কিন' এই ঘটনার পূর্বেই কেপলার মারা যান। কিন্তু ফরাসী জ্যোতির্বিদ পিয়েরে গ্যাসেন্দি বুধের এই ট্রানজিটের প্রথম প্রতক্ষ্যদর্শী হয়েছিলেন। তিনি পরবর্তী মাসে শুক্রের ট্রানজিটটিও পর্যবেক্ষণের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু আধুনিক হিসেবে দেখা গেল এই ট্রানজিটটি ইউরোপ থেকে দৃশ্যমান হবে না। কেপলার হিসেব অনুযায়ী পরবর্তী শতাব্দীর পূর্বে আর শুক্রের ট্রানজিট দেখতে পাবার কথা নয়। একজন তরম্নণ ও শৌখিন ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জেরিমিয় হরক্স অনুমান করেন শুক্রের পরবর্তী ট্রানজিটটি ১৬৩৯ সালে সংঘটিত হবে। এই ট্রানজিটের মাত্র মাসখানেক আগে তিনি নির্ভূলভাবে ট্রনজিটের সময় হিসেব করতে সক্ষম হলেন। তিনি ও তার বন্ধু উইলিয়াম ক্যাবট্রি ১৬৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত এই মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হন।

এই ঘটনার প্রায় চলিস্নশ বছর পর তরম্নণ অ্যাডমন্ড হিলারি দক্ষিণ গোলার্ধের নক্ষত্রের ক্যাটালগ তৈরির সময়ে ১৬৭৭ সালের বুধের ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করেন। হ্যালি লক্ষ্য করেন এই ট্রানজিটের সাহায্যে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব নিরূপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বুধের চেয়ে শুক্রের ট্রানজিটই বেশি গ্রহণযোগ্য কারণ শুক্র অপেক্ষাকৃত পৃথিবীর নিকটবর্তী। তিনি ১৭১৬ সালে এই বিষয়ে একটি রচনাও প্রকাশ করেন।
৬ জুন বাংলাদেশ সময় রাত ৪টা ৯ মিনিট নাগাদ প্রথম সূর্যের গায়ে দাগ ফেলবে শুক্র। প্রক্রিয়াটি শুরুর ঘণ্টাখানেক পরে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই তা দেখতে পাবেন এ দেশের মানুষ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে মহাজাগতিক দৃশ্যটি দেখা যাবে। বাংলাদেশের সকল অঞ্চল থেকেই মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে এই ট্রানজিট দেখা সম্ভব হবে।
শুক্রের চলনের বিভিন্ন দশার সময় (সকাল):
১ম স্পর্শ ৪টা ০৯মি. ৩৮সে.
২য় স্পর্শ ৪টা ২৭মি. ৩৪সে.
সর্বোচ্চ চলন ৭টা ২৯মি. ৩৬সে.
৩য় স্পর্শ ১০টা ৩১মি. ৩৯সে.
৪র্থ স্পর্শ ১০টা ৪৯মি. ৩৫সে.

২১১৭ সালের ১১ ডিসেম্বরের আগে পৃথিবী থেকে শুক্রের ট্রানজিট আর দেখা সম্ভব হবে না। তাই আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই দুর্লভ সুযোগটি মিস করবেন না। আর খালি চোখে কখনোই সূর্যের দিকে তাকাবেন না। যথাযথ ফিল্টার বা ওয়েল্ডিং গ্লাস ব্যবহার করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×