somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ বলেছে যাব যাব

২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একসময় মন খারাপ হলে 'মেঘ বলছে যাব যাব' বইটা নিয়ে বসতাম এবং পুরোটা শেষ করে তবে উঠতাম। বইটা শেষ করে মনে হতো এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট নিয়ে কেউ একজন আছে, ঘুরছে, ফিরছে। নৌকা ভাড়া করে বুড়িগঙ্গা নদীতে চলে যাচ্ছে। হাসানের কষ্টের কাছে সব তুচ্ছ মনে হতো। এই বইটা আমি হারিয়ে ফেলেছি। হয়তো আমার কোন বন্ধু পড়ার জন্যে নিয়ে গেছে, মনে করে আর ফেরত দিয়ে যায় নি। এখন আর মন খারাপ হলে এই অসম্ভব প্রিয় বইটি নিয়ে বসা হয় না।

গতকাল স্যারের মৃত্যু সংবাদ শুনে কেমন যেন দিশেহারা বোধ হচ্ছিল। ঠিক দুঃখ বা কষ্ট নয়, একটা শুন্যতা অনুভব করছিলাম নিজের ভেতর। মনে পড়ে স্কুল কলেজ জীবনের কত অজস্র সময় কেটেছে স্যারের বইয়ের সাথে। রাত জেগে জেগে বই পড়ার সেইসব স্মৃতিগুলি ঘুরে ফিরে এসে মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছিল বার বার। ছুটির দিন থাকায় পুরোটা দিন ঘরের ভেতর নিজেকে আটকে রাখলাম। অনর্থক শুয়ে থাকা অথবা খানিকক্ষণ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানো। দূরের দালানে কাকের কর্কশ সুরে স্তব্ধ দুপুরের নিঃস্তব্দতা। কী নির্জন সেই মন খারাপের দুপুর। রাস্তাঘাট, বন্ধ দোকান আর সারি সারি সাদা বাড়িগুলোর উপর দিয়ে আষাঢ়ের মেঘ ভেসে যায়। ঘন কুয়াশার মতো মেঘ ভেসে ভেসে এসে আবার দূরে কোথাও চলে যায়।


প্রথম স্যারের কোন বইটি পড়েছিলাম আজ আর তা পষ্ট মনে নেই। কিন্তু স্যারের অনেক লেখাই আজীবন স্মৃতিময় থেকে যাবে যা একসময় মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। আগেই বলেছি মন খারাপ হলেই আমি মেঘ বলেছে যাব যাব বইটি নিয়ে বসতাম। কোন কারন ছাড়াই এটি আমার অনেক অনেক প্রিয় একটি বই। স্যারের অসংখ্য লেখার ভেতর আমার খুব প্রিয়
আরেকটি বইয়ের নাম ফেরা। একদমই ছোট পরিসরের এই বইটি স্যারের অনন্য সৃষ্টি। মনে পড়ে নন্দিত নরকের কথা। আনিস, রাবেয়া, রানুর কথা। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন আর আনন্দ- বেদনার কাব্য। মনে পড়ে 'শঙ্খনীল কারাগার' আর 'এ্যপিটাফ' এর সেই হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে দেয়া চিঠিগুলোর কথা। এক কঠিন রোগে আক্রান্ত ছোট্ট মেয়ের তার মাকে লিখে যাওয়া চিঠি পড়ে কাঁদেনি এমন পাঠক পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এই এ্যপিটাফ বইটিতেই আমরা দেখেছি নিজের কন্যা সন্তানকে বাঁচাতে এক মায়ের সমস্ত সীমারেখা পেরিয়ে যেতে। মনে পড়ে 'সাজঘর' বইটির কথা। 'অপেক্ষা' বইটিতে এক স্ত্রীর হারিয়ে যাওয়া স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করে থাকা। 'দেবী', 'নিশিথীনি'র মতো রহস্যোপন্যাস বাংলা সাহিত্যে আর কে কবে লিখতে পেরেছেন! অথচ অনেকেই তাকে 'সস্তা' লেখক বলে সমালোচনা করে থাকেন। মিসির আলি, হিমুর মতো জনপ্রিয় চরিত্র সৃষ্টি। একইসাথে লজিক ও এ্যান্টিলজিক দিয়ে পাঠকদের মোহাবিষ্ট করে রাখা একমাত্র এই সস্তা লেখক হুমায়ূন আহমেদই পেরেছিলেন তাঁর সস্তা লেখার ( ! ) মাধ্যমে। এমনি কত শত বই তিনি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। এই ভান্ডার ফুরোবার নয়।

শুধু লেখক হিসেবেই নয়, নাট্যকার হিসেবেও স্যার ছিলেন সমান জনপ্রিয়। বাংলা নাটক তো তার হাত ধরেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এইসব দিন রাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, সবুজ ছায়া, নক্ষত্রের রাত এমনি সব জনপ্রিয় সিরিয়ালের জনক হুমায়ূন আহমেদ। বলা হয়ে থাকে তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। তাঁর তৈরী 'আগুনের পরশমনি' বাংলা সিনেমার জগতে কালজয়ী ক্লাসিক হয়েই থাকবে। তাঁর আরেক অনন্য সিনেমা 'শ্রাবন মেঘের দিন' ছবির জনপ্রিয় 'এক যে ছিল সোনার কন্যা' গানটি তাঁর নিজেরই রচনা!


টিভিতে দুপুরের সংবাদ পুনরায় শুনি। কেন যেন বিশ্বাস হতে চায় না। হিমু আর কখনো খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না। রুপাও আর কখনো রাত্রি নিঝুম হলে ছাদে এসে দাঁড়াবে না। প্রেম অপ্রেমের দোলাচলে আর কখনো তাদের দেখা যাবে না! মন খারাপ ভাবটা কেন যেন বাড়তেই থাকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। শুয়ে থাকি। একসময় সব মুছে গিয়ে একটুখানি ঘুম লেগে আসে। ঠিক কতটা সময় জানি না, ঘুম ভেঙ্গে যেতেই দেখি দিনের আলো মুছে গিয়ে ঘরে আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। আমার বিছানার অদূরেই চেয়ারে কেউ যেন বসে আছেন। আধো অন্ধকারে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। চোখ সয়ে আসতেই বুঝতে পারি তিনি আর কেউ নন। আমার হারিয়ে যাওয়া সেই প্রিয় বই 'মেঘ বলেছে যাব যাব' হাতে নিয়ে বসে আছেন স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ। স্মিত হাস্যে তিনি পরম মমতায় বইখানা আমার হাতে তুলে দেন। আমি কাঙ্গালের মতো গল্পের পাতা উল্টাতে থাকি। হাসান নামের এক দুঃখী যুবকের সাথে দুপুরের কড়া রোদে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে বেড়াই। নৌকা ভাড়া করে বুড়িগঙ্গায় চলে যাই। হাসানের কষ্টের কাছে নিজের দুঃখ যন্ত্রণা সব তুচ্ছ মনে হয়। আমার জানালার ধার ঘেঁষে চলে যায় মেঘের দল। মেঘ বলেছে যাবো যাবো। অথচ মেঘ কোথায় যায় কখনোই জানা হবে না!






''আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে।যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না।''- মেঘ বলেছে যাব যাব





সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৪৭
৩১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×