কোথাও নিশ্চয় ভুল হচ্ছে আপনার, দেখেন তো সামনের বাস্কে আছে কি না?
আরে ভাই সব খানেই খুঁজলাম, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, আমি তো ভেবেছিলাম এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, এখানেও হানা দেবে এমনটা আশা করি নি।
ফখরুল সাহেবের ঝুলে পড়া চোয়াল দেখে ইস্কান্দার মৃধা এসে পাশে দাঁড়ান, নতুন এনেছিলেন না পুরোনো?
পুরোনো তবে আমার প্রিয় ছিলো, অনেক দিনের সঙ্গি ওটা আমার এখানে এভাবে চুরি যাবে কখনই ভাবি নি আমি।
সান্তনার কথা বলে কেউ কেউ ভীষন রকম চুঁ চুঁ শব্দও করলো, তবে অন্য সবার চেহারায় সেই অভিব্যাক্তি ছিলো তা নিতান্তই সিদ্ধান্তবাচক, এমন বেকুব হালায় নাইলে এমনটা হয় না, বেকুবের কামই ফান্দে পড়া, ওরে আরও 2ডা ডলা দিয়া গেলো না ক্যান, এমন অভিব্যাক্তির সামনে ফখরুল সাহেবের দুঃখও চুপসে যায়, তিনি ঝোলা মুখ নিয়ে ফিরে আসেন ঘরে।
তবে হারানো জুতার চেয়ে বেশী দুঃখ প্রাণে বাজে সেই জুতার সুখতলায় লুকিয়ে রাখা নকশার জন্য। অপাত্রে পড়লো কি হয় এটার চিন্তায় তার ভ্রু কুঁচকে যায়। ফখরুল সাহেব নকশাটা হাত ছাড়া করতে চান নি বলেই পুরানো জুতার সুখতলায় লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মসজিদে, সেখানেও চোরের উৎপাত। তবে চোর বেছে বেছে তার জুতাই চুরি করলো ক্যানো? অন্য সবার জুতা চুরি গেলো না, তাহলে কি ওরা এই নকশার কথা জেনে গেছে?
তার নকশা হাত ছাড়া হওয়ার খবর তৎক্ষনাত জানানোর কথা, তিনি খানিকটা সময় নিবেন ভাবলেন, হারিয়ে যখন গিয়েছে, কেউ তো ঘড়ি ধরে হিসাব করবে না কখন রিপোর্ট করেছেন, জোহরের ওয়াক্তকে আসরের ওয়াক্ত বললেও ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।
ইসকান্দার মৃধা লজ্জিত বোধ করছেন এই নিয়ে গত মাস থেকে প্রায় 40 জোড়া জুতা চুরি গেছে, তার বাবার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, তিনি অডিশন দিয়ে ইমাম বাছাই করেছেন, তাদের পারিবারিক মসজিদের সুনাম ধুলায় মিলিয়ে যাচ্ছে এই চোরের কারনে, তবে কি এইটা তোবারক মিঞার কাজ? বিশ্বাস নাই, শিংগাবাবার মাজারের পাশের মসজিদে লোক যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে নতুন ইমাম আসার পর, এই ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে নাকি মুসল্লিদের দিলে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়। মানে খাস রহমত আছে এই মসজিদের উপর। কিন্তু তোবারক মিঞার তাবিজের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে গেছে, ইসকান্দার মৃধা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এই চোরকে শায়েস্তা তিনি করবেনই করবেন।
ফখরূল সাহেব আসরের ওয়াক্তের খানিক আগে এসেছেন, এসে সামনে একটা কোনায় বসে আছে, আসলে বসে নেই তিনি গভীর ভাবে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছেন, ঐ যে সামনে থুতনিতে সামান্য দাড়ি, চোখের কোনে ধূর্ততা, ঐটাও হতে পারে, ওর চেহারায় একটা চোর চোর ভাব আছে, সরাসরি চোখের দিকে তাকাচ্ছে না, তাকালেই দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে।
কিংবা পিছনের চাপদাড়িওয়ালাও হতে পারে, যেভাবে গেটের সবার দিকে তাকাচ্ছে, ষন্ডা মতো লোক, তার উপরে এই বিকালে বিশাল জোব্বা পরে আছে, ওই জোব্বার নীচে সমস্ত জুতার দোকান নিয়ে যাওয়া যাবে, কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহও হবে না। কে জানে হয়তো এখনও ঐ বেটা মতলব ভাজতেছে কোনো, যা দিনকাল পড়ছে, এমন কি দেয়ালকেও বিশ্বাস করা যায় না।
তবে সন্দেহ গাঢ় হয় সামনের তালি দেওয়া শীর্ণ লোকটাকে দেখে, হাড়ে হাভাতে এই লোকের চুরির স্বাভাব থাকতে বাধ্য, তিনি ঠিক করলেন যদি এই ব্যাটাই চুরি করে থাকে তাহলে তার কাছে এই নকশার গুরুত্ব নেই। তাকে সামান্য কিছু উৎকোচ দিয়ে নকশাটা উদ্ধার করতে হবে।
কালো চশমা পড়া লোকটা সামনে এসে দাঁড়ালো অকারনে, পোশাক তেমন কোনো আলাদা বিশেষত্ব নেই তবে তার দাঁড়ানোর ভঙ্গির কাঠিন্য দেখেই অনুমান করা যায় এই লোক সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য, হয়তো গোপন গোয়েন্দা সংস্থার, তার সামনেই এসে দাঁড়ালো কেনো, তবে কি হেড কোয়াটারে এই খবর চলে গেছে। আঁতকে উঠেন তিনি, হৃদকম্পন দ্্রুত হয়, বুকটা ধরাস ধরাস করছে, মুখ ফ্যাকশে হয়ে গেছে তিনি বুঝতে পেরেছেন তবে এখন তার শাররীক ঘটনাগুলোর উপর তার নিয়ন্ত্রন নেই কোনো। তার মনে হলো তার খুব পেচ্ছাপ চেপেছে, যদি এই মুহূর্তেই সেটা খালাস করা না হয় তাহলে একটা কেলেংকারি হয়ে যাবে।
আচমকা বেজে উঠে সাথের মোবাইল, চমকে লাফিয়ে উঠেন ফখরুল সাহেব, অথচ সেই কালো চশমা মানুষটার বিন্দুমাত্র ভাবান্তর হয় না, কঠোর মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মোবাইলটা বন্ধ করে বুকে জমানো সাহসের অবশিষ্টাংশ দিয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি কালো চশমা কে, আপনি কি আমাকে খুঁজছেন? কালো চশমার চেহারাটা কুঞ্চিৎ হয়, হাতটা সামান্য উপরে উঠে, ফখরুল সাহেব অবশ্য চিন্তা করেন নকশাটার জন্য তাকে মসজিদে গুলি করবে না, কিংবা করতেও পারে, এই শালার আর্মিদের বিশ্বাস নাই, হয়তো হ্যান্ডকাফ বের করে তাকে বাঁধবে, কালো চশমার হাত উঠে চশমাটা সরিয়ে ফেলে, সেখানে চোখ পড়ায় ফখরূল সাহেব চমকে উঠে আবারও ধীরে ধীরে শান্ত হন, এক জোড়া পাথরের চোখ তাকে আমন্ত্রন জানায়।
আসরের নামাজের পর তিনি সেই শীর্নাকায় তালি দেওয়া কুর্তা পরা মানুষটাকে গিয়ে বলেন ভাই আপনি কি আমার সাথে একটু আমার বাসায় যাবেন?
লোকটার আশ্চর্য চোখ দেখে তিনি
( আসলে অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খোঁজাটা সম্মিলিত বোধ আর সেটাকে খুঁজে পেয়েছি বলে দাবি করা হচ্ছে কমুনিজম)
( মানুষের কথাই মানুষের দাঁতকে ভেতরে ঢুকে যেতে বাধা দেয়, কথার চাপেই দাঁত সোজা থাকে, তবে বেশী বাচালদের কথার চাপে দাঁত বাহিরের দিকে বেঁকে যায় ওদের এযট্রোভার্ট বলে, যারা কথা কম বলে তাদের দাঁত এ জন্য ভেতর দিকে বাঁকা।)
(আমি মুতবো,কথাটা শোনা মাত্রই দিব্যজ্ঞানী কড়া চোখে তাকায় আজমল মিয়ার দিকে, সরি একটু পেশাব করবো,
এত করে বলছি পানিতে নামার আগে ঠিক মতো হালকা হয়ে আসবা, এই খানে পানির 80 ফিট নীচে এসে আমি পেচ্ছাব করবো এইটা ক্যামোন আব্দার, অজু নষ্ট হয়ে যাবে আমার)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১০:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




