মুখ খুললেন সাকা, ফাঁস করলেন ষড়যন্ত্রের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য
ফাঁসছেন বিএনপি-জামাতের আরো ১২ নেতা
ভোরের কাগজ // ২২ ডিসেম্বর ২০১০
কাগজ প্রতিবেদক : গোয়েন্দা হাজতে থাকা বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রিমান্ডে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। জামাত নেতা রফিকুল ইসলাম খানের কাছ থেকেও বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আরো ১০ থেকে ১২ জন বিএনপি ও জামাত নেতা গ্রেপ্তার হতে পারেন। গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে সাকা চৌধুরীর ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে। সাকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নতুন করে রিমান্ডের আবেদন নাও করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবে নাশকতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সাকা চৌধুরী। এজন্য তহবিল সংগ্রহ করে তা সরবরাহ করেছিলেন কর্মীদের কাছে। ষড়যন্ত্রের এ নীলনকশা বাস্তবায়নে সাকা চৌধুরীর সঙ্গে তৎপর ছিলেন বিএনপির ৭ জন ও জামাতের ৫ নেতা। গতকাল মঙ্গলবার গোয়েন্দাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে ওই ১২ নেতার নাম ফাঁস করে দিয়েছেন সাকা চৌধুরী।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ কার্যকর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন-১৯৭৩ এর ৯(৪) ধারায় ট্রাইব্যুনাল এর আগে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ওয়ারেন্ট পৌঁছানোর পর গত সোমবার থেকে তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের
সঙ্গে আলাপকালে ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম জানান, মগবাজারে গাড়ি পোড়ানোর আগে একটি গোপন বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে ১০-১২ জন রাজনীতিক ছিলেন। তিনি আরো জানান, সাকা চৌধুরীর কাছ থেকে তারা আরো তথ্য পাওয়ার আশা করছেন। সব তথ্য পাওয়া না গেলে সাকাকে আবারো রিমান্ডে আনা হতে পারে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি সাকাকে জানানো হয়নি। তিনি জানান, সাকা ডিবি রিমান্ডে সুস্থ আছেন এবং তার ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে ১২ নেতার নাম বলেছেন তার মধ্যে ৩ জন এর আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত এবং বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে এ অপকৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ডিসি ডিবি।
সূত্র মতে, রিমান্ডের প্রথম দিকে মুখ না খুললেও মঙ্গলবার তিনি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। ফাঁস করে দিয়েছেন নানা ষড়যন্ত্রের কথা। বিশেষ করে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির হাইকমান্ডের ভূমিকা নিয়ে তার ক্ষোভের কথা গোয়েন্দা পুলিশকেও জানিয়েছেন। সাকা চৌধুরী গোয়েন্দাদের বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপিকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তিনি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ইস্যুতে হরতালসহ আন্দোলনে নাশকতার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা কয়েকজন চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে বিএনপির ৭ জন ও জামাতের ৫ নেতা জড়িত ছিলেন। এজন্য তারা গোপন বৈঠক করে তহবিলও সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের নির্দেশেই মগবজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতা করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই ১২ জনের কারো নামই প্রকাশ করেনি গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, গত বুধবার ভোররাতে বনানীর একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন সাকা চৌধুরী। এ সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কলারও চেপে ধরেন তিনি। এ সময় ক্ষুব্ধ ওই কর্মকর্তা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাক লক্ষ্য করে একটি ঘুষি মারেন। আর এতেই আহত হন সাকা চৌধুরী। এরপর তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর বাইরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নির্যাতন করা হয়নি বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জামাত নেতা রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদেও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।
তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নতুন করে রিমান্ডে নেয়া নাও হতে পারে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে তাকে পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে।
এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ওয়ারেন্ট পৌঁছানোর পর সোমবার রাত থেকে তাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আটক দেখানো হয়েছে। রোববার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে ফ্যাক্স বার্তা, ম্যাসেঞ্জার ও ডাকযোগে তা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কার্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়। ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অন্য মামলায় ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওয়ারেন্ট কার্যকর করা হয়েছে মাত্র। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক রাখার বিষয়টি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়। তবে ওই অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের এখতিয়ার গোয়েন্দা পুলিশের নেই।