somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবসার্ড গল্প

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথাও নিশ্চয় ভুল হচ্ছে আপনার, দেখেন তো সামনের বাস্কে আছে কি না?
আরে ভাই সব খানেই খুঁজলাম, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, আমি তো ভেবেছিলাম এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, এখানেও হানা দেবে এমনটা আশা করি নি।
ফখরুল সাহেবের ঝুলে পড়া চোয়াল দেখে ইস্কান্দার মৃধা এসে পাশে দাঁড়ান, নতুন এনেছিলেন না পুরোনো?
পুরোনো তবে আমার প্রিয় ছিলো, অনেক দিনের সঙ্গি ওটা আমার এখানে এভাবে চুরি যাবে কখনই ভাবি নি আমি।
সান্তনার কথা বলে কেউ কেউ ভীষন রকম চুঁ চুঁ শব্দও করলো, তবে অন্য সবার চেহারায় সেই অভিব্যাক্তি ছিলো তা নিতান্তই সিদ্ধান্তবাচক, এমন বেকুব হালায় নাইলে এমনটা হয় না, বেকুবের কামই ফান্দে পড়া, ওরে আরও 2ডা ডলা দিয়া গেলো না ক্যান, এমন অভিব্যাক্তির সামনে ফখরুল সাহেবের দুঃখও চুপসে যায়, তিনি ঝোলা মুখ নিয়ে ফিরে আসেন ঘরে।
তবে হারানো জুতার চেয়ে বেশী দুঃখ প্রাণে বাজে সেই জুতার সুখতলায় লুকিয়ে রাখা নকশার জন্য। অপাত্রে পড়লো কি হয় এটার চিন্তায় তার ভ্রু কুঁচকে যায়। ফখরুল সাহেব নকশাটা হাত ছাড়া করতে চান নি বলেই পুরানো জুতার সুখতলায় লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মসজিদে, সেখানেও চোরের উৎপাত। তবে চোর বেছে বেছে তার জুতাই চুরি করলো ক্যানো? অন্য সবার জুতা চুরি গেলো না, তাহলে কি ওরা এই নকশার কথা জেনে গেছে?
তার নকশা হাত ছাড়া হওয়ার খবর তৎক্ষনাত জানানোর কথা, তিনি খানিকটা সময় নিবেন ভাবলেন, হারিয়ে যখন গিয়েছে, কেউ তো ঘড়ি ধরে হিসাব করবে না কখন রিপোর্ট করেছেন, জোহরের ওয়াক্তকে আসরের ওয়াক্ত বললেও ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।
ইসকান্দার মৃধা লজ্জিত বোধ করছেন এই নিয়ে গত মাস থেকে প্রায় 40 জোড়া জুতা চুরি গেছে, তার বাবার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, তিনি অডিশন দিয়ে ইমাম বাছাই করেছেন, তাদের পারিবারিক মসজিদের সুনাম ধুলায় মিলিয়ে যাচ্ছে এই চোরের কারনে, তবে কি এইটা তোবারক মিঞার কাজ? বিশ্বাস নাই, শিংগাবাবার মাজারের পাশের মসজিদে লোক যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে নতুন ইমাম আসার পর, এই ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে নাকি মুসল্লিদের দিলে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়। মানে খাস রহমত আছে এই মসজিদের উপর। কিন্তু তোবারক মিঞার তাবিজের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে গেছে, ইসকান্দার মৃধা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এই চোরকে শায়েস্তা তিনি করবেনই করবেন।
ফখরূল সাহেব আসরের ওয়াক্তের খানিক আগে এসেছেন, এসে সামনে একটা কোনায় বসে আছে, আসলে বসে নেই তিনি গভীর ভাবে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছেন, ঐ যে সামনে থুতনিতে সামান্য দাড়ি, চোখের কোনে ধূর্ততা, ঐটাও হতে পারে, ওর চেহারায় একটা চোর চোর ভাব আছে, সরাসরি চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, তাকালেই দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।
কিংবা পিছনের চাপদাড়িওয়ালাও হতে পারে, যেভাবে গেটের সবার দিকে তাকাচ্ছে, ষন্ডা মতো লোক, তার উপরে এই বিকালে বিশাল জোব্বা পরে আছে, ওই জোব্বার নীচে সমস্ত জুতার দোকান নিয়ে যাওয়া যাবে, কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহও হবে না। কে জানে হয়তো এখনও ঐ বেটা মতলব ভাজতেছে কোনো, যা দিনকাল পড়ছে, এমন কি দেয়ালকেও বিশ্বাস করা যায় না।
তবে সন্দেহ গাঢ় হয় সামনের তালি দেওয়া শীর্ণ লোকটাকে দেখে, হাড়ে হাভাতে এই লোকের চুরির স্বাভাব থাকতে বাধ্য, তিনি ঠিক করলেন যদি এই ব্যাটাই চুরি করে থাকে তাহলে তার কাছে এই নকশার গুরুত্ব নেই। তাকে সামান্য কিছু উৎকোচ দিয়ে নকশাটা উদ্ধার করতে হবে।
কালো চশমা পড়া লোকটা সামনে এসে দাঁড়ালো অকারনে, পোশাক তেমন কোনো আলাদা বিশেষত্ব নেই তবে তার দাঁড়ানোর ভঙ্গির কাঠিন্য দেখেই অনুমান করা যায় এই লোক সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য, হয়তো গোপন গোয়েন্দা সংস্থার, তার সামনেই এসে দাঁড়ালো কেনো, তবে কি হেড কোয়াটারে এই খবর চলে গেছে। আঁতকে উঠেন তিনি, হৃদকম্পন দ্্রুত হয়, বুকটা ধরাস ধরাস করছে, মুখ ফ্যাকশে হয়ে গেছে তিনি বুঝতে পেরেছেন তবে এখন তার শাররীক ঘটনাগুলোর উপর তার নিয়ন্ত্রন নেই কোনো। তার মনে হলো তার খুব পেচ্ছাপ চেপেছে, যদি এই মুহূর্তেই সেটা খালাস করা না হয় তাহলে একটা কেলেংকারি হয়ে যাবে।
আচমকা বেজে উঠে সাথের মোবাইল, চমকে লাফিয়ে উঠেন ফখরুল সাহেব, অথচ সেই কালো চশমা মানুষটার বিন্দুমাত্র ভাবান্তর হয় না, কঠোর মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মোবাইলটা বন্ধ করে বুকে জমানো সাহসের অবশিষ্টাংশ দিয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি কালো চশমা কে, আপনি কি আমাকে খুঁজছেন? কালো চশমার চেহারাটা কুঞ্চিৎ হয়, হাতটা সামান্য উপরে উঠে, ফখরুল সাহেব অবশ্য চিন্তা করেন নকশাটার জন্য তাকে মসজিদে গুলি করবে না, কিংবা করতেও পারে, এই শালার আর্মিদের বিশ্বাস নাই, হয়তো হ্যান্ডকাফ বের করে তাকে বাঁধবে, কালো চশমার হাত উঠে চশমাটা সরিয়ে ফেলে, সেখানে চোখ পড়ায় ফখরূল সাহেব চমকে উঠে আবারও ধীরে ধীরে শান্ত হন, এক জোড়া পাথরের চোখ তাকে আমন্ত্রন জানায়।
আসরের নামাজের পর তিনি সেই শীর্নাকায় তালি দেওয়া কুর্তা পরা মানুষটাকে গিয়ে বলেন ভাই আপনি কি আমার সাথে একটু আমার বাসায় যাবেন?
লোকটার আশ্চর্য চোখ দেখে তিনি

( আসলে অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খোঁজাটা সম্মিলিত বোধ আর সেটাকে খুঁজে পেয়েছি বলে দাবি করা হচ্ছে কমুনিজম)
( মানুষের কথাই মানুষের দাঁতকে ভেতরে ঢুকে যেতে বাধা দেয়, কথার চাপেই দাঁত সোজা থাকে, তবে বেশী বাচালদের কথার চাপে দাঁত বাহিরের দিকে বেঁকে যায় ওদের এযট্রোভার্ট বলে, যারা কথা কম বলে তাদের দাঁত এ জন্য ভেতর দিকে বাঁকা।)
(আমি মুতবো,কথাটা শোনা মাত্রই দিব্যজ্ঞানী কড়া চোখে তাকায় আজমল মিয়ার দিকে, সরি একটু পেশাব করবো,
এত করে বলছি পানিতে নামার আগে ঠিক মতো হালকা হয়ে আসবা, এই খানে পানির 80 ফিট নীচে এসে আমি পেচ্ছাব করবো এইটা ক্যামোন আব্দার, অজু নষ্ট হয়ে যাবে আমার)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১০:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×