somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ভুল মানবী

১২ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অরু পা চালাতে চালাতে পেছনের রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে নেয়। নাহ। লোকটাকে আর দেখা যাচ্ছেনা। হয়তো মেইন রোড ধরে হাঁটছে দেখেই আর পিছু নেয়ার সাহস করেনি। বেশ কয়েকদিন থেকেই লক্ষ্য করছে অফিস থেকে বেরোনোর পরই পরই একটা লোক তাকে ফলো করছে। লম্বা করে শুকনা মতো একটা লোক। সেদিন তো প্রায় বাসার সামনের গলি পর্যন্ত চলে এসেছিলো। গোঁদের উপর বিষফোঁড়া। একদিকে বড়মামার অত্যাচারে বাসায় টেকাটাই দায় হয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে অফিসের প্রোমোশনটাও আটকে আছে। তার উপর এইসব আজাইরা ঝামেলা। ভেবেছিলো প্রোমোশনটা হয়ে গেলেই ছোট ভাইয়ের কলেজের কাছাকাছি একটা ছোটখাটো বাসা ভাড়া করে ফেলবে। মামার বাসায় পরগাছার মতো আর না। বড়মামার স্বভাবই হল খাবেদাবে আর দিনে দুই বেলা করে ভাষণ দেবে। তার সব ধরণের ভাষণের মুল বক্তব্য হলঃ ঢাকা শহরে বাসা ভাড়ার প্রবৃদ্ধি এবং বোন ও তার ছেলেমেয়ে কর্তৃক রুম অপদখলের কারনে গচ্চা যাওয়া টাকার পরিমান। আর পাকাপোক্ত কোন উসিলা পেলে তো কথাই নেই। কানে মুখে তুলো গুঁজেও পার পাওয়া যায়না। আজ যদি দেখে ঘড়ির কাঁটা ছয়টা পেরিয়ে গিয়েছে অথচ এখনো অরুর খবর নেই, তার তো পুরো বারোটার খবর হয়ে যাবে। অরু হাটার গতি বাড়িয়ে দেয়। ঘরে ঢোকার মুখেই এসব শুনতে ইচ্ছে করেনা। পাশ দিয়ে একটা বিশাল বাস সাই সাই করে চলে গেলো। সে ভ্রূক্ষেপও করলোনা। মেজাজটা আজকে ভীষণ রকম তিরিক্ষি হয়ে আছে। অফিসে কাজের চাপে লাঞ্চ করারও কপাল হয়নি। শুধু মাসের শেষে স্যলারিটা ভালো দেয় বলে এখনো সহ্য করে যাচ্ছে। শুধু প্রমোশনটারই অপেক্ষা। কবে যে দিবে!

হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ, অরু নিচে তাকিয়ে দেখে বাম পায়ের জুতার বেল্ট পুরোটা ছিড়ে এসে তার গোড়ালির সাথে ঝুলছে। চমৎকার! যেখানে বাঘের ভয় রাত তো সেখানেই হতে হবে। আজ আর বাসায় যাওয়া লাগবেনা। ভালো হতো যদি একটা তাবু গেড়ে এইখানেই থেকে যেতে পারতো। আশে পাশে কোন মুচি টুচিও দেখা যায়না। এখন খালি পায়ে বাসায় যাবে কিভাবে।

"ওরকম কাগজের মতো স্যন্ডেল পড়ে এতোটা পথ এইভাবে দৌড়ালে এরকম অবস্থাই তো হবে। কিসব যে ফ্যশন আসে আর আপানারা পাগলের মতো সেগুলো কিনতে ছোটেন। আরে ম্যাডাম, কেনার আগে না হোক। পরে তো চোখ খুলে দ্যাখেন। এমন দুর্বল স্বাস্থ্যের জুতার উপর অত্যাচার করা কি কোন মানবিক ব্যপার হল"।

অরু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। সেই লম্বা করে শুকনামতো লোকটা। কথা নাই বার্তা নাই কি রকম কাঠঠোকরার মতো কট কট করে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। যেন কতদিনের পরিচয়। অরু চারপাশে একবার তাকিয়ে নেয়। রাস্তায় ভালোই লোক আছে। উল্টো পাল্টা কিছু করার সাহস হবেনা। লম্বা একটা দম নিয়ে অরু মাথার ভেতর কথা সাজিয়ে নিতে থাকে। অনেক হয়েছে। এই লোককে এক হাত দেখে নেয়া দরকার। অরু যখন আক্রমনের জন্য প্রায় রেডি ঠিক তখনই তার সমস্ত প্রস্তুতি ভণ্ডুল করে দিয়ে লোকটা ছোট একটা পার্স বাড়িয়ে দিলো, বলল, "রাস্তার উপরে পড়ে ছিলো"।

অরু কিছুক্ষণ চোখ পিট পিট করে তাকায়। পাশের দোকানগুলার বাহারি আলোতে বুঝতে অসুবিধে হয়না লোকটার হাতে ধরা পার্সটা তারই। তারপরও অরু পুরো ব্যাগের একদিক সেদিক একবার তল্লাশি চালিয়ে নেয়। তার বিরক্তি বাড়তে থাকে। হচ্ছে কি আজকে! লোকটা নিশ্চয়ই আশা করে আছে, অরু তাকে জিজ্ঞেস করবে পার্সটা কোথায় পেয়েছেন। কিভাবে পেয়েছেন। আপনি কতইনা ভালো মানুষ, সেটা ফেরতও দিতে এসেছেন। তারপর ধন্যবাদের জোয়ার বইয়ে দেবে। না অরু সেটা হতে দেবেনা। সে হঠাৎ লোকটার হাত থেকে পার্সটা এক ঝটকায় নিয়ে নেয়। তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করে, "ফটকাবাজি করেন? প্রথমে পকেটমারি করে পার্স নিয়ে ভাগেন। তারপর আবার সেটা ফেরত দিয়ে ভালো মানুষ সাজতে আসেন। এতোই যখন উপকার করার স্বাদ ছিল আরো আগে কেন ডেকে বললেন না। এতোটা পথ এভাবে পিছু পিছু আসার মানে কি! সেদিনও দেখেছি আমার পিছন পিছন বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন। কাহিনীটা কি আপনার"।

"সেদিনও একটা কাহিনী ছিলো, বলেই লোকটা তার ব্যাগ থেকে একটা ধূসর রঙের শাল বের করলো। এটা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনার হাঁটার গতির সাথে পেরে উঠিনি"।

আবারো অবাক হওয়ার পালা। হ্যাঁ শালটা অরুর, এ ব্যপারেও কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এতদিন ধরে শালটা ঘরে নেই অথচ তার খবরও হলনা। অদ্ভুত তো! কিন্তু কাহিনী এখানেই শেষ হলনা, লোকটা তার ব্যাগ থেকে তখনো একের পর এক অরুর জিনিসপত্র বের করে যাচ্ছে।

"আর এই যে আপনার লাঞ্চ বক্স, দুইটা, আপনার ডায়েরী, আর হ্যাঁ আপানার ছাতা, আপনি শীতকালে ছাতা নিয়ে ঠিক কি করলেন বুঝিনি। সম্ভবত হারানোর জন্যই নিয়ে গিয়েছিলেন"। লোকটার মুচকি হাসি আরেকটু প্রশস্ত হল। "এই যে এটা আপনার রুমাল। আসলে ব্যপারটা হচ্ছে কি! আপনার অফিস যে বিল্ডিং আমার অফিস ঠিক তার উল্টো বিল্ডিংটায়। আপনি সাধারণত যে বাসে যান আমিও ঠিক ঐ একই বাসে আসি। আর আপনি যে স্টপিজে নামেন আমি তার পরের স্টপেজটায়ই নামি। কিন্তু গত বেশ কয়েকদিন ধরে আপনার সম্পত্তি আপনাকে ফেরত দেয়ার জন্য আমাকেও এই স্টপেজেই নামতে হচ্ছে"। কথাটা বলার পর লোকটা লাজুক টাইপের একটা হাসি দিলো। এই কথাটায় এতো লজ্জা পাওয়ার কি হল অরু বুঝে পেলনা। "আপনি সম্ভবত খুব ভাবুক টাইপের মানুষ। ভাবুক টাইপের মানুষেরা একটু ভুলোমনের হয়ে থাকে। এটা অবশ্য তেমন খারাপ কিছু নয়। ভাবুক মানুষদের মাথায় সবসময় উচ্চমার্গীয় চিন্তা ভাবনা চলতে থাকে। এই সব ছোটখাটো ছাতা ফাটার খবর কি তারা রাখে। জানেন তো নিউটন একবার কি করেছিলো। সে তার ফিয়ান্সের হাতকে চুরুট মনে করে............"লোকটা অরুর অগ্নিমুর্তির সামনে কথাটা আর শেষ করতে পারলোনা। কেবল একটা বোকা হাসি দিয়ে থেমে গেলো। কিন্তু চুপ করে থাকাটা সম্ভবত চরমভাবে লোকটার স্বভাববিরুদ্ধ। সে সেকেন্ড খানেকের মধ্যেই আবার শুরু করলো, "আমি মনে হয় একটু বেশী কথা বলি। সবাই তাই বলে। আসলে হয়েছিলো কি আমার একটু হাঁপানির টানের মতো আছে। বেশী তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারিনা। আপনি তো অনেক দ্রুত হাঁটেন। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন উটপাখি। জানেন তো উটপাখি অনেক দ্রুত দৌড়ায় ঘন্টায় প্রায়............আচ্ছা আমি মনে হয় আবারো একটু বেশী বলে ফেলছি। আপনি অবশ্য অনেক কম কথা বলেন। ভাবুক মানুষেরা অবশ্য কথা কমই বলে। আজ কপাল ভালো আপনার জুতা ছিড়েছে। নইলে তো আজকেও আপনাকে ধরতে পারতাম না। তবে তাই বলে ভাববেনা না আপনার জুতা এইভাবে মাঝরাস্তায় ছিড়ে যাওয়ায় আমি অনেক খুশি। জুতা ছেড়ার ব্যপারটা কিন্তু বেশ বিব্রতকর। একদিন হয়েছিলো কি বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলাম, একটু তাড়াও ছিলো। বলা নাই কওয়া নাই ঠিক এইভাবে ফট করে রাস্তায় জুতাটা গেলো। আমি তো............"।

"আর কিছু"?

"জ্বি"?

"মানে আমার আর কিছু আছে আপনার কাছে"?

"আ! না মনে হয়না আছে। থাকলে আমি........."

অরু আর কথা না বাড়িয়ে গট গট করে খালি পায়েই হাঁটা শুরু করে। সে পেছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারে লোকটা নিশ্চয়ই খুব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অন্তত একটা ধন্যবাদ দেয়া তো ভদ্রতা পেরিয়ে রীতিমতো কর্তব্যের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু এই লোকটাকে ধন্যবাদ বলতে ইচ্ছা করছেনা। পার্সটায় খুব মোটা অঙ্কের টাকাই ছিলো। টাকাটা ফেরত না পেলে ওর মতো হাভাতে মানুষদের জন্য পেট চালানোই কষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু তারপরেও বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। খুব কঠিন হতে ইচ্ছে করছে। খুব কঠোর হতে ইচ্ছে করছে। তার নিজের জীবন যতটা কঠিন ঠিক ততটা।

"এক্সকিউজ মি! এক্সকিউজ মি"!

অরু ঝটকা মেরে পিছনে ঘুরে। লোকটা এবার দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। আবার কি!

"আমি একটু ভুল করেছিলাম। আপনার লাঞ্চ বক্স আসলে দুইটা না তিনটা ছিল। সাদা, কালো আর এইটা গোলাপী। শেষেরটার ভেতরে একটা রুটিও ছিল। হয়তো খেতেও ভুলে গিয়েছিলেন। ভাবুক মানুষ তো। সমস্যা নেই......আমি আমি ধুয়ে দিয়েছি......আসলে হয়েছিলো কি........."

বোঝা যায় লোকটার আরো অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু প্রচন্ড হাঁপানির চোটে বলতে পারেনা। অরুর হঠাৎ করে কেন যেন লোকটার উপর খুব মায়া হয়। ইচ্ছে করে একটা রিকশা ডেকে লোকটা তুলে দিতে। কিন্তু সে কিছুই করবেনা। সে কারো জন্য কোন আবেগ দেখাবেনা। তার আবেগের সিন্দুকে জং ধরে গিয়েছে। সে ঝটকা মেরে লোকটার হাত থেকে টিফিন বক্সটা কেড়ে নেয়। তারপর প্রায় ছুটতে থাকে। সে আর পিছনে তাকাবেনা। তার চাপা পড়ে থাকা অর্থহীন আবেগের সাথে এই লোকের স্মৃতিটাও পেছনের রাস্তার শোরগোলে কোথাও হারিয়ে যাক।

অরুর মেজাজ এখন ভয়ানক খারাপ। স্মরনকালের সবচেয়ে আজাইরা কারনে আজ তার বাসায় আসতে দেরী হল। আর ঢোকার মুখেই বড়ামামার সম্ভাষণগুলো তো এখনো কানের মাঝে ঝাঁ ঝাঁ করছে। অরু সিংকের উপর রাখা বাসি থালা বাসন গুলো শব্দ করে পরিস্কার করতে থাকে। তার রাগী হাতের নিচে চাপা পড়ে কাপ পিরিচগুলো ঠন ঠন করে উঠে। অরু ভ্রূক্ষেপও করেনা। কি হবে,বড়জোর দু একটা কাপ পিরিচ ভাঙবে। মামীর খোটা শুনবে। মাস শেষে যখন আরেক সেট নতুন কাপ পিরিচ কিনে নিয়ে আসবে তখন আরো একবার কথা শুনবে। কারণ তার বাবা, মা সহ দুই ভাই বোনকে তাদের উপর বোঝার মতো চাপিয়ে দিয়ে ঠুস করে মরে গিয়েছেন। এমনকি মরার আগে তাদের অনুমতিও নেননি। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে কেউ কখনো মরে? অরু ধোয়া কাপ প্লেটগুলো প্রায় আছাড় মেরে সিংকের পাশে রাখে। সেই আছাড়ের তোড়ে নিচে পড়ে একটা কাপের সলিলে সমাধি হয়ে গেলো। অরু ভাঙা কাপটার দিকে তাকিয়ে ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসে। কাপটা বেঁচে গেলো। আর কখনো তাকে আগুন গরম চা মাথায় নিয়ে বসে থাকতে হবেনা। দিনে দুইবার ঘষামাজাও সহ্য করতে হবেনা। ছোট্ট কাপটা পুরো সেটটা নষ্ট করে দিয়ে নিজেকে চিরমুক্ত করে ফেললো। অরুও যদি এই কাপটার মতো সব দায় দায়িত্বের ভারমুক্ত হয়ে হঠাৎ দলছুট হয়ে কোথাও চলে যেতে পারতো। চিন্তাটা মাথায় আসতেই অরু নিজের মনেই হাসে। সেতো আর সিরামিকের কোন কাপ না, যে দলবলের মায়া না করেই বিদেয় হয়ে যাবে। সে একটা জ্বলজ্ব্যান্ত মানুষ। অনেকগুলো বাঁধনে বাঁধা। অনেক গুলো দায়িত্বের সুতোয় জড়ানো। মাঝে মাঝে তো এমনও মনে হয় তার চারপাশে সবকিছু আছে। শুধু সে নেই। সে যেমন অরু হতে চেয়েছিল, সেই অরুটা কোথাও লুকিয়ে বসে আসে। থাকুক, সে লুকানোই থাকুক। সব সময় যে নিজের জন্যই বাঁচতে হবে এমন কোন কথা আছে।

অরু এইবার তার আজকে হঠাৎ পাওয়া লাঞ্চ বক্সগুলো নিয়ে বসে। যেভাবেই হোক যেমনই হোক, হারানো জিনিস পাওয়া তো গিয়েছে। এগুলো দিয়ে যতদিন যায় ততদিনই লাভ। সেতো এগুলোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলো। আচ্ছা, লোকটাকে ধন্যবাদ না বলে আসাটা কি খুব বেশী খারাপ হয়ে গেলো? হলে হোক। আজকাল এইসব বিনয়ের কোন ভাত নেই। অরু বক্সগুলার ঢাকনা খুলে সিংকের পানিতে ভিজাতে থাকে। এতদিন কোথায় কিভাবে পড়ে ছিলো কে জানে। ভালো করে ধোয়া দরকার। গোলাপী রঙের লাঞ্চ বক্সটা বেশ শক্ত করে সাঁটানো। প্রথম দুইবারে সহজে খুললোনা। তৃতীয়বার যখন জোরে টান দিলো তখন একেবারে হ্যান্ডেলশুদ্ধু বের হয়ে এলো। অবারো হওয়ার পালা। বক্সটার উপরের ঢাকনাটা সম্ভবত আঁঠা দিয়ে লাগানো ছিলো। ভেতরে ছোট্ট একটা চিরকুট আর একটা ভিজিটিং কার্ড। অরু প্রথমে ভিজিটিং কার্ডটা খুলে দেখলো। বেশ নামকরা কোম্পানীর একজন এমপ্লয়ির কার্ড। অরু ভেজা হাতেই চিরকুটটা খুলে পড়া শুরু করে,

কি বলে সম্বোধন করবো জানিনা, তাই সরাসরি শুরু করে দিলাম।

অনেকদিন ধরেই আপনাকে দেখছিলাম। খুব ভাবুক মানুষ আপনি। আবার অনেক ভুলোমনাও। বাসে উঠে টিকিট হারিয়ে ফেলেন। আপনার জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলেন। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো আপনি নিজেকেই অন্য কোন জায়গায় হারিয়ে বসে আছেন। অনেক দিন ধরেই আপনার জিনিসগুলো আপনাকে দিতে চেষ্টা করছিলাম। কখনো পারবো কিনা জানিনা আপনার যেমন উটপাখির মতো গতি। । তবে কখনো যদি পারিও তবে আমি একদম ১০০% নিশ্চিত যে আপনি আমাকে ধন্যবাদ বলতেও ভুলে যাবেন। আমি অবশ্য একদম ই অবাক হবোনা। বরং আমার খুব মজা লাগবে। আপনার হারিয়ে ফেলা জিনিসগুলো খুঁজে পেতে আমার অনেক ভালো লাগে। যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আপনার হারিয়ে যাওয়া স্বত্তাটাকে খুঁজে বের করে দেয়ার চেষ্টা করতাম।

আপনার হাতে এই চিরকুট যাওয়ার মানে হল, কোন না কোনভাবে আমি আপনাকে আপনার জিনিসগুলো ঠিকমতো দিতে পেরেছি এবং আমাকে সঠিক প্রমানিত করে আপনি আমাকে ধন্যবাদ বলতে ভুলে গিয়েছেন। কখনো যদি মনে হয়, আমাকে একটু ধীরে সুস্থে ভেবে চিন্তে ধন্যবাদ জানানোর দরকার তাহলে একটা মেসেজ দিবেন প্লিজ। ফোন দেয়ার দরকার নাই। আমি আবার কথা একটু বেশী বলি কিনা। শুধু শুধু আপনার বিল উঠাতে চাচ্ছিনা। খুব খুব আশা করছি ামাকে এসএমএস করার আগ পর্যন্ত আপনি ভুল করে আমার নাম্বারটা হারিয়ে ফেলবেন না।

বি দ্রঃ গোলাপী রঙের লাঞ্চ বক্সটায় আঁঠা লাগানোর জন্য আশা করি কিছু মনে করবেন না। কারণ ঐটা আমার লাঞ্চ বক্স। আপনার লাঞ্চ বক্স আসলে দুটো ছিলো। জানতাম আপনার কয়টা লাঞ্চ বক্স হারিয়েছে সেইটাও আপনার মনে থাকবেনা। আপনাকে সরাসরি ফোন নাম্বার দিতে চাইলে হয়তো নিতেন না। তাই একটু ব্যতিক্রম একটা উপায় বের করতে হল।

ইতি.....


অরু নামটা না দেখেই চিঠিটা ভাঁজ করে ফেলে। এই লোক, সে যেই হোক না কেন তার প্রত্যেকটা কথাই ঠিক। সে নিজেকে হারিয়ে বসে আছে। তবে সেটা অনিচ্ছাকৃত নয়, ভীষনরকম ইচ্ছাকৃত। এই পৃথিবীটা হচ্ছে অনেক গুলো চাওয়া আর অল্প একটু পাওয়ার মধ্যে খুব নিষ্ঠুর একটা বিনিময় ব্যবস্থা। নিষ্ঠুরতার ভাগটুকু না হয় কেবল তার ঝুলিতেই গেলো। অরু চিরকুট আর ভিজিটিং কার্ডটা দুমড়ে মুচড়ে বাহিরে ফেলে দেয়। সে কেবল একজন ভুলোমনা মানুষই নয়, একজন ভুল মানবীও বটে। ভুল সময়ে ভুল আবেগেকে প্রশ্রয় দিয়ে সেই ভুলের বিস্তার না ঘটানোই শ্রেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৪০
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×