রোজা গেল অনাবিল আনন্দের ঈদ এল। আমি যাদের নিয়ে এই পোস্টটি লিখছি তাদের ঘরে ঈদ আসেনি। ঈদের আনন্দ ওদের জন্য নয়। আমরা যখন ঈদ আনন্দে মেতে আছি ওরা তখন বিপন্ন ভাগ্যের কাছে একটা পরিহাসের পাত্র হয়ে এক অমোঘ অসহায়ত্বের কথা বিধাতাকে জানাচ্ছে। বিধাতা শুনছেন কিনা ওরা জানেনা।
আমি যার কথা বলছি ওর নাম মনিরা, বয়স ২৫। ওদের ৭ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। গত দু'বছর আগে ওদের জমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করার সাথে সাথে মারা যায়। এরপর থেকে কিছু মেয়েলি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। আমি ওদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখছি। গলায় টিউমার হয়েছে। হত দরিদ্র স্বামীর পক্ষে যেমনভাবে সম্ভব হয়েছে চিকিৎসা করিয়েছে। সেই চিকিৎসায় ফলপ্রসু হয়নি। এরমধ্য দিয়ে ঘর ভাড়া কয়েক মাসের জমে গেছে। ধার দেনাও হয়ে গেছে। অসহায়ত্বের সমন্ত সীমানা পার করে ওরা এখন স্তব্ধ হয়ে গেছে। কি হবে এখন। কারো কাছ থেকে আমার নাম্বার সংগ্রহ করে আমাকে ফোন করে ওদের এই পরিনতির কথা আমায় জানিয়েছে। ওরা দুজনই অনেক কেঁদেছে আমার কাছে। মেয়েটি বাঁচবে কিনা এই ভাবনায় পেয়ে বসেছে ওদের। ওদের এই অভাবনীয় অসহায়ত্ব আমাকে গভীরভাবে দুখী করেছে। নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছে। ওখান থেকে টেস্ট দিয়েছে সেই টেস্ট গুলো আমি করিয়েছি। আমার সাধ্য মতো আমি ওদের জন্য চেষ্টা করেছি। পপুলার, মডার্ণ এবং সিটি ডায়গনিস্টক সেন্টারে প্রায়১০/১২ টা টেস্ট হয়েছে। টেস্ট থেকে জানা গেছে ওর গলায় টিউমার হয়েছে এবং এটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। তা না হলে এটা ক্যানসারের দিকে কনভার্ট হতে পারে। ভিক্টোরিয়া থেকে সাজেস্ট করেছে জলদি করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নিতে।
গরীবের কোন জলদি বা ইমার্জেন্সী নেই। থাকতে পারেনা। তিনদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউটডোরে গিয়েছে তিনদিন তিন ডাক্তার দেখেছে এবং প্রত্যেকেই নতুন নতুন টেস্ট দিচ্ছে বলছে এই টেস্ট করিয়ে আনুন পরে ভর্তি করা হবে। ১৫ তম রোজার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বলা হল এখনতো ভর্তি বন্ধ ঈদ চলে এসেছে! বলেছে ঈদের পর দিনই নিয়ে আসবেন ভর্তি করিয়ে দেব।
এই হতদরিদ্র পরিবার বুকের আর্তনাদ চেপে আর বলার সাহস পায়নি যে ডাক্তার বাবু আজকেই ভর্তি করিয়ে নিন ও অনেক কষ্টে আছে। কোন অনুনয় বিনয়ে কাজ হয়নি। ওরা ফিরে গেছে। এখন গলা ফুলে গেছে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারেনা, চোখ বেড়িয়ে আসতে চায়। কিছুই খেতে পারেনা, গলা দিয়ে নামেনা। পানির মতো তরল করে খাবার খেতে হয়। খাবার খেলে বমি হয়ে যায়। এই অবস্থাতেই ১৫দিন অপেক্ষা করে ঈদের পরদিন আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। আউটডোরের লম্বা লাইনের প্রতিক্ষা শেষে ডাক্তারের নাগাল পাওয়া গেল। নতুন ডাক্তার রোগী দেখলেন না। টেস্ট রিপোর্ট দেখে তিনি আশ্চর্য হলেন! বললেন, এটাতো অনেক বেড়ে গেছে! এটা না কমিয়ে অপারেশন করা যাবেনা। এই ওষুধগুলো নিবেন। ২০দিন পরে আসবেন তখন ভর্তি করিয়ে দেব। স্বামী বেচারা কেঁদে ফেলেছে ডাক্তারের কাছে। বারবার অনুরোধ করেছে কোন কাজ হয়নি। ডাক্তারকে ঘিরে থাকা দালালরা ওদের ঠেলে বের করে দিয়েছে। ভগ্ন মন ভগ্ন শরীর নিয়ে ওরা আবার ফিরে গেছে ঘরে। এই ২০দিনে কি জানি কি হয়!
২০দিন শেষ হলে যদি বেঁচে থাকে ওরা আবার যাবে। ভর্তি হতে পারবে কিনা জানা নেই। ১০দিন পার হয়ে গেছে, আরো ১০ দিনের দীর্ঘ প্রতিক্ষা বাকি। আবার কোন নতুন ডাক্তার কি বলবে তাও জানা নেই। ডাক্তার বাবুদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ আপনারা একটু সদয় হোন। ওরা আপনাদের দিকে চেয়ে আছে ওদের দারিদ্রতাকে একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ওদের প্রতি একটু সদয় হোন।
সুপ্রিয় ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ব্লগে কেউ কি আছেন এই গরীব পরিবারটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে সাহায্য করতে পারেন। একটু চেষ্টা করুন প্লিজ। পরিবারটিকে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা করেছি। গলার টিউমার অপারেশান করতে হবে। আমি তাদের কথা দিয়েছি আমার পক্ষে আর যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবো। আপনারাও এগিয়ে আসুন। কারো পক্ষে যদি সম্ভব হয়, যাদের একটু কথায় একটা ফোনে ভর্তির এই বিশাল পর্বটা যদি নিশ্চিত করা যায় তবে এই যাত্রা হয়তো ওরা বেঁচে যাবে। আমরা যারা সুস্থ্য আছি আসুন একবার ওদের পাশে দাঁড়াই। কেউ যদি পারেন চিকিৎসার জন্য ওদের ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।
মনিরা আক্তার
স্বামী- আব্দুল্লাহ আল মামুন মোবাইল- +8801885506859