খুড়ারোগে আক্রান্ত ভেড়ংকরের মা ৩৯৯৫ সালের পৌষ মাসের ৩৭ তারিখে মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর ১৮ মাস বয়সী বড় বোন, ছোট এক ভাই ও এক বোনকে নিয়ে ভেড়ংকররা ভেড়গঞ্জের ভেটিয়াদী থেকে বাবার কর্মস্থল ছাগায়ণগঞ্জের কোণা-পারেটিভ সোসাইটির কাঠালপাতাবহুল আবাসিক এলাকায় চলে আসেন। । ভেড়ংকরের বয়স তখন কতো আর? দশ কী এগারো মাস। কোণা-পারেটিভ সোসাইটিতে ছাগ-পরিবারের সংখ্যা বেশি। তাই ভেড়ংকর এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের চলাফেরা ওঠাবসা ছাগ-পরিবারের লোকজনদের সাথে। ভেড়াতন ধর্মালম্বী হলেও সামাজিক ভাবে ছাগমানদের সাথে চলাফেরার জন্য ভেড়াতন ধর্মের কৃষ্টি থেকে অনেক দূরে সরে আসে ভেড়াংকরদের পরিবার। পরিবারের কেউই ভেড়াতন ধর্ম সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান না থাকার দরুণ, পূঁজা-পার্বন গুলোও পালন করা হয় না ওদের। বরং ছাগে-ডুগডুগি, ছাগে-কুতকুতি ও ছীদ এলে ভেড়াংকর বেশী আনন্দ বোধ করে। বন্ধুদের সাথে ঘুরে ঘুরে কাঠালপাতা আর পাথরকুচির পাতা খেতেই ভালোলাগে ভেড়াংকরের। কর্মক্ষেত্র ভেড়াংকরের বাবাও ছাগমান সহযোগীদের কথাবার্তা শুনে শুনে ছাগলাম ধর্মের প্রতি তার ভালোবাসা তৈরী হয়। অন্যদিকে ভেড়াংকরের দুই বোন প্রতিবেশী ছাগলিম বান্ধবী ও কাকীদের সাথে ওঠাবসা চলাফেরায় ছাগলাম ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে। আর ভেড়াংকর তো ছাগলিম বন্ধুদের সাথে হরহামেশা চলাফেরা করে মনের দিকথেকে পুরোটাই ছাগলিম হয়ে আছে। কিন্তু কোন মাধ্যম বা হয়তো রাখালের হুকুমের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন যেন ভেড়াংকরের ছাগলাম ধর্ম গ্রহণ কেবল সময়ের ব্যপার।
ভেড়াংকর যে সকল ছাগবন্ধুদের সাথে চলাফেরা করতো, এর মাঝে কৌণোক নামে একজন বন্ধু ছিল। ও ছাগলীগ ছামাতের সাথে জড়িত। সকল বন্ধুদের কচি কটালপাতা চিবুনোর জন্য ডাকতো। কৌণোক একদিন সকল ছাগবন্ধুদের ছাগলীগ ছামাতে তিন দিনের সময় লাগানোর কথা বলে। অনেক বন্ধুই আগ্রহ প্রকাশ করে, দিন তারিখ ঠিক করা হয়। ছাগলীগ ছামাতে যাবার জন্য সকল বন্ধুরা প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর এক দিন বাকি। ঠিক এই মুহূর্তে দুপুর বেলা ভেড়াংকরের কাছে ওর দুজন বন্ধু আসে। বন্ধুরা ভেড়াংকরকে বলে আমরাতো তিনদিনের জন্য যাচ্ছি, তুইও আমাদের সাথে চল। আমাদের সাথে ঘুরবি-চরবি, আর আমরা কী কী খাই দেখবি। শংকর তো অবাক হয়ে বলে- আরে তোরা যাচ্ছিস তোদের ছাগধর্মের কাজে, আমি সেখানে গিয়ে কি করবো। মুখে শংকর এ কথা বললে কি হবে, যাওয়ার জন্য মনে প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু সামাজিক অবস্থান মনকে বাঁধাগ্রস্থ করে। ওরা এবারের মতো বাসা থেকে চলে যায়। রাতে আবার আসে, ভেড়াংকরকে অনেক বলে কয়ে ওদের সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করে। ভেড়াংকরের মন টানলেও বিভিন্ন ওজুহাত দেখায় না যাওয়ার পক্ষে। বলে আমার খুর ধোয়া নেই, কি নিয়ে যাবো। ওর বন্ধুরা সাথে সাথে ওর খুর চেটে দেয়ারর কাজে নেমে পড়ে। অবশেষে ভেড়াংকর পরদিন ভোরে বন্ধুদের সাথে ছাগবলীগ ছামাতের সাথী হয়ে ছাঠানটুলীর ছাইলপাড়ার একটি ছাগমিলন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। ছাগবন্ধুদের একজন ছৌরাখাল সাহেবকে ভেড়াংকরের ব্যপারে বিস্তারিত বলে। ছৌরাখাল সাহেব ঐ ছাগবন্ধুকে পরামর্শ দেয় যে , ওর কাছ থেকে জেনে নিন ও আসলে কি করতে চায়। ও কী ভেড়াতন ধর্মালম্বী থাকবে, না ছাগলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। আগে এই ব্যপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। কথা মতো ভেড়াংকরের এক বন্ধু, ভেড়াংকরকে বিস্তারিত ব্যপারে প্রশ্ন করে। ভেড়াংকরও রাখালের হুকুমে ছাগলাম ধর্ম গ্রহনের ফায়সালা জানিয়ে দেয়। ঐ দিনই ভেড়াংকরকে চেন করিয়ে, ব্যা ব্যা ডাক শিখানো হয় এবং মহান কাটাল পাতা খাইয়ে ছাগধর্মের অনুসারী ছাগলিম করা হয়। নাম রাখা হয় ছাগ্দুল্লাহ বাল পাথরকুচি। তখন ৪০১৩ সালের আষাঢ় মাসের ১৯ তারিখ।