মসজিদে নববী থেকে রাসূল সা: এর দেহ মোবারক কি আসলেই সরানো হচ্ছে নাকি স্রেফ একটি প্রপাগান্ডা এটি যার আড়ালে রয়েছে সুদুরপ্রসারী কোন ষড়যন্ত্র.?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ব্রিটেনভিত্তিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডেইলি মেইল, ও টেলিগ্রাফের বরাত দিয়ে গতকাল সারাদিন নিউজফিডে এরকম একটি নিউজ শেয়ার করতে দেখলাম যে, মসজিদে নববী থেকে নবীজীর স. দেহ মোবারক সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনলাইন পোর্টালগুলোও নিউজটাকে হটকেক হিসেবে নিয়ে নিল।
এ সম্পর্কে আরবীতে খুঁজতে গিয়ে এই লিংকটি পেলাম: Click This Link - এতেও ইংরেজি পত্রিকাগুলোর ন্যায় শিরোনাম করা হয়েছে। তবে ভেতরে পড়তে গিয়ে জানতে পারলাম ড. আলী বিন আব্দুল আযীযের "عمارة مسجد النبي عليه السلام ودخول الحجرات فيه دراسة عقدية" শীর্ষক গবেষণার সূত্রে তারা এ কথাগুলো বলছেন।
আরবী গবেষণার শিরোনামটি সার্চ করতেই গবেষণাটি মাজমা'য়াহ ইউনিভার্সিটির সাইটে পাওয়া গেল, যেখানে সম্ভবত তিনি ফ্যাকাল্টি। Click This Link আরবী নিউজটিতে এখান থেকে বেশ কিছু কোটেশন আনা হয়েছে। এতে নিশ্চিত হলাম, ডকুমেন্ট এটাই, যা নিয়ে কথা হচ্ছে।
প্রথম কথা হলো, এটা মূলত মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ ও সংস্কারের ইতিহাস, বিশেষ করে আম্মাজান আয়েশা রা. এর হুজরাসহ (যেখানে নবীজী স. শায়িত) অন্যান্য হুজরাকে মসজিদে অন্তর্ভুক্তিকরণের ইতিহাস, এবং শেষে ওনার কিছু প্রস্তাবনা। এটা মোটেও কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
গবেষণাটা ও শেষের প্রস্তাবনাগুলো সময় নিয়ে পড়লাম। ইতিহাসটা জেনে খুব ভালো লাগল, তবে সংস্কারের বিষয়গুলো আসলেই খুব কষ্ট দিল। শেষে ওনার প্রস্তাবনাগুলোও খুব চমৎকার। এখানে রাসূল স. এর দেহ মোবারক সরানোর বিন্দুমাত্র কথাও নেই। অথচ এটাকেই শিরোনাম করছে সবাই।
গবেষণাটি পড়লে স্পষ্ট বুঝা যায়, তিনি ইতিহাসের নিরিখে মসজিদে নববীর সংস্কার ও বিবর্তন তুলে ধরেছেন। যুগে যুগে নানা আমীর-সুলতানের আমলে নানা নতুন বিষয় সংযোজনের কথা তুলে ধরেছেন।
এর শুরু প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে উমাউয়ী খলীফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিকের মাধ্যমে। তিনিই প্রথম আম্মাজান আয়েশা রা. এঁর হুজরা (যেখানে রাসূল স. এঁর কবর) ও অন্যান্য হুজরাকে মসজিদে নববীর অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন, যা খলীফা ওমর রা. ও উসমান রা. কেউই করেন নি। ওনাদের সময় মসজিদের অন্য তিন পাশ দিয়ে মসজিদ বড় করা হয়েছে, এই পূর্ব দিকটাকে ধরা হয় নি। যেন রাসূল স. এর কবর মসজিদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যায়, আর কবরকে মসজিদ বানাতে রাসূল স. নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইয়াহুদী ও নাসারাদের লা'নত করুন, এরা এদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। (বুখারী: ১৩৯০)
যাহোক, তাবেয়ীদের বিশিষ্ট সাত ফকীহসহ অন্যদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তৎকালীন খলীফা হুজরাকে মসজিদের ভেতর নিয়ে নেন। এরপর একে একে যুগে যুগে এ মসজিদে নানা ডিজাইন, মূল্যবান পাথর, মোজাইক ইত্যাদি সংযুক্ত হয়। হুজরার ওপর গম্বুজ হয়, সুলতানদের নাম খচিত মিম্বর আসে, হুজরা ও কবরের ওপর নানা আয়াত লিখিত পর্দা আসে। প্রায় প্রত্যেক খলীফাই এগুলোর পেছনে অঢেল টাকা-পয়সা খরচ করেন। এর মধ্যে দেয়ালে ও কলামে বিভিন্ন বিদয়াতী/ শিরকী কথার শ্লোকও আসে।
সবশেষে তিনি প্রথম যে প্রস্তাব করেছেন সেটা হলো, হুজরার পূর্ব দিক থেকে দেয়াল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে আহলুস সুফফার জায়গাসহ ওদিকে বাবে জিবরীল পুরোটাকে দেয়াল দিয়ে দিতে, যদিও সেটা কাঠের হয়। এতে রাসূলের স. কবর ও হুজরাগুলো মসজিদ থেকে আলাদা হবে, যা রাসূলেরই স. নির্দেশ। আর বিদয়াতীরা এসব জায়গা ব্যবহারের সুযোগ কম পাবে; একইভাবে ফাতিমা রা. -র হুজরাকে কেন্দ্র করে শীয়াদের তৎপরতাও রোধ হবে।
এছাড়া হুজরার দেয়াল ও কলামের ওপর লেখা প্রশংসাসূচক শ্লোকগুলো মিটিয়ে দিতে, যেন শিরকের পথ বন্ধ হয়। এবং দুই পাথুরে জায়গায় লেখা সাহাবীদের নাম ও বারো ইমামের নাম মুছে ফেলতে, যেন এগুলোকে কেন্দ্র করে হওয়া ফাসাদ বন্ধ হয়। এবং সবুজ গম্বুজকে আর সংস্কার না করতে এবং এর ওপরের তামার প্রলেপও যথাসম্ভব মিটিয়ে দিতে। (এগুলো রাসূল স. ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ছিল না। মসজিদের এসব অতিরিক্ত নকশা মূলত পারস্য/রোম ও চীনাদের প্রভাব, গবেষণায় তা তিনি দেখিয়েছেন। এর আগে মসজিদ ছিল সাদামাটা।)
আর সম্প্রসারণ যেন কিবলার দিকে করা হয়। উমর রা. ও কিবলার দিকে সম্প্রসারণ করেছিলেন। কিবলার দিকে দেয়াল ভেঙে তা আরো সামনের দিকে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
সবশেষে তিনি মসজিদে নববীর প্রয়োজনগুলো গবেষণার জন্য উলামাদের একটি টিম গঠনের সুপারিশ করেন, যেন মানুষের ঈমান-আক্বীদা সুরক্ষিত থাকে।
সবমিলিয়ে ওনার গবেষণাটি আমার কাছে দালীলীক ও যৌক্তিক মনে হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, নিউজটা ছড়াচ্ছে কোথা থেকে?
নিউজটা মূলত করেছে ইউকের ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ড. ইরফান আলাউইর বরাত দিয়ে। ওনার পরিচয়ে যাব না, গার্ডিয়ানে ওনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও নিউজগুলো রয়েছে। (Click This Link) মূল গবেষণা থেকে নিউজটি মাইলের পর মাইল দূরে অবস্থান করছে। নিউজটা পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে।
আরব বিশ্বের বলতে গেলে বড় কোনো পত্রিকায় এসব কভার করে নি, কভার করার মতো কিছু হয় নি বলে। আরবী-ইংরেজী-বাংলাসহ সব ভাষাতেই শিয়া ও বিদয়াতীদের এই নিউজ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পেছনে কী কারণ, তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। সবমিলিয়ে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। এবং তাহকীক (যাচাই) ছাড়া নিউজ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার তাওফীক দিন। আমীন।
==
লিংকসমূহ:
১. ইন্ডিপেন্ডেন্টের মূল নিউজ: Click This Link
২. ড. ইরফান আলাউই: Click This Link
৩. একটি আরবী নিউজ: Click This Link
৪. ড. আলী বিন আব্দুল আযীযের "عمارة مسجد النبي عليه السلام ودخول الحجرات فيه دراسة عقدية" শীর্ষক গবেষণা: Click This Link
সূত্র : মাওলানা ইউছুফ সুলতান ভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে
ফেসবুক লিংক https://www.facebook.com/myousufs
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে
ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন